জুম রেস্তুরা

জুম রেস্তুরা
শেয়ার করুন সবার সাথে

জুম রেস্তুরা কাপ্তাই

পত্র পল্লবে ঢাকা আর বৈচিত্র্যময় প্রাণী জগত ঘেরা লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা শীতল জলের কর্ণফুলীর নদী তীরে তৈরি করা এই জুম রেস্তোরাঁটিতে প্রবেশ করলেই আপনি বিমোহিত হয়ে যাবেন। আর কেনই বা নয়—সৌন্দর্য মণ্ডিত প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং পরিচ্ছন্ন এই পিকনিক স্পটটি বর্তমানে কাপ্তাই এর অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পর্যটন কেন্দ্রে আপনি যখন প্রবেশ করবেন, তখন আদতে আপনার আর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না। কেননা পুরো স্পটটি কাপ্তাই এর বর্ডার গার্ড দ্বারা পরিচালিত। কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে চমৎকার একটি সময় কাটিয়ে যেতে পারবেন এখান থেকে।

কি কি আছে এই রেস্তোরাঁতে

উন্নত মানের খাবারের জন্য আপনাকে আবার রাঙামাটি চলে যেতে হবে না এখন থেকে, কেননা এখানেই আপনি পাবেন বেশ সুলভ মূল্যে সুস্বাদু খাবার। কাপ্তাই লেকের বিভিন্ন ধরণের তাজা মাছ, মুরগী, সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি ভর্তা ভাজি ও অন্যান্য খাবার এখানে আপনি পাবেন।

এতক্ষণ তো শুনলেন দুপুরের খাবারের বর্ণনা, এখানেই থেমে নেই এই রেস্তোরাঁর যত আয়োজন। বিকেলের নাস্তার মধ্যে নান-গ্রিল, স্যান্ডুয়েচ, চটপটি-ফুচকা, চিকেন ফ্রাই, চমুসা সহ নানা ধরণের মুখরোচক খাবার। এত সুস্বাদু ও নানা পদের খাবার দেখে আপনি রীতিমত দ্বিধায় পরে যাবেন যে কোন খাবারটি আপনি এখন খাবেন। আর দামের দিক থেকেও খুব বেশি আহামরি দাম এখানে নয় বরং শহরের অন্যান্য রেস্তোরাঁর মতই সুলভ মূল্যে আপনি এখানে যাবতীয় খাবার খেতে পারবেন।



ভোজন রসিকদের প্রথমেই একটু স্বস্তির পরশ দিয়ে এখন আসুন জেনে নেই ভ্রমণ পিয়াসু মনের জন্য এখানে কি ধরণের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানকার নানা ধরণের আয়োজনের সম্পর্কে কিছু বলার আগেই রোমাঞ্চ ও এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য সুখবর হল আপনি এখানে কায়াকিং করতে পারবেন। প্রতি ঘণ্টা মাত্র ২৫০ টাকা দিয়ে আপনি এই কায়াকিং এ অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে আপনি যদি স্টুডেন্ট হন এবং সাথে স্টুডেন্ট আইডি থাকে, তাহলে আপনার জন্য ৫০ টাকা ডিসকাউন্ট রয়েছে এখানে।

এছাড়া পরিবার পরিজন নিয়ে চাইলে নৌ ভ্রমণে বের হয়ে চারপাশের পাহাড় ও লেকের পাশ ঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে করতে সময়টা বেশ উপভোগ করতে পারবেন।

আপনি যদি কোন শহর থেকে আসেন, আর শহুরে ইট পাথরের ছায়ায় হাঁসফাঁস অবস্থায় থাকেন, তাহলে একটু খালি খোলা বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এই জায়গার বিকল্প খুব কমই আছে। ছোটদের জন্যও এখানে ট্রেন, দোলনা এবং চরকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

আপনি চাইলে এখানে রাত্রি যাপন করতে পারেন। রাতে পাহাড় ঘেরা এই জায়গাটির পরিবেশ একদমই অন্যরকম হয়ে উঠে। এই চমৎকার যায়গায় থাকার জন্য এখানে ছোট ছোট কটেজের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া বোট রাইড, গাছের উপর নির্মিত সুন্দর ট্রি-হাউজ-মাচা, ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে এখানকার চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরো চমৎকার ভাবে উপভোগ করতে পারবেন।



