কটকা সমুদ্র সৈকত

কটকা সমুদ্র সৈকত
শেয়ার করুন সবার সাথে

কটকা সমুদ্র সৈকত এর পরিচিতি ও অবস্থান

অপূর্ব নীল আকাশ ও লবনাক্ত জলেশ্বরীর বক্ষে ভেসে উঠা প্রাকৃতিক সাজে-সজ্জিত নিরিবিলি এক অরন্য হলো সুন্দরবনের কটকা সমুদ্র সৈকত। যার দৃষ্টিনন্দন শোভা বহু পর্যটকদের মন কেড়ে নিয়েছে অনায়াসে। কটকা সমুদ্র সৈকতটি বাগেরহাটের মংলা ও সুন্দরবনের মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা টাইগার পয়েন্টে অবস্থিত।বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা-পরিবেশ মিশ্রিত প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার  জুড়ে গড়ে উঠা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বা লবনাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন, যা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের ৭৯৮ তম অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। আর সেই সুন্দরবনে অবস্থিত অজস্র আকর্ষনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হরেক প্রজাতির জীবজন্তু, আঁকাবাঁকা নদ-নদী ও ছোট-বড় বিভিন্ন বৃক্ষরাজের সমাহার নিয়ে গঠিত কটকা সমুদ্র সৈকত।

কটকা সী-বীচে যা যা দেখতে পাবেন

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিরব প্রকৃতি ও ভিন্ন রকমের  জীবজন্তুর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও স্থানীয় জেলেদের  উপস্থিতির কারণে সকল ভ্রমন-পিয়াসু পর্যটকদের  নিজ পছন্দের তালিকায় কটকা অভয়ারণ্য প্রথম স্থান দখল করে নিয়ে আছে । এখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার যা বন্য পরিবেশের প্রধান আকর্ষণ, তবে এখানে যথেষ্ট নিরাপদ অবস্থানে থেকে বাঘের দেখা পাওয়া সম্ভব।

বনের দক্ষিণে রয়েছে তিনটি টাইগার টিলা। যেখানে একদম বাঘের তরতাজা পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় । সেখান থেকে সোজা পূর্ব দিকে রয়েছে মিঠা পানির পুকুর ও ঘন ঘন বন, আপনি যদি একটু চুপচাপ কিছুক্ষণ নিঃশব্দে হেঁটে বনের গভীরে যান তাহলে দেখতে পারবেন অসংখ্য চিত্রা হরিণের দল, বানরের ছুটাছুটি, বন্য শুকর ও শেয়াল এবং শুনতে পারবেন বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কল-কাকলি।



শুধু তাই নয়, আপনি যদি শীতকালে এখানে দর্শন করতে আসেন তাহলে দেখা মিলবে রোদ পোহাতে থাকা কিছু কুমিরের।  কটকাতে রয়েছে চার তলা বিশিষ্ট প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন একটি ওয়াচ টাওয়ার। কটকা ওয়াচ টাওয়ার থেকে উত্তরে দিকে প্রায় ৩ কি.মি দূরেই দেখতে পাওয়া যাবে চোরাবালির জামতলা সমুদ্র সৈকত। সৈকতের পাশ দিয়ে হেটে চলতে চলতে দেখতে পারবেন জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা বিভিন্ন মৃত বৃক্ষের শেকড়।

এছাড়া দেখবেন জল থেকে স্থলে উঠে আসা বৈচিত্রপূর্ণ লাল কাঁকড়ার দল। সৈকতের পাশেই রয়েছে ম্যানগ্রোভ জাতীয় বিভিন্ন উদ্ভিদের শ্বাসমূল যা দৃশ্যমান হয় ভাটার সময়। আপনি যদি সূর্যাস্ত দেখার জন্য অতি- আগ্রহী হোন তাহলে আপনার জন্য এই স্থানটি হবে উপযুক্ত স্থান।

ঢাকা হতে সুন্দরবন যাওয়ার উপায়

আপনি যদি রাজধানী ঢাকা হতে বাস এ করে খুলনা পৌঁছোতে চান তাহলে নিম্নে উল্লেখ করা কিছু সংখ্যক বাস দিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন।

ঢাকা টু খুলনা বাসের ভাড়া

সোহাগ পরিবহন
ভাড়াঃ- ৭৫০-১৫৫০ টাকা

সুন্দরবন ক্লাসিক
ভাড়াঃ-৬০০-৮০০ টাকা



গ্রীনলাইন পরিবহন
ভাড়াঃ- ৬০০-১২০০ টাকা

বনফুল পরিবহন
ভাড়াঃ-৫০০-৭০০ টাকা
বুকিংঃ 01926699362,01709964270,01709964203

আপনি যদি নিরাপদ ও ভিন্নধর্মী পরিবহন ট্রেনযোগে যাতায়াত করতে ইচ্ছুক হন তবে আপনি নিন্মলিখিত ট্রেনগুলো দিয়ে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন হতে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যস্থল খুলনায় পৌঁছোতে পারেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে যাওয়ার উপায়

সুন্দরবন এক্সপ্রেস
সকালঃ-৮.১৫ মিনিট হতে খুলনার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।

