গোয়া-কলকাতা (আংশিক) ১০ দিনের একা ভ্রমণ
একা/সলো ট্যুর কথাটা শুনলেই অনেকেই এখনো দেখি কেমন অদ্ভুতভাবে নেয় ব্যাপারটা, পাগলামিও বটে এটা অনেকের কাছে এখনো ৷ কিন্তু অনেক আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলাম এমন একটা এডভেঞ্চারের স্বাক্ষী হব । আমি যাওয়ার আগে অনেক খুঁজেও সলো বাজেট ট্যুরের প্ল্যান পাইনি কোন গ্রুপে, তাই এটা নিয়ে লিখতে বসে গেলাম যদি কারো উপকার হয় এই ইচ্ছায় ।
এবার আসি বিস্তারিত-
পরিকল্পনা মতো ১৮ তারিখ রাত ১২:৪০ ঢাকা থেকে বেনাপোল যাই ট্রেনে । বর্ডার পার হয়ে টাকা থেকে রুপি পরিবর্তন করে অটোতে ৩০ রুপিতে যাই বনগা স্টেশন । সেখান থেকে ২০ রুপিতে যাই শিয়ালদহ । শিয়ালদহ থেকে লেট না করে সোজা বাসে করে ৯ রুপিতে চলে যাই ফেয়ারী পেলেস । সময় তখন ৪.৩০ প্রায় । ভাগ্য ভালো ওখান থেকে পরের দিনের মানে ২০ তারিখের গোয়া, ভাস্কো-ডা-গামা স্টেশনের টিকিট পেয়ে যাই ১১০০ রুপিতে, যা অন্তত ২-১ মাস আগে আগে থেকে করে রাখা ভালো ৭৫০ রুপিতে পাওয়া যাবে তাহলে ।
- আরও পড়ুন | কলকাতা টু গোয়া ভ্রমণের বিস্তারিত গাইড লাইন
যাই হোক, বুঝতেই পারছেন কি তাড়াহুড়ো করেছি । এবার আসলাম আবার বাসে করে ৯ রুপি দিয়ে নিউ মার্কেট এরিয়ায় । খুঁজে একটা হোটেল পেলাম ট্যুরিস্ট ইন নামে ৩০০ রুপিতে । ওইরাতে খেয়ে রেস্ট নিলাম । পরদিন মানে ১৯ তারিখ সকাল ৮ টায় হোটেল ছেড়ে দিলাম । সময় ছিলো হাতে রাত ১১ টা পর্যন্ত । ভাবলাম মন্দ হয়না কলকাতাটা ঘুরে নেই । ওইদিন ভিক্টোরিয়া,ইডেন,রবীন্দ্র ভারতী সহ আশেপাশে কিছু যায়গা ঘুরে জাকির স্ট্রিটে বিরিয়ানী,হালিম,লাচ্চি গিয়ে খেয়ে নিলাম । তারপর গেলাম সোজা হাওড়া স্টেশন । অমরাবতী এক্সপ্রেসে স্লিপ্লাশেষে ২১ তারিখের সিট । আরাম করেই বলা চলে, শুয়ে বসে ৩৮ ঘন্টার সফর বিকাল ৪ টায় ভাস্কো-ডা-গামা স্টেশনে পৌছাই । অসাধারন দুধ সাগর ঝর্ণার দেখাও পাই ট্রেনে বসে । আহ এই দৃশ্য ভুলার মত না । স্টেশন থেকে বের হয়ে বাস ধরে পানাজি,পানাজি থেকে কালাংগুটে বিচ এরিয়ার পৌছাই ।
অনলাইনে খুঁজে হেসটেগ রুম নামে একটা ডরমিটরি টাইপ হোস্টেল পাই ৩০০ রুপিতে । যা একদম বিচের পাশে । বাহ, আমার যেমন ইচ্ছা ছিল তেমনি সব মিল ছিল । হোস্টেলে গিয়ে পেয়ে যাই ব্রাজিলিয়ান নতুন বন্ধু ব্রুনো । ভালোই আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া হলো । পরিদিনটা আমি আর ব্রুনো বাইক ভাড়া করি ৩০০ রুপি দিন হিসেবে । কালাংগুটে বিচ, ফন্টেনহাস, আগুয়াদা ফোর্ট,লাইট হাউজ,বাগা বিচ ঘুরি । অসাধারণ ছিল বিচ গুলো এবং এরিয়া গুলো । বিশেষ করে রাতের বেলা যেন এক্কেবারেই অনুরূপ । যাই হোক, ২১ ও ২২ তারিখ ওখানে থেকে পরদিন ২৩ তারিখ আমি একা যাই আঞ্জুনা বিচ এরিয়ায় ৩০ রুপিতে । সেখানে গিয়ে অনলাইনে খুঁজে রাধা হোস্টেল নামে সেম টাইপ একটা কমিউনিটি হোস্টেল পাই ২০০ রুপিতে প্রতিদিন হিসাবে এই রাধা হোস্টেলটা ছিল বেস্ট অভিজ্ঞতা । ৪ জন জার্মান, ২জন ভারতীয়, একজন সাউথ আফ্রিকান সবাই আমার মত সলো ট্রাভেলার । ওদের সাথে মিলে মিশে অসাধারণ সময় কেটেছে । অতি অল্প সময়ে ওরা অনেক বেশী আপন করে নিয়েছিল । খুব আগ্রহ আমার বাংলাদেশ নিয়ে তাদের । সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছি, কয়েকজন তো কথা দিয়েছে