চর কুকরি মুকরি ভোলা জেলায় অবস্থিত একটি দ্বীপ। একে অনেকেই সুন্দর শান্তির দ্বীপ বলে থাকেন। কারণ একসাথে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, বন্যপ্রাণী এবং সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো একটি জায়গা এই চর কুকরি মুকরি। প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এমন পর্যটকদের জন্য এটি অন্যতম সুন্দর জায়গা ।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের এই চরটি নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে সবার কাছে এখন পরিচিত। মূলত শীত ও বসন্তের সবুজ ও নির্মল হাওয়া উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন। তাই আপনিও এই অপরূপ চর কুকরি মুকরি ভ্রমণ করুন ।
তবে স্থানীয় পরিবহণ ব্যবস্থা তেমন উন্নত না হওয়ায় দর্শনার্থীরা যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়তে পারেন। আশার কথা যে স্থানীয় প্রশাসন এখন এ দ্বীপের সৌন্দর্য রক্ষায় যথেষ্ট সতর্ক এবং এ জায়গাটিকে পর্যটন খাতে সম্ভাবনাময় করে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
চর কুকরি মুকরি কোথায় অবস্থিত ?
বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায় চর কুকরি মুকরি অবস্থিত। ভোলা নিজেই বৃহত্তম দ্বীপ জেলা।আর এ জেলায় কুকরি মুকরির মতো চরের অবস্থান জেলাটির খ্যাতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভোলা জেলার সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত এ চর। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম কুকরি মুকরি। এই ইউনিয়নেই কুকরি মুকরি চরের অবস্থান। ভোলা জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে আছে এ চরটি। আর রাজধানী ঢাকা হতে ২২৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থিত।
বঙ্গোপসাগর লাগোয়া মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় এ চর জেগে উঠেছে। মূলত মেঘনার রুক্ষ পানিতে পলি জমে জমে এই চর বা দ্বীপের জন্ম। এই চরে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য অবস্থিত।
চর কুকরি মুকরির আয়তন কত ?
কুকরি মুকরি চর আয়তনে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৯.৫ কিলোমিটার চওড়া। মোট এলাকা ২৫ বর্গ কিলোমিটার । এখানকার জমি নিচু এবং উচ্চ জোয়ারে বিস্তৃত অংশ পানির নিচে থাকে। তীরের বেশিরভাগ অংশই সমতল। এই চরের বনভূমির পরিমাণ ৮২৪৯ হেক্টর এবং এর মধ্যে ২১৭ হেক্টর জমি বন্য প্রাণীর অভয়াশ্রম।বন বিভাগ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে কুকরি মুকরি চরে বর্তমানে প্রায় ৪,৮১০ হেক্টর জমিতে বসতি এবং কৃষি আবাদ রয়েছে।
চর কুকরি মুকরির নামকরণ কীভাবে হল ?
অনুমান করা হয় যে কুকরি মুকরি চরটি চার থেকে পাঁচশ বছর আগে জেগে উঠেছিল ।তখন জনমানবশূন্য ছিল এটি।কথিত আছে, এক সময় এই চরে শুধু কুকুর ও ইঁদুর ছিল। স্থানীয়দের কাছে ইঁদুর আবার মেকুর নামে পরিচিত।আর এ কারণেই চর কুকরি মুকরি নামকরণ হয়।
চর কুকরি মুকরির ইতিহাস
স্থানীয় লোকজনের মতে ১৯৩০ সালের দিকে ব্রিটিশ শাসনের সময় চর কুকরি মুকরিতে মানুষের বসতি শুরু হয়। ১৯৭০ সালে আঘাত হানা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ভোলা জেলার প্রায় সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে ভাসিয়ে দিয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পর ১৯৭৩/৭৪ সালে মানুষ আবার দ্বীপে এসে বসবাস, মাছ ধরা এবং চাষাবাদ শুরু করে। তাই বাংলাদেশ বন বিভাগ ভোলা জেলা রক্ষায় এই দ্বীপে ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনায়ন শুরু করে।
১৯৮৯ সালের ১৪ মে বন বিভাগকে একটি (সর্বশেষ সংশোধিত) বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভোলায় কমপক্ষে ৩৬০,০০০ একর জমিতে ম্যানগ্রোভ বনায়নের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য লিখিত নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল।
এ সময় কুকরি মুকরি চরে শ্বাসমূলীয় গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন শুরু হলেও পরে ধীরে ধীরে সংযোজিত হয় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর প্রভৃতি গাছের চারা। এ ছাড়া পুরো এলাকায় প্রচুর কেওড়া গাছ দেখা যায়। বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা এই সমস্ত গাছ এবং আশেপাশের নারকেল গাছ, বাঁশ এবং বেতের বনের সমন্বয়ে এখানে একটি আকর্ষণীয় ম্যানগ্রোভ বন তৈরি করা হয়েছে।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
হেমন্তকাল,শীতকাল ও বসন্তকাল তথা ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অপরূপ চর কুকরি মুকরি ভ্রমণ করুন এবং এখানে ক্যাম্পিং করুন। কারণ উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় বর্ষায় চরটির বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যায়। তাছাড়া বৃষ্টি হলে এলাকাটিতে কাদামাটি থাকায় মজা থাকে না।তাই শুষ্ক আবহাওয়ায় আসলে মজা পাবেন।
চর কুকরি মুকরিতে দেখার কি কি আছে?
