ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসা আপডেট ২০২৩ইং
ভ্রমণ প্রিয় বাঙালি যখন নিজ দেশটাকে দেখে দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে চায় তখন ভিনদেশ হিসেবে প্রথম নামটা আসে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বা ইন্ডিয়ার। এখনকার ডিজিটাল যুগে দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। ইন্ডিয়ার দর্শনীয় জায়গা দেখা ও এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ এখন ইন্ডিয়া যায়।
কিন্তু ইন্ডিয়া ভিনদেশ হওয়ায় সেখানে যখন তখন যাওয়া যাবে না।এজন্য দরকার পাসপোর্ট ও ভিসা। আবার পাসপোর্ট পেলেও ভিসা পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যা অনেকেই জানেন না বা জানলেও শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ভুল করতে পারেন। আবার ভিসা আবেদনের নিয়ম কানুনও অনেক সময় পরিবর্তিত হয়।তাই ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসা আপডেট ২০২৩ নিয়ে আজকে জানাব আপনাদের।
ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি লাগে?
ইন্ডিয়ায় ট্যুরিস্ট হিসেবে ভ্রমণ করতে যেতে হলে ট্যুরিস্ট ভিসা লাগবে। আর এই ভিসা পেতে হলে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র দরকার হয়।কারণ এসবের ভিত্তিতে একজন নাগরিকের পরিচয়ের সত্যতা প্রমাণিত হয়।নিচের দরকারি কাগজপত্রগুলো লাগবে:
পাসপোর্ট:
ইন্ডিয়ান ভিসা প্রসেসিং এর সর্বপ্রথম প্রয়োজনীয় জিনিস হলো ন্যূনতম ছয় মাসের মেয়াদসম্পন্ন আসল পাসপোর্ট এবং ভিসা স্ট্যাম্পের জন্য ন্যূনতম দুটি ফাঁকা পৃষ্ঠা।তবে এর সাথে আরও লাগতে পারে পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এবং ভিসার কপি।
ইন্ডিয়ার ভিসা আবেদনপত্র:
ভিসা আবেদনের অনলাইন ফর্মটি আবেদনকারীকে অবশ্যই পূরণ এবং স্বাক্ষর করে আনতে হবে।
পাসপোর্ট সাইজ ছবি:
দুই কপি সাম্প্রতিক তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। অবশ্যই সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড এবং বর্ডার ছাড়া হতে হবে।ছবির সাইজ: ২”×২”। স্টুডিওতে ছবি তোলার সময় ইন্ডিয়ান ভিসার জন্য ছবি লাগবে বললে সেভাবেই ছবি তুলে দিবে।মনে রাখবেন ছবিটি যেন ৩ মাসের বেশি পুরানো না হয়।এমনকি ছবিতে স্ক্যান করা বা স্ট্যাপল করা উচিত নয় । আর আগের কোনো ভিসায়ও ব্যবহার করা উচিত নয়।
জাতীয় পরিচয়পত্র :
আবেদন পত্রের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্র বা ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি।তবে আপনার পাসপোর্ট তৈরি করেছেন যে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে সেটারই ফটোকপি কিন্তু আনতে হবে।
ফরোয়ার্ডিং-লেটার বা পেশাগত অনুমতিপত্র:
ক) আবেদনকারী যে পেশায় নিযুক্ত সেই পেশার প্রমাণস্বরূপ কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়।কোনো কোম্পানিতে চাকরীরত হলে
– সরকারী কর্মচারীদের বিভাগীয় প্রধানের কাছ থেকে একটি চিঠি বা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ছাড়পত্রের একটি অনুলিপি জমা দিতে হবে।
– বেসরকারী খাতে কর্মরতদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির লেটার হেডে আবেদনকারীর প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ফরোয়ার্ডিং লেটার/এনওসি আবেদনকারীর নাম, পদবী, পাসপোর্ট নম্বর, উদ্দেশ্য এবং সফরের সময়কাল উল্লেখ করে একটি চিঠি প্রদান করতে হবে।
– স্ব-নিযুক্ত ব্যবসায়ীদের অবশ্যই সরকার কর্তৃক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রদত্ত নিবন্ধনের একটি অনুলিপি জমা দিতে হবে।
– কর্মচারী, পাবলিক সেক্টরে কর্মরত, সংস্থার পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া (যদি ইংরেজিতে না হয়)।
খ) আর আবেদনকারী যদি শিক্ষার্থী হয় তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভিসার অনুরোধ পত্র বা স্টুডেন্ট আইডিকার্ড/ ভর্তির প্রমাণ (ছাত্র হলে) লাগবে।
আর্থিক কাগজপত্র :
গত ছয় মাসের কোম্পানির বা ব্যক্তিগত ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে ব্যাঙ্কের নাম, ব্যাঙ্কের টেলিফোন নম্বর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা।অথবা ক্রেডিট কার্ড বা ডলার কার্ড বা ট্রাভেল কার্ড।
ভিসা ফি দেয়ার রিসিট
ঠিকানার প্রমাণপত্র:
বর্তমান ঠিকানার বিগত ৩ মাসের যেকোন এক মাসের গ্যাস/পানি/বিদ্যুৎ বিলের ফটোকপি।
অনলাইনে কীভাবে ভিসা এপ্লিকেশন ফরম পাবেন এবং পুরন করবেন?
ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসায় ইন্ডিয়া ভ্রমণের প্রথম শর্ত ভিসা পাওয়া।আর এই ভিসা পেতে হলে আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে।আমরা অনেকেই আবেদন পত্র পূরণ করতে ভয় পাই বা পারি না।আর ভিসা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে তো আরও ভয়।কিন্তু এখন ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন অনলাইনে করা যায় বলে কাজটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।স্কুল/কলেজের ভর্তি ফরম যেভাবে পুরন করা হয় ঠিক সেভাবেই ভিসা আবেদনপত্রটিও পুরন করতে হয়।
এজন্য অনেকে সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে সাহায্য নেন বা অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে করান।আর নিজেও করেন অনেকে।তো ফরম পুরন করতে গেলে প্রথমে দরকার হবে ইন্টারনেট সংযোগসহ ল্যাপটপ বা কম্পিউটার। মোবাইল দিয়ে একটু কঠিন হয়।তাই কম্পিউটারই ভালো হবে।এরপর একটি ব্রাউজার ওপেন করে সেখানে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
https://www.ivacbd.com/regular-office-time-1783064432?ln=bn
এ লিংকে গেলে ইন্ডিয়ান ভিসার ওয়েবসাইট আসবে।এরপর অনলাইন ভিসা এপ্লিকেশন অপশনে ক্লিক করলে একটি আবেদন ফরম আসবে। এটিই পুরন করতে হবে। আর হাতে ঘণ্টাখানেক সময় নিয়ে ফরম পুরন করতে হবে। কারণ অনেক সময় নেট সংযোগ ঝামেলা করে বা সার্ভারে ডিসটার্ব করে।
এরপর ফরমে দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে যাবতীয় তথ্য সাবমিট করতে হবে।আর কম্পিউটারে আগে থেকেই পাসপোর্ট সাইজের তোলা ছবিটির স্ক্যান কপি সেভ করে রাখতে হবে। কারণ ফরম পুরনের সময় ছবি আপলোড করতে হবে।ছবির JPEG ফরম্যাট ও ৩৫০×৩০০ পিক্সেলের ডাইমেনশন আপলোড করতে হয়।
ছবি আপলোডের পর ফরমটি ভালোভাবে রিচেক করে নিতে হবে। সব তথ্য ঠিক থাকলে সাবমিট করে আবেদনপত্রটির অনলাইন কপি কম্পিউটারে সেভ ও কালার প্রিন্ট করাতে হবে।
এবার প্রিন্ট করা ফরমটিতে ল্যাবপ্রিন্ট ছবি আঠা দিয়ে সংযুক্ত করতে হবে। আর নিচে স্বাক্ষর অংশে স্বাক্ষর দিতে হবে।
ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা ফি কত?
আবেদন পত্র পুরনের সব কাজ হয়ে গেলে ভিসা ফি জমা দিতে হবে।বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য আবেদন করলে তাকে একটি নির্দিষ্ট ভিসা প্রসেসিং ফি (ভিপিএফ) প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশে ভারতীয় হাই কমিশনের নির্ধারিত ভিসা প্রসেসিং ফি হলো ৮০০ টাকা। ৫ আগস্ট ২০১৮ থেকে ভারতীয় ভিসা প্রক্রিয়াকরণ ফি ৮০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।আর এই ভিসা প্রসেসিং ফি কিন্ত অ-ফেরতযোগ্য ।এখন ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সহজেই এই ফি জমা দেওয়া যাবে।
ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা পেতে কতদিন লাগে?
ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা আবেদন করার পর সাথে সাথে কিন্তু ভিসা দিয়ে দিবে না। কারণ কর্তৃপক্ষ উক্ত আবেদনকারীর প্রদত্ত তথ্য যাচাই বাছাই করবে। এজন্য সময় লাগে।তাই সাথে সাথে ভিসা দেওয়া যায় না।এই ভিসা পেতে হলে ৫ থেকে ৭ কর্মদিবস অপেক্ষা করতে হবে। যদি ভিসা না ও দেয় সেই তথ্যও জানা যাবে এই ৫-৭ কর্মদিবসের ভিতর।
ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার কোথায় কোথায় আছে?
ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার সংক্ষেপে (আইভিএসি) বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ভিসা প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। ইন্ডিয়ান হাই কমিশন বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী,সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী,ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, বগুড়া (মোমো ইন ), ঠাকুরগাঁও, খুলনা,রংপুর,ময়মনসিংহ,বরিশাল,যশোর জেলায় তাদের ভিসা সেন্টারের শাখা খুলেছে।
এসব শাখায় প্রদত্ত ভিসা সেবাসমূহ ইন্ডিয়ান স্টেট ব্যাংক আউটসোর্স করছে। সর্বপ্রথম ঢাকার গুলশানে অবস্থিত এসবিআই এর ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র (আইভিএসি) ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। আইভিএসি এর ঢাকার শাখা অফিস বর্তমানে যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত।
ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারের সাপ্তাহিক ছুটির দিন কখন?
ইন্ডিয়ায় যেতে হলে ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টার সংক্ষেপে (IVAC) আইভিএসি-তে যেতে হয়। যমুনা ফিউচার পার্কে অবস্থিত ঢাকার আইভিএসি সেন্টারটি সপ্তাহের শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকে।সেইসাথে সরকারি ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে।
ঘরে বসে ইন্ডিয়ান ভিসা চেক করার নিয়ম
বর্তমানে কিন্তু ঘরে বসে ইন্ডিয়ান ভিসা চেক করার উপায় আছে। কারণ এখন প্রায় সব দাপ্তরিক কাজ অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। তাই ইন্ডিয়ান ভিসা সেন্টারও তাদের কাজগুলো অনলাইনে সম্পাদন করছে।এর অন্যতম সুবিধা হলো ঘরে বসেই ভিসা চেকিং এর কাজ সম্পন্ন করা যায়। এতে করে সময় বাঁচে।
অনলাইনে ইন্ডিয়ান ভিসা চেক করতে হলে প্রথমে ইন্ডিয়ান ভিসা এপ্লিকেশন সেন্টারের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। কয়েকটি ধাপে এই কাজটি করতে হবে। যেমন
ধাপ ১: এই লিংকে গিয়ে https://www.ivacbd.com/regular-office-time-1783064432?ln=bn
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।এখন বাম পাশের সবুজ রঙের মেন্যু থেকে ৩ নং অপশন ( ভিসা আবেদন ট্র্যাক) -এ ক্লিক করুন।
ধাপ ২:
ক্লিক করার পর https://passtrack.net/।
এই পেজে নিয়ে আসবে আপনাকে।অবশ্য এই লিংকে সরাসরিও আসা যায়।আবেদন ট্র্যাকিংয়ের জন্য এখানে ২টি অপশন পাবেন। একটি হলো Regular Visa Application এবং অন্যটি Port Endorsement । আপনার ভিসার ধরন অনুযায়ী যেকোন একটি সিলেক্ট করতে হবে।
সিলেক্ট করার পর আসবে একটি ইন্টারফেস যেখানে Please Type Above Code লেখা রয়েছে।এ অংশটির উপরেই ক্যাপচা পূরণ করার কোড আসবে।সেগুলো ঐ কোডের ঘরে সঠিকভাবে টাইপ করতে হবে। ভুল হলে কিন্তু সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে না। ক্যাপচার কোড না বুঝা গেলে Change Text এ ক্লিক করে লেখাটি পরিবর্তন করে নেওয়া যায় ।
ধাপ ৩: ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্ট ভিসা আপডেট ২০২৩ অনুযায়ী আবেদনকারীর ক্যাপচা কোড দিয়ে ভিসা এপ্লিকেশন নাম্বার দিতে হবে। ক্যাপচা কোডের ঘরের নিচেই Web File Number ঘরটিতে আপনার ভিসা এপ্লিকেশন নাম্বারটি লিখুন এবং Submit করুন। এই Web File Number টি কিন্ত আবেদনকারীর Visa Application Form এর বাম পাশে প্রিন্ট করা থাকে।
সাবমিট করার পর নাম, Passport Number, WebFile No এবং ভিসা স্ট্যাটাস দেখা যাবে ।
আপনার এপ্লিকেশন টি যদি আইভিএসি গ্রহন করে তাহলে Done দেখায়। এটি হাই কমিশনে পাঠানো হলে Done দেখাবে।ডেলিভারি দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত হলে Done দেখাবে।শেষে ভিসা ডেলিভারি দেওয়া হলে স্ট্যাটাস Done দেখাবে। আর না হলে খালি ঘর দেখাবে।
তাই ডেলিভারি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলে Done দেখালে ভিসা সংগ্রহ করা যাবে ।