চন্দ্রনাথ পাহাড় ও গুলিয়াখালি বিচ ভ্রমণ

Chandranath pahar
শেয়ার করুন সবার সাথে

একদিনেই চন্দ্রনাথ পাহাড় ও গুলিয়াখালি বিচ ভ্রমণ 

এক দিলে দুই পাখি মারতে কার না ভালো লাগে। আর সেটা যদি হয় একই দিনে সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ে (Chandranath pahar) ট্রেকিং এবং গুলিয়াখালি সি বিচে (Guliakhali Sea Beach) ভ্রমণ তাহলে তো কোন কথায় নেই । একদিকে পাহাড় আরেকদিকে সমুদ্র সীতাকুন্ডকে ভ্রমনপিপাসুদের কাছে করে তুলেছে আকর্ষনীয়। প্রকৃতি তার অপার রূপ লাবন্য দিয়ে ঢেলে সাজিয়েছে এই দুইটি স্পটকে। টিওবিতে এই দুইটি স্হানের গোটা দশেক পোস্ট আর সবুজে মুড়ানো পাহাড়গুলোর কিছু মনোরম ছবি দেখে আমরাও কয়জন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার আশুগন্ঞ্জ থেকে । এখানে বলে রাখা ভালো আমাদের ট্যুরটি ছিল এই বছরের এপ্রিলের শুরুর দিকে। সময় স্বল্পতা আর পারিবারিক ব্যস্ততার কারনে এখন আর কিছুই সময়মত লেখা হয় না। বিশেষ করে ভ্রমন বিষয়ক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে। বর্ষার সিজন শুরু হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। তাই এ সময়টাতে ভ্রমনপিপাসু মানুষদের পাহাড়ে ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। এবার কোথাও ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার সুযোগ না মিললেও সময় হয়েছে কিছু লেখালিখির। এরই ধারাবাহিকতায় চন্দ্রনাথ পাহাড় অভিযান আর গুলিয়াখালি বীচ ভ্রমন নিয়ে আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা আপনাদের সামনে কিছুটা হলেও তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

অলরেডি একটা ট্যুর ক্যানসেল হয়ে গেছে ব্যস্ততার কারনে। চাকরিজীবিদের সময় ব্যবস্হাপনা করে চলতে হয় সবসময়। কোনমতে ৫ জন রাজি হয়ে গেছি। তাই এবার যেতে আর কোন বাঁধা-ই থাকল না। মহানগর এক্সপ্রেসের ৫ টা টিকেট কিনে ফেলেছি ট্যুর ডেটের ৫ দিন আগেই। শুধু বাকি ছিল টিশার্ট কেনা আর লোগো বসানো। আমাদের একটি ছোট খাটো ট্যুর ক্লাব আছে । ক্লাবের প্রথম ইভেন্ট বিধায় ট্যুর শার্ট নিয়ে একটা বাড়তি উন্মাদনা ছিল সবার মাঝে। কিন্তু শেষমেষ শার্টের সাইজ জটিলতা নিয়েই আমরা রওনা দেই আশুগন্ঞ্জ থেকে। রাত ১২ঃ২০ এসে পৌঁছায় ট্রেনটি আর চট্রগ্রাম রেল স্টেশনে পৌঁছে যায় ভোর ৫ঃ৩০ এ। ট্রেনের ভাড়া ছিল ২৬৫ টাকা।