চর কুকরি মুকরি প্রকৃতির অকৃত্রিম সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ।এখানে দেখার আছে অনেক কিছু। বিশেষ করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অভয়ারণ্য, ম্যানগ্রোভ বন এবং সমুদ্র সৈকত।এই চরের অভয়ারণ্য এবং এর বাইরে ৭৬টি পরিবারের অন্তর্গত ২৭৭ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত করা হয়েছে। এই প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ৯১টি গাছের প্রজাতি, ৩৩টি গুল্ম প্রজাতি, ১১৮টি ভেষজ এবং ৩৫টি লতা। গাছপ্রেমি ও উদ্ভিদবিশারদদের জন্য এটা উপযুক্ত জায়গা।কারণ এখানে গাছের সংখ্যা অনেক।
চর কুকরি মুকরির অভয়ারণ্যে যেসব প্রাণী দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, শিয়াল, বন মহিষ,গরু, বন-বিড়াল, বন মোরগ প্রভৃতি পাখি ও সরীসৃপ। এছাড়াও রয়েছে শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠঠোকরা, কোয়েল, গুইসাপ, বেজি, কচ্ছপ, কুকুর এবং বিভিন্ন ধরনের সাপ।
এখানকার অন্যতম আকর্ষণ অতিথি পাখির আগমনে চরগুলোর নতুন রূপ ধারণ।বিশেষজ্ঞদের মতে শীত মৌসুমে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি বাংলাদেশে আসে। যার সিংহভাগই আসে ভোলায় । তখন চর কুকরি মুকরি হয়ে ওঠে অতিথি পাখির অভয়ারণ্য।
চর কুকরি মুকরিতে আছে পাতিলার চর যেখানে অপরূপ নারিকেল বাগান দেখা যাবে।নারিকেল বাগান থেকে কুকরি মুকরির মুল ভূখন্ডে যেতে হলে বারকানিয়া নামে সরু একটি খাল পাড় হতে হবে।১০ টাকা ভাড়ায় খেয়া নৌকায় খাল পার হয়ে পাশে বনের ভেতরের ১৫/২০ মিনিটের রাস্তা পার হলে লোকালয় দেখা যায়। স্থানীয়রা এখানকার বনের ভেতর তৈরি করেছে জিগজ্যাক ওয়াক ওয়ে,রোপ ওয়ে,স্পাইডার নেট,ঝুলন্ত ব্রীজ।৩০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে এখানে একবার ঢুঁ মেরে আসবেন।
চর কুকরি মুকরির উপর দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে। খালটিকে বলা হয় ভাড়ানি খাল। এই খালটি আবার মেঘনা নদী হয়ে বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত হয়েছে । দর্শনীয় এ খালটি থেকে একটু এগোলেই ঢালের চর এবং তারপর বঙ্গোপসাগর।
তবে চর কুকরি মুকরির প্রধান আকর্ষণ তারুয়া সাগরপাড়। এখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্যও দেখা যায় । এ সৈকতটি দেখলে কক্সবাজার বা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের আমেজ পাওয়া যাবে । এছাড়া এখানকার সৈকতটিও বেশ পরিচ্ছন্ন ও নির্জন।
চরের মানুষের প্রধান পেশা মাছ ধরা ও কৃষিকাজ।এখানে ঘুরতে আসলে চরের বাসিন্দাদের সাথে সময় কাটানো,তাদের সাথে ট্রলারে বসে খাওয়া, ভ্রমণে তাদের গাইড হিসেবে নিলে আপনার সময় আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।
চর কুকরি মুকরিতে যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে অপরূপ চর কুকরি মুকরি ভ্রমণে যাওয়ার দুটি উপায় আছে। একটি সড়ক পথ অন্যটি নৌপথ।ঢাকা থেকে সড়ক পথে যেতে হলে গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারে যেতে হবে। সড়ক পথেও দুটি পথ রয়েছে। একটি হলো বরিশাল পেরিয়ে ভোলা যাওয়া এবং অন্যটি হলো লক্ষ্মীপুর হয়ে যাওয়া।ভোলায় গিয়ে সেখান থেকে স্থানীয় পরিবহনের মাধ্যমে চরে পৌঁছান যাবে।