শীঘ্রই আসবে বাংলাদেশ । ওদের আগ্রহের খাতিরে গর্ব করে বলেছি আমার দেশের দর্শনীয় স্পট গুলো সম্পর্কে । কিছুটা বাংলাও শিখিয়েছি বেশ মজা করে । ওদের জানার আগ্রহ আর ইচ্ছা যে কোন কিছু সম্পর্কে বেশ ভালো । যাই হোক, ২৩ তারিখ রাতে সবাই মিলে পাশের হপিং ফ্রগ নামে একটা হোটেলে অন ইনভাইট পার্টিতে যাই । খাওয়া দাওয়া বেশ মজা করে আবার হোস্টেলে এসে ঘুম । পরদিন ২৪ তারিখ সকালে আঞ্জুনা বিচে যাই । গোয়ার ওয়াটার স্পোর্টস পপুলার বেশ । প্যারাসেলিং, ব্যানানা জাম্প,আরেকটা নাম মনে নেই এই তিনটা মিলিয়ে প্যাকেজ নেই ১০০০ রুপিতে । এটা অসাধারণ ছিল । আকাশে ভেসে থাকার আহ সেকি মূহুর্ত । এরপর হোস্টেলে এসে নিজে রান্না করি । কিচেন ছিল । ওদের খাওয়াই আলু,পটল রুই মাছের তরকারী আর সাদা ভাত । কিছুটা ঝাল ছিল ওদের জন্য যদিও মরিচ কমই দিয়েছিলাম । কিন্তু বেশ মজা করে খেয়েছে ওরা (যদিও আমার রান্না এভারেজ) । আসলে ওখানের বরাপাও,আর থালি আর মন ভরছিল না তাই রান্না করি । যাই হোক, ওইদিন রাতে মিলিডি জার্মান মেয়েটা তার দেশের একটা আইটেম রান্না করে খাওয়ায় । এত মজা হচ্ছিল যে ওদের ছেড়ে আসতেই মন চাচ্ছিলো না । কিন্তু আসতে তো হবেই । ২৫ তারিখ সকাল সকাল চলে যাই আরামবোল বিচ এবং ভ্যাগেটর বিচ এরিয়ায় । এগুলো ঘুরে আমি ওদের থেকে বিদায় নিয়ে রাতে চলে আসি আবার ভাস্কো-ডা –গামা । এখানে রাতে রেল স্টেশনের রিটায়ারিং রুমে থাকি । কারন ট্রেন পরদিন ২৬ তারিখ সকাল ৭ টায় । একই ভাবে ট্রেনে ফিরে আসি কলকাতা ২৭ তারিখ রাত ১১ টায় । এসে চলে যাই আগের হোটেলে । রাতে থেকে ২৮ সকালে নিউ মার্কেট এরিয়ায় ঘুরে দুপুরে চলে যাই একই ভাবে বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্তে। বর্ডার পার হয়ে শ্যামলী এন,আরে বাসে উঠি ঢাকার আসি রাত ৩ টায়।বিস্তারিত শেষ ।
এবার আসি ১০ দিনে কত খরচ হলো –
ঢাকা – বেনাপোল ট্রেন= ৫২৫
ট্রাভেল ট্যাক্স = ৫০০
পেট্রাপোল- বনগা-শিয়ালদহ + খাবার = ৩৬+২৪+১০০ =১৬০
শিয়ালদহ -ফেয়ারী পেলেস -নিউ মার্কেট = ২২
হোটেল ( কলকাতা) + রাতের খাবার + খাবার + ঘুরাঘুরি পরদিন সহ =৩৬০+৬০+২৪০+১৫০=৮১০
হাওড়া – ভাস্কো- হাওড়া রিটার্ন + খাবার ট্রেনে =৩১১৮
ভাস্কো – পানাজি- কালাংগুটে =৬০
কালাংগুটে ২ দিন হোটেল + খাওয়া+ বাইক ৭২০+২৫০+৩০০=১২৫০
কালাংগুটে – আঞ্জুনা = ৩৬
আঞ্জুনায় ২ দিন হোটেল + খাবার + ওয়াটার স্পোর্টস +এক্সট্রা = ৪৮০+৩০০+১২০০+১২০= ২১০০
গোয়ায় শেষদিন আঞ্জুনার পাশের বিচ গুলোয় ঘুরাঘুরি+ খাবার = ২৪০
আঞ্জুনা – ভাস্কো = ৫০
ভাস্কো – কলকাতা ওপরে এড করে দিয়েছি
কলকাতায় রাতে থাকা + আসার দিন খাওয়া+ বেনাপোল আসা = ৩৬০+ ১৫০+ ৫০= ৫৬০
বেনাপোল – ঢাকা + খাবার = ১০০০ + ১০০= ১১০০
টোটাল – ১০৫৩১ টাকা ( সব বাংলা টাকায় কনভার্ট করেই হিসাব করা)
এখানে ওয়াটার স্পোর্টস বাদ দিলে ৯৫০০ টাকায় সব শেষ করা সম্ভব আর হাওড়া টু গোয়ার টিকিট আগে করা গেলে খরচ আরো প্রায় হাজার খানেক কমে যাবে । আরো কিছু জায়গায় আমার একটু খরচ বেশী হয়েছে। কমেন্ট করবেন কেউ যাবার প্ল্যান করলে আশা করি হেল্প পাবেন। সবার ভ্রমণ সুন্দর হোক । যেখানেই ভ্রমণে যান না কেনো আশেপাশে কোন ময়লা- আবর্জনা ফেলবেন না। পরিবেশ সুন্দর থাকলে আপনার ও ট্রাভেলারদের মনটাও ভালো থাকবে 🙂