চিত্রা এক্সপ্রেস
সন্ধ্যাঃ- ৭.০০ মিনিট হতে খুলনার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।

খুলনা নগরী থেকে মংলা বন্দর হয়ে কটকা

ঢাকা থেকে খুলনা পৌঁছানোর পর আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে পরবর্তী সফরের উদ্দেশ্যে। আপনি চাইলে খুলনা বাসস্ট্যান্ডে নেমে কিছুক্ষণ স্বল্প বিরতি নিতে পারেন। যেহেতু, খুলনা থেকে মংলা পৌঁছাতে আপনাকে আরোও পঞ্চাশ কি.মি. (প্রায়) পৌছাতে হবে সেহেতু আপনি খাওয়া-দাওয়া ও জরুরি কাজকর্ম সেরে নিতে পারেন এখান থেকেই। সবকিছু শেষে আপনি খুলনা টু মংলার বিভিন্ন গাড়ি বা বাসে করে রওনা হতে পারেন মংলার উদ্দেশ্য।



অতঃপর মংলায় পৌঁছানোর পর আপনি মংলা ফেরি ঘাট থেকে বিভিন্ন ধরনের সারিবদ্ধ লঞ্চ অথবা ট্রলারে করে ৩.০০ থেকে ৩.৩০ ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাবেন সেই সুন্দরবনের নিকটবর্তী কটকায়। এক কথায় কটকার নিকটে পৌঁছানোর প্রধান মাধ্যম হলো শুধুই নৌ-যান। সুন্দরবনের কূল ঘেষে পূর্ব- দক্ষিণ কোণে অবস্থিত এই আকর্ষণীয় স্থান কটকা। অবশেষে, ভ্রমনপিপাসুদের নিয়ে লঞ্চ পরিবহনগুলো নোঙ্গর করা হয় দক্ষিণ দিকের কটকা খালটিতে।

খুলনা, সাতক্ষীরা, মংলা এবং কটকায় রাত্রিযাপনের জন্য কয়েকটি উন্নতমানের আবাসিক হোটেল

ভ্রমণপিপাসুগন খুলনা নগরীতে নিরাপদে রাত্রিযাপন করতে চাইলে নিন্মলিখিত জনপ্রিয় হোটেলগুলোতে উঠতে পারেন। হোটেল সিটি ইন,হোটেল টাইগার গার্ডেন, সালাম ক্যাসেল, সি এস এস রেষ্ট হাউজ, কারিতাস রেষ্ট হাউজ, শিপইয়ার্ড রেষ্ট হাউজ ইত্যাদি।

সাতক্ষীরা জেলা শহরেও বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। যেমনঃ- নকিপুর, বাসস্ট্যান্ড,শ্যামনগর সংলগ্ন সুশীলনের রেস্টহাউস,হোটেল সুন্দরবন, হোটেল সৌদিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।এই হোটেলগুলোতেও রাত্রিযাপন করার সুবিধা রয়েছে।

মংলা বন্দরে রয়েছে চমৎকার এক পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল,চাইলে আপনি সেখানেও রাত্রিযাপন করতে পারেন। এ

ছাড়াও সুন্দরবনের কটকা,হিরণ পয়েন্ট, নীলকমল,টাইগার পয়েন্ট, কচিখালীতে বন বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত রেস্ট হাউজেও রাত্রিযাপনের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

ঢাকা হতে কটকায় পৌঁছানোর সকল খরচ

ঢাকা থেকে কটকার উদ্দেশ্য ভ্রমণকারীদের জনপ্রতি ও এক দিনের ভ্রমণ খরচের সকল হিসাব নিন্মে তৈরি করা হলো



১) পরিবহন খরচ ২১০০ টাকা
২) থাকা-খাওয়াসহ খরচ ২৫০০ টাকা
৩) ভ্রমণ চার্জ ২৫০ টাকা
৪) গাইড চার্জ ৬০০ টাকা
৫) লঞ্চ ক্রুর চার্জ ৮০ টাকা
৬) নিরাপত্তা গাইড চার্জ ৪০০ টাকা
৭) টেলিকমিউনিকেশন চার্জ ৩০০ টাকা
৮) ভিডিও ক্যামেরা চার্জ ২০০ টাকা ( কেউ যদি অনুমতি না নিয়ে কোনো ড্রোন,ক্যামেরাতে ছবি তুলো তাহলে তাকে গুনতে হবে মোটা অংকের জরিমানা)।
৯) নিবন্ধিত ট্রলার ফি  ৮০০ টাকা
১০) ট্রলার অবস্থান চার্জ ২০০ টাকা

সুতরাং, সব মিলিয়ে মোট ৭৪৩০ টাকা খরচ করলেই আপনি ঘুড়ে আসতে পারেন সৌন্দর্যে ঘেরা অভয়ারণ্যে এলাকা কটকায়। তবে সময়গত, সার্ভিস-সমূহ, আকার-আকৃতি ও স্থানভেদে খরচাবলি বাড়তে এবং কমতে পারে।

ছবিটি তুলেছেনঃ জাহাঙ্গীর আলম 


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!