ঢাকা থেকে চর কুকরি মুকরি যাওয়ার সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় আরেকটি উপায় হল ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ভোলার বেতুয়া পর্যন্ত লঞ্চে চড়া। সদরঘাটের ৬ নং পন্টুনে সন্ধ্যা ৬টা-৮.৩০ টার মধ্যে ভোলার চরফ্যাশনগামী বেশ কয়েকটি লঞ্চ যাতায়াত করে।এর মধ্যে রয়েছে তাশরীফ, কর্ণফুলী,ফারহান, টিপু লঞ্চ।এসব লঞ্চের কোনো একটিতে চড়ে ভোলা পৌঁছাতে পারবেন।আর সেখান থেকে আবার স্থানীয় বিভিন্ন সড়ক ও নৌ পরিবহনের মাধ্যমে চরে যেতে পারবেন।
ভোলাগামী লঞ্চে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ডেকে ২৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা।সিঙ্গেল কেবিন ১০০০ থেকে ১২০০ টাকার মত আর ডাবল কেবিন ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে। তবে ভাড়া সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।
লঞ্চ বেতুয়া ঘাটে থামার পরে ভোরের আলো স্পষ্ট হলে এবং লঞ্চের বাতি নেভালেই নামবেন,এর আগে নয়।এরপর এখান থেকে বাইক,অটো,বাস বা মাহিন্দ্রায় করে যাওয়া যাবে কচ্ছপিয়া ঘাটে।এ ঘাট পর্যন্ত ভাড়া জনপ্রতি বাইকে ২৫০ টাকা,অটোতে ১৫০ টাকা,বাসে ৫০ টাকা আর মাহিন্দ্রায় ৬০০/৭০০ টাকা নিবে।অবশ্য পরিবার নিয়ে এলেই মাহিন্দ্রায় যাওয়ার চিন্তা করতে পারেন নয়ত বাইক, অটো বা বাসই ভালো।অবশ্য বাসে গেলে অটোতে করে ৩০/৪০ টাকা ভাড়ায় ২০/২৫ মিনিট সময় নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে ।
কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে চর কুকরি মুকরি যাওয়ার উপায় হলো ট্রলার বা স্পিডবোট । ট্রলার ছাড়ার সময় কিন্তু দিনে দুইবার ১২ টা ও ৪ টা ।তাই সময়মত না গেলে যেতে পারবেন না।ট্রলারে ভাড়া লাগবে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা আর স্পিডবোটে লাগবে ২০০ টাকার মতন।চর কুকরি মুকরি ঘাটে নেমে বাইকে ৬০ টাকা বা অটোতে ২০ টাকা ভাড়ায় স্থানীয় বাজার বা রিসোর্টে যাওয়া যায়।
এছাড়া চর কুকরি মুকরির অভয়ারণ্যসহ বিভিন্ন জায়গা,তারুয়া সৈকত,নারিকেল বাগান, চর পাতিলা,ঢালচর প্রভৃতি স্থানে যেতে হলে নৌপথ ও হাঁটার পথ আছে।এসব জায়গায়ও ভাড়া বা প্রবেশ ফি ৫০ টাকার বেশি হয় না।
থাকার জায়গা কোথায় ?
চর কুকরি মুকরিতে থাকার জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যাবে না তবে সম্প্রতি বেশ কিছু থাকার ভালো জায়গা তৈরি হয়েছে। রেস্ট হাউজ ও হোটেল আছে কয়েকটি।সেখানেও রাতে থাকার বন্দোবস্ত আছে। বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে “কোস্টাল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার” রেস্ট হাউজ। তবে চরের আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে তাবু টানিয়ে ক্যাম্পিং করতে পারেন। সাথে করে এসব জিনিস নিয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো তবে চরেও ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা আছে।
এই রেস্ট হাউজের পাশে ছোট একটি ব্যক্তিগত মালিকানার হোটেল আছে।আর স্থানীয়দের পেইং গেস্ট হয়ে রুম ভাড়া করে থাকার ব্যবস্থা আছে।অবশ্য এখানে আসার আগে এখানকার কাউকে জানিয়ে রাখলে ভালো হয়।চর কুকরি মুকরিতে যেতে ও থাকতে হলে যোগাযোগ করুন :
01739908013: Rest house, হানিফ ভাই
01790042971: দুলাল, বাইক সার্ভিস
01718425771: রেস্ট হাউজের পাশে হোটেল, আবদুর রহিম
(খেয়াঘাট পেইং গেস্ট হাউজ)
01774689318: হোসনে আরা
01779043777: শারমিন আক্তার
খাওয়ার ব্যবস্থা
সত্যিকার অর্থে অপরূপ চর কুকরি মুকরি ভ্রমণ করতে চাইলেও হোটেল বা রিসোর্টে থাকার বা খাওয়ার জন্য সহজ জায়গা নয়। বরং এটি বন, সৈকত তথা প্রকৃতিকে উপভোগ করার এবং নির্জনতার সাথে নিজেকে অন্বেষণ করার একটি জায়গা। সুতরাং থাকা বা খাওয়ার যেমন ব্যবস্থাই এখানে আছে তাতেই মানিয়ে নিতে হবে। হতে পারে রান্না করতে হবে বা অন্যদের সাহায্য করতে হবে।