এখানে যে তিনটি কটেজ রয়েছে সেগুলোর ভাড়া যথাক্রমে ১০০০, ১৫০০ এবং ২০০০ টাকা। সুতরাং বুঝতেই পারছেন খুব অল্প দামের মধ্যেই এখানে এত সুন্দর পরিবেশে থাকার ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে এই জুম পর্যটন ও পিকনিক স্পটের কারণে।

এই রেস্তুরাটির ভিডিও দেখুনঃ জুম রেস্তুরা

যাবেন কীভাবে

ঢাকা, চট্টগ্রাম অথবা দেশের অন্য কোন জায়গা থেকে আপনি যদি জুম পর্যটন পিকনিক স্পটে চলে যেতে চান তাহলে সরাসরি যাওয়ার জন্য বাসই হল সেরা। ঢাকা থেকে মাত্র ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকার মত ভাড়া গুনেই আপনি সরাসরি কাপ্তাই চলে যেতে পারবেন।

তবে জুম পর্যটন স্পটে যদি আপনি নামতে চান তাহলে বাস সুপারভাইজারকে সেটা জানিয়ে দিন। কাপ্তাই থেকে ২০ মিনিট দূরত্ব আগেই আপনাকে জুম রেস্তোরাঁয় নামিয়ে দেয়া হবে। বিজিবি পরিচালিত এই জুম পিকনিক স্পটে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে টিকেট কেটে নিতে হবে। তবে টিকেটের কথা শুনেই উচ্চ মূল্যের শঙ্কায় নড়েচড়ে বসার প্রয়োজন নেই। মাত্র ২০ টাকার টিকেট কেটেই আপনি প্রবেশ করতে পারবে মনোরম সৌন্দর্য ঘেরা এই পিকনিক স্পটে।



কাপ্তাই আসার জন্য বেশ কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। এর মধ্যে এস-আলম, সৌদিয়া ইত্যাদি অন্যতম। তবে আপনি যদি ভ্রমণের মধ্যে রেল ভ্রমণের আনন্দও যোগ করতে চান তাহলে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম চলে আসতে পারেন।

চট্টগ্রাম বদ্দার হাট বাস স্টপ থেকে কিছুক্ষণ পরপরই কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্য বিভিন্ন বাস পেয়ে যাবেন। সিরিয়াল যে বাস আপনি আগে পাবেন, সেটাতেই উঠে যেতে পারেন কোন সমস্যা নেই। তবে ঢাকা থেকে কাপ্তাই এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রেল ভ্রমণ সূচি এবং খরচের যাবতীয় বিস্তারিত জানতে আমাদের কাপ্তাই লেক ভ্রমণ এর আর্টিকেলটি পড়ে দেখুন।

আশেপাশে আর কি কি দেখার রয়েছে

জুম রেস্তোরাঁর আশেপাশে দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বলতে গেলেই প্রথমে কাপ্তাই লেক সম্পর্কে বলতে হয়। পাহাড়ের পাদদেশে কৃত্রিম এই লেক ভ্রমণের স্মৃতি আপনার জীবনের অবিস্মরণীয় অংশ হয়ে থেকে যাবে।

এছাড়া আশেপাশে শেখ রাসেল এভিরিয়া ইকো পার্কটিও ঘুরে আসতে পারেন। এখানকার প্রবেশ টিকেট মাত্র ২৩ টাকা। আর এখানে চমৎকার ক্যাবল কার রাইড করা যায়, তবে এরজন্য আপনাকে জনপ্রতি ২৩০ টাকা করে গুনতে হবে।

আবার কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে সি,এন,জিতে করে জনপ্রতি পঞ্চাশ টাকা খরচ করে পাশের লিচু বাগান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এখানকার পরিবেশ এবং লিচুর মৌ মৌ আমেজ খুব ভালো লাগবে বলেই আমার বিশ্বাস।

আর ঝুলন্ত ব্রিজ, শুভলং ঝর্না, কাপ্তাই বাধ, নেভি একাডেমী ইত্যাদি জায়গার কথা আর বলার অবকাশ রাখে না। হাতে যদি কিছুটা সময় নিয়ে ঘুরতে বের হন তাহলে এই জায়গাগুলোর কোনটাই বাদ না দেয়ার অনুরোধ রইল। কেননা প্রত্যেকটি জায়গাই নিজস্ব স্বকীয়তা এবং গুনে অনন্য আর আপনার ভ্রমণ সফরের মধ্যে অনন্য আমেজ তৈরি করার ক্ষমতা রাখে।

ছবিটি তুলেছেনঃ Monzur Khan


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!