এরপর সকালের নাস্তাটা সেরে ফেলি রেল স্টেশনের পাশেই অবস্হিত একটা হোটেল থেকে। পাঁচজনের নাস্তাবাবদ পড়েছিল ২৬৫ টাকা। খাবার আইটেমের মধ্যে ছিল পরোটা, তন্দু রুটি, হালুয়া, ডাল সবজি ও চা। খাবারের মানটা ভালোই মনে হল। দ্রুত নাস্তা খাওয়ার পর আমরা অপেক্ষা করতে থাকি স্টেশনের প্লাটফর্মে। গন্তব্য সীতাকুন্ড স্টেশন। সীতাকুন্ড অভিমুখী সাগরিকা ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার ১৫ মিনিট পূর্বেই আমরা ট্রেনটিতে ওঠে পড়ি। আধা ঘন্টার পথ, তাই টিকেটের জন্য বিশাল লাইনের পিছনে না দাড়িয়ে সরাসরি ট্রেনের পিছনের একটা বগিতে ওঠে পড়ি। সামনে যতই যাচ্ছিলাম একেকটা স্টেশনে একজনকে সীট ছেড়ে ওঠে দাড়িয়ে যাওয়াটা ছিল আমাদের কাছে বেশ মজার। পরে স্ট্যান্ডিং ফেয়ার হিসেবে জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে সীতাকুন্ড স্টেশনে নেমে পড়ি সকাল নয়টার কাছাকাছি কিছু সময়ে। স্টেশন ত্যাগ করার পূর্বে জেনে যায় বিকাল কিংবা সন্ধ্যার দিকে কোন ট্রেনগুলো কখন ছেড়ে যাবে সীতাকুন্ড থেকে। যাতে করে সময়মত আমরা চট্রগ্রামে পৌঁছে ঢাকাগামী কোন একটা ইন্টারসিটি ট্রেন ধরতে হবে।

আমরা সীতাকুন্ড রেলস্টেশন থেকে কিছুদূর সামনে গিয়ে একটা সিএনজি ভাড়া করি চন্দ্রনাথ পাহাড়ের নিকটে যাওয়ার জন্য। ভাড়া চেয়েছিল ১৫০ টাকা, পরে ১০০ টাকায় দফারফা হয়। ১৫-২০ মিনিটের মাঝেই আমরা পৌঁছে যায় চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। তারপর সেখানে একটা দোকান থেকে ৫ জনের জন্য ২ লিটারের ২টি বোতল, ১০ প্যাকেট টেস্টি স্যালাইন, কিছু প্যাকেটের বিস্কুট আর ট্রেকিং এর জন্য শক্তপুক্ত দেখে ৫টি বাশ ভাড়া করে যাত্রা শুরু করি চন্দ্রনাথ অভিমুখে। এক একটি বাশ ভাড়া নিয়েছি ১০ টাকা করে। সামনে কিছুদূর যেতেই এক দোকানি বলছিল, আপনাদের ব্যাগগুলো আমাদের কাছে ভাড়ায় রেখে যেতে পারেন। পরে দেখলাম ভালোই হয় যদি কাঁধের বোঝা কিছুটা হালকা করা যায়। পরে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজেদের কাছে রেখে ব্যাগগুলো ওদের কাছে রেখে যাই। ভালোই লাগতেছিল শুরুর দিকে। মনে হচ্ছিল দূর থেকে চন্দ্রনাথ হাতছানি দিয়ে আমাকে ডাকছে। পরেই বুঝতে পারি তার রূপের মায়ায় আমাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কঠিন খাড়া বন্ধুর পথে ধাবিত করে উপরের দিকে নিয়ে চলে। প্রচন্ড গরমের মাঝে আঁকাবাঁকা উঁচু নিচুঁ পথ মারিয়ে উপরের দিকে ওঠে যেতে যেখানে গলদগর্ম হতে হয় সেখানে ভাঙ্গাচুড়া সিড়ি বেয়ে বেয়ে যাওয়াটা কতটা ঝুকিপূর্ন হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে কাউকে বিশ্বাস করানো কঠিন হয়ে পড়বে। এত কষ্টের মাঝে যখন ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আর মহিলাদের ভঙ্গুর আর খাড়া পাহাড়ি পথ পারি দিতে দেখি তখন মনটাকে একটা মোটিভেশনাল ফর্মে রেখে শান্তনা দিতে থাকি কিছুক্ষন পরপর। সাধারনত এই পাহাড়ের শীর্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বেশি উঠতে দেখা যায়। কারন এই পাহাড়ের শীর্ষে রয়েছে একটি মন্দির। পূজা আচর্না করতে এখানে আসে তারা।