যাত্রার শুরুতে ঢাকা থেকে লঞ্চে উঠে রাতের খাবার লঞ্চেই খেতে পারেন । খাবারের মান মোটামুটি ভালো।দাম জেনে খাবার কিনুন।এরপর সকালে ঘাট থেকে নেমে চরফ্যাশন বাজারে কোন খাবার হোটেলে সকালের নাশতা করতে পারেন। চর কুকরি মুকরি যাওয়ার সময় সাথে করে পানি ও শুকনো খাবার নিয়ে গেলে ভালো হয়।চরের বাজারেও খাবারের হোটেল আছে।
এছাড়া রেস্ট হাউজ,হোটেল বা বাংলোতে ভালো মানের খাবার পাওয়া যাবে।খাবার অর্ডার করার সময় দাম জিজ্ঞাসা করুন। বেশিরভাগই বাংলাদেশী খাবার পরিবেশন করে। তাই খাবার সম্পর্কে প্রত্যাশা বেশি হওয়া উচিত নয়। এখানে খাওয়ার আরেকটা উপায় আছে।তা হলো এখানকার স্থানীয়দের বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হলে তাদের সাথে খাওয়া যাবে।
আর নদীতে পারাপারের সময় ট্রলারে উঠলে যিনি এটা চালান তার সাথে খাবার খাওয়া।যদিও এটা একটু অনিশ্চিত তবুও চেষ্টা করলে তাজা খাবার খেতে পারবেন।আর ক্যাম্পিং করলে নিজেরা ভাত,বারবিকিউ করে খাওয়া যাবে।
চর কুকরি মুকরি ওয়াচ টাওয়ারের পাশে গ্রীন এরেনা ভিলেজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ঘোরাঘুরির ফাকে খেয়ে নিতে পারেন কারণ এখানেও ভালো মানের খাবার পাবেন।তবে অর্ডার দেওয়ার পর ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে খাবার পেতে।এছাড়া সুন্দর একটি কফি শপ বা টি হাউজ আছে এখানে।যেখানে চা,কফি,কোমল পানীয়,স্ন্যাকস পাবেন।
ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
হেমন্তকাল,শীতকাল ও বসন্তকাল তথা ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত অপরূপ চর কুকরি মুকরি ভ্রমণ করুন এবং এখানে ক্যাম্পিং করুন। কারণ উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় বর্ষায় চরটির বেশির ভাগ অংশ তলিয়ে যায়। তাছাড়া বৃষ্টি হলে এলাকাটিতে কাদামাটি থাকায় মজা থাকে না।তাই শুষ্ক আবহাওয়ায় আসলে মজা পাবেন।
ভ্রমণ টিপস
অপরূপ চর কুকরি মুকরি ভ্রমণ করুন আনন্দের সাথে তবে সেইসাথে কিছু ভ্রমণ টিপস ফলো করুন:
এখানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা মানে সোলার প্যানেল ও জেনারেটর। তাই মোবাইল ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রের ব্যবহার বেশি করা যাবে না। সাথে পাওয়ার ব্যাংক রাখতে হবে চার্জের জন্য।
দ্বীপটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আছে এখনও তাই
প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন বা অন্য কোন ময়লা কোথাও ফেলবেন না। উপযুক্ত জায়গায় ফেলতে রাখুন।
এটি মূল ভূখণ্ড থেকে একটি বিচ্ছিন্ন জায়গা। তাই প্রয়োজনীয় কাপড়, ওষুধ, শুকনো খাবার সঙ্গে রাখুন।
পাখি বা বন্য প্রাণীদের বিরক্ত করবেন না। এটা তাদের বাড়ি, আপনি অতিথি। তাই এদের থেকে দূরে থাকুন।
স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করুন।
ক্যাম্পিং এর জন্য বন এড়িয়ে চলুন।রাতে একা নড়াচড়া করবেন না।
এ চরে অনেক দূর হেঁটে যেতে হবে। সুতরাং যাদের হাঁটার অভ্যাস নেই তারা দয়া করে এই জায়গাটি এড়িয়ে চলুন।
শেয়ালের আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য, তাঁবুর কাছে ক্যাম্প ফায়ার করুন। বর্ষায় সাপের হাত থেকে নিরাপদ থাকতে কার্বলিক অ্যাসিড রাখুন।
রবি বা গ্রামীণফোনের সিম রাখুন। কারণ অন্য মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না।