এমন অবস্হা হবে আমার, নিজেও ভাবতে পারি নি। মূল চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠার পূর্বে একটি পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হয় প্রথমে। এখানেও একটি ছোট মন্দির আছে । হাত পা নড়াচড়া করতে পারছি না। পানির বোতলটা হাতে নিয়েছি মাত্র। কিন্তু মুখের কাছে নিতে নিতে দেখি হাতটা কাঁপছে। মনে হচ্ছে ব্লাড প্রসার অনেক কমে গেছে। গায়ে কোন শক্তিই পাচ্ছিলাম না। দ্রুত স্যালাইন খেয়ে রিকভার করার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তাতেও তেমন একটা কাজ হচ্ছিল না। ওদিকে দেখি সেলফি আর ছবি তোলায় সবাই ব্যস্ত। অথচ আমার যে কি হল। কেওক্রাডাং এ ট্রেকিং করেও এতটা খারাপ লাগে নি। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল খুব। এত উচুঁতে থেকেও মনে হচ্ছিল আশেপাশে কোন বাতাসই নেই। একটু শুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার খুব ইচ্ছে করতেছিল। কিন্তু সেখানে তেমন কোন ব্যবস্হাই ছিল না। অল্পটুকু জায়গা, তার মধ্যে আবার লোকজনের জটলা ! কি আর করার। কোনমতে মিনিট দশেক বিশ্রাম নিয়ে আবার ধীরে ধীরে যাত্রা শুরু করি মূল চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। শেষের ট্রেইলটা যেন শেষ হতেই চাচ্ছিল না। মাঝে একটা দোকান পেলাম। সেখানেও আরও কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে উঠে আসলাম মূল চন্দ্রনাথ পাহাড়ের শীর্ষে। শীর্ষে উঠার কিছুক্ষনের মাঝেই শুরু হল প্রচন্ড রকমের নিম্নচাপ! একদিক সেদিক খুঁজে মিললো না কোন টয়লেট। যা আছে তাও সেটা পুলিশ ক্যাম্পের ভিতরে। বড় করে সাইনবোর্ড টানানো ” ভিতরে প্রবেশ নিষেধ”। প্রয়োজন কোন আইন মানে না। তাই ভিতরে প্রবেশ করে উনাদের টয়লেটে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করতেই উনি পুরহিতদের জন্য বিশেষ টয়লেটে যাওয়ার রাস্তা বাতলাইয়া দিলেন। কি আর করার। এবার একজন পুরহিতকে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরার পর উনি এমন একটা জায়গা দেখিয়ে আমাকে দিলেন যেখানে যাওয়া ছিল একেবারে অস্বস্তির। জায়গাটার বর্ননা করতে পারছি না। পরে কোন উপায়ন্তর না দেখে খানিকটা নিচে নেমে আসি। এরপর কিছুটা রিস্ক নিয়েই মূল সিড়ি থেকে একটু দূরে গিয়েই প্রকৃতির মাঝে নিজেকে আড়াল করে দিয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজটি দ্রুততার সেরে ফেলি। এরকম একটি ওড সিচুয়েশনে যে কেউ-ই পড়তে পারেন। তাই হাতের কাছে ব্যবহার্য জিনিসপত্র রাখার পরামর্শ দেওয়া হল।

যাই হোক, আমরা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে আধা ঘন্টার মতো অবস্হান করি। এ সময় সেলফি, গ্রুপ ফটো আর শখের ভিডিওগ্রাফিটাও কোনটাই বাদ যাই নি। উপর থেকে চারপাশের ভিউটা এক কথায় মাইন্ড ব্লোয়িং। মুহূর্তের মধ্যেই সব কষ্ট আর যন্ত্রনা লাগব হয়ে গেল। চারিদিকটা সবুজ আর সবুজ। সবুজের পরই সমুদ্র। অর্থাৎ গুলিয়াখালি বীচের স্পটটাও খুব একটা দূরে হবে না হয়ত। বর্ষার সিজনে আসলে হয়ত প্রকৃতির আসল রূপটা দেখা যেত। এই অপূর্নতাকে সাথে নিয়েই আমরা চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া পাহাড়ি কিন্তু পাকা রাস্তা ধরে নামতে থাকি। চন্দ্রনাথ উঠতে দেড় ঘন্টার মতো লাগলেও নামতে কিন্ত একই সময় লাগে নি। আনুমানিক ১ ঘন্টার মধ্যেই আমরা চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে নেমে আসি।

এরপর সেখান থেকে আবার একটা সিএনজি ভাড়া করি। লক্ষ্য এবার গুলিয়াখালি বীচ। কিছুক্ষন দর কষাকষির পর সিএনজি ড্রাইভার ৩০০ টাকায় আমাদের গুলিয়াবীচের মূল পয়েন্টের প্রায় আধা কিলোমিটার পূর্বেই নামিয়ে দেয়। এখানে আসতে সময় লেগেছিল প্রায় আধাঘন্টার মতো। মিনিট পনেরো হাটার পর অবশেষে পৌঁছাই গুলিয়াবীচের মূল পয়েন্টে। আমরা যখন সেখানে পৌঁছাই ঘড়িতে তখন ২ টা ছুঁইছুঁই। সৈকতে ভাটা চলছিল সে সময়টাতে। বীচে আসলাম অথচ গোসল করবো না। তা কি করে হয়। গ্রুপের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম গোসল করবো । এক পর্যটক ভাই আমাদের নিষেধ করলেন গোসল করতে না যাওয়ার জন্য। কে শুনে কার কথা। আমরা একটা ট্রলার ভাড়া করলাম ১০০ টাকায়। মাঝি আমাদেরকে সমুদ্রের এমন একটি জায়গায় নামিয়ে দিয়ে আসবেন যেখানে আমরা বুক সমান পানিতে কিছুক্ষন গোসল করতে পারবো। তারপর যথারীতি জলকেলি পর্বের পর আমরা আবার একই ট্রলারে করে বীচে ফিরে আসলাম। যখন তীরে আসলাম তখন মনে হচ্ছিল গোসল করার সিদ্ধান্তটা আসলেই ভুল ছিল। লবনে সারা শরীরটা চিটচিট করছিল। মনে চাচ্ছিল কোন একটা পুকুরে গিয়ে মিনিট দশেক চুবিয়ে নিয়ে আসি নিজেকে। ওই ভাইটার কথাটা শুনলে ভালোই হত।



সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে সীতাকুন্ড রেলস্টশনে পৌঁছাতে হবে সময়মতো। অথচ তখন পর্যন্ত আমরা দুপুরের খাবার সাড়তে পারি নি। সবারই প্রচন্ড ক্ষুধা লেগে গিয়েছিল এর মধ্যে। তাই কালক্ষেপন না করে আমরা দ্রুত একটা সিএনজি ভাড়া করে চলে যাই সীতাকুন্ড বাজারে। ভাড়া পড়েছিল ২৫০ টাকার মতো। এখান থেকে সীতাকুন্ড রেলস্টেশনে পায়ে হেঁটে যেতে সময় লাগবে দশ মিনিট। কোন বাছবিচার না করেই উঠে পড়ি দেখতে বড়সড় কোন একটা হোটেলে। ২টা বড় বড় রূপচান্দা মাছ, ৪-৫ রকমের ভর্তা দিয়ে ৫ জনের ডাল ভাতের পর্বটা সেরে নেই ১২০০ টাকার মধ্যেই। খাবারের মান নিয়ে আমাদেরও কারো মন্তব্য তেমন একটা ভালো ছিল না। যাক সে কথা। খাওয়া দাওয়া শেষ করে মিনিট দশেকের মধ্যে আমরা পৌঁছে যাই সীতাকুন্ড রেলস্টেশনে। আর অপেক্ষা করতে থাকি চট্রগ্রাম অভিমুখী কোন একটা লোকাল ট্রেনের। অবশেষে পেয়েও যায়। তবে ঘন্টা দেড়েক অপেক্ষার পর! একি! চট্রগ্রামে এসে জানতে পারি ঢাকা অভিমুখী কোন ট্রেনেই নাকি আসন ফাঁকা নেই । পূর্ব থেকেই ট্রেনের টিকেট কনফার্ম করে আসলে হয়ত এইরকম বিপত্তিতে আমাদেরকে পড়তে হত না। বাজেট ট্যুরের জন্য এসি টিকেট পেয়েও কাটা হয় নি। এখন মনে হচ্ছে এই সিদ্ধান্তটা বোধ হয় ভুল ছিল। যাক ভাগ্য ভাল ছিল আমাদের। গ্রুপের এক সদস্যের চাচা এখানে রেলে চাকরি করতেন। রিটায়ার্ড করছেন বছর খানেকও হয় নি। পরে উনার সহযোগিতায় ঢাকা মেইলের খাবারের বগিতে ব্যাপক গোপনীয়তার সাথে উঠে পড়ি। বাহিরে তখন এক একেকটি বগিতে উঠার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ট্রেনের ভাড়া সম্ভবত ছিল ২৮০ টাকা। ট্রেনের সন্ধান করতে করতে রাতের খাবারের সময়টাও পাই নি। গ্রুপের একজন মেমবারকে খাবার কিনে আনার জন্য পাঠানো হয়েছিল। হোটেলে বসে যে রিলাক্সে খাবো সেই সুযোগটাও মিলল না সেই রাতে। লোকজন যাতে এই দিকটায় ওঠতে না পারে সেজন্য বগির সকল লাইট অফ করে রেখেছিল বগির দায়িত্বে থাকা ওয়েটারগন। মনে হচ্ছিল যুদ্ধকালিন সময়ে কোন একটা গোপনীয় জায়গায় চুপচাপ বসে আছি আমরা কজন। আসতে আসতে আরও কিছু লোকজন ওঠতে শুরু করল। এরই মধ্যে রুটি ডাল ভাজির খাবারটা সেরে নিলাম। ট্রেনটি যখন চলতে শুরু করল ঘড়িতে তখন নয়টা বেজে তিরিশ। এই যখন অবস্হা তখন সারাদিনের বিরামহীন ভ্রমন আমাদের সবাইকে নিয়ে গেল এক ক্লান্তির রাজ্যে। গন্তব্য এবার শুধুই ঘরে ফেরার। আধো ঘুম আধো জাগো অবস্হায় অপেক্ষা করছিলাম কখন ফিরবো ঘরে। মাঝে মাঝে সঙ্গে থাকা গামছাটা দিয়ে মুখটা ঢেকে কিছুক্ষন ঘুমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। সামনের আসনে বসে থাকা কলেজ পড়ুয়া দুই জোড়া কপোত কপোতীর লীলাখেলা চলতে থাকে পুরোটা সময় জুড়েই। নিজের কাছেই লজ্জা লাগতেছিল তাদের এহেন কর্মকান্ড দেখে। ব্যাগ থেকে পাতলা জ্যাকেটটা বের করা দরকার। হালকা শীতল বাতাস বইতেছিল জানালা দিয়ে। ঘন অন্ধকারের জন্য বাহিরের দিকটা কিছুই বুঝা যাচ্ছিল না। কিছুক্ষন বাদে বাদেই মোবাইলটা বের করে সময় দেখচ্ছিলাম। আর ভাবছিলাম বাসায় রেখে আসা বাচ্চাটা হয়ত আমাকে খুঁজতে খুঁজতে নিরাশ ঘুমিয়ে পড়েছে। ওকে রেখে কোথাও ঘুরতে গেলে সারাদিনই মনটা পুড়ায় তার জন্য। কি আর করার, এভাবেই হয়ত আমাকে ঘুরে বেড়াতে হবে প্রতিটা ট্যুরে।

বিঃদ্রঃ একবার ভাবুন তো আপনি যদি এসে দেখেন একটা সুন্দর প্লেসে খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল পড়ে আছে, তাহলে জায়গাটা আপনার কাছে কেমন লাগবে। কাজেই যেখানে ঘুরতে যান না কেন, আশেপাশের পরিবেশটা নষ্ট করে দিয়ে আসবেন না দয়া করে।

লেখকঃ Monzur Khan


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!