ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান

ঢাকার ১০টি দর্শনীয় স্থান
শেয়ার করুন সবার সাথে

রাজধানী বলেই প্রাচীন কাল থেকে ঢাকা ছিলো বাংলার বানিজ্যিক, সাংস্কৃতিক,অর্থনেতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মূল কেন্দ্র। এই জন্য ঢাকায় গড়ে উঠেছিল অসংখ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান। আর বর্তমান সময়েও ঢাকার সৌন্দর্য বর্ধন করতে গড়ে উঠেছে নানান জায়গা। আজ ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থান ও স্থাপনার কথা বলব যেখানে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন পরিবার নিয়ে।

আহসান মঞ্জিল

গোলাপি প্রাসাদ আহসান মঞ্জিল ঢাকার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম।এর অবস্থান ঢাকা জেলার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদর ঘাটের কাছে ইসলামপুরে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তখনকার জামালপুর পরগনার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ এখানে রংমহল প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে শেখ মতিউল্লাহর কাছ থেকে ফরাসি বণিকরা এ ভবনটি কিনে নিয়ে বানিজ্য কুঠি নির্মাণ করে।

পরবর্তীতে ফরাসিরা এদেশ থেকে চলে যাওয়ার সময় ১৮৩০ সালে খাজা আলীমুল্লাহ তাদের কাছ থেকে এটি কিনে নেন। ১৮৭২ সালে তার ছেলে নবাব আবদুল গনি নতুন করে প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। তার ছেলে খাজা আহসানউল্লাহর নামে ভবনের নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল।

পরবর্তীতে নবাবদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি কমে যাওয়ায় সরকার এ ভবনটিকে অধিগ্রহণ করে জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করে। ১৯৯২ সালে এই ভবনটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আহসান মঞ্জিলে প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিকের প্রবেশ ফি ২০ টাকা,১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১০টাকা,সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের ৩০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ৫০০ টাকা।আর প্রতিবন্ধীদের কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।

আহসান মঞ্জিল সপ্তাহের শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।আর শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিন বন্ধ ।

বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর

ফার্মগেট এলাকার বিজয় সরণীতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরটি ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম।এখানে স্বাধীনতার আগের ও পরের সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জামাদি দেখা যাবে । এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর জন্য ৩ টি নির্ধারিত গ্যালারিসহ ৬টি পৃথক গ্যালারী ও বঙ্গবন্ধু কর্নার রয়েছে।

এছাড়াও আছে 3D আর্ট গ্যালারিসহ মাল্টিপারপাস এক্সিবিশন গ্যালারি, ব্রিফিং রুম, স্যুভেনিওর শপ, ফাস্ট এইড কর্নার, মুক্তমঞ্চ, 3D সিনেমা হল, মাল্টিপারপাস হল, সেমিনার হল, লাইব্রেরি, আর্কাইভ, ভাস্কর্য, মুর‍্যাল, ক্যাফেটরিয়া, আলোকোজ্জ্বল ঝর্ণা, বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত প্রান্তর,তোশাখানা জাদুঘর ইত্যাদি।

এই জাদুঘরে সকল প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশি নাগরিকের প্রবেশ ফি ১০০ টাকা।৫ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের প্রবেশ ফি নেই।
সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের জন্য ৩০০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিক ৫০০ টাকা।

সামরিক জাদুঘর বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার দুপুরের ২ ঘণ্টা বিরতিসহ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর বুধবার ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে ।

জাতীয় জাদুঘর

ঢাকার শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘরে পরিবার নিয়ে ঘুরে আসার মতো একটি জায়গা।

প্রায় ২০,০০০ বর্গমিটারের ৪ তলা ভবনটির প্রথম তলায় শুরুতেই আছে বাংলাদেশের মানচিত্র। আরও আছে গাছপালা,সুন্দরবন, উপজাতিদের জীবনধারা, খনিজ শিলা,প্রাচীন যুগের ভাস্কর্য ও মুদ্রা। ২য় তলায় রয়েছে চীনামাটির হস্তশিল্প, অস্ত্র,বাদ্যযন্ত্র,কুটিরশিল্প, পাণ্ডুলিপি ও আরও নানাবিধ ঐতিহ্য।৩য় তলায় রয়েছে বিখ্যাত ব্যাক্তিদের প্রতিকৃতি, চিত্রকর্ম ও বিশ্বের নানান নিদর্শন।

এখানে বাংলাদেশি সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের প্রবেশ ফি ২০ টাকা,১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ১০ টাকা,সার্কভুক্ত দেশের নাগরিকদের ২০ টাকা এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ১০০ টাকা।

জাতীয় জাদুঘর খোলার দিন শুক্রবার থেকে বুধবার।সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আর বন্ধের দিন বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিন।

হাতিরঝিল

ঢাকা শহরের শ্রীবৃদ্ধি,বন্যা প্রতিরোধ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, যানজট নিরসন ইত্যাদি নানামুখী কল্যাণেই আধুনিক হাতিরঝিল গড়ে তোলা হয়েছে।এই এলাকাটি কারওয়ান বাজারের সোনারগাঁ হোটেল থেকে বনশ্রী পর্যন্ত বিস্তৃত।

হাতিরঝিলের মূল আকর্ষণ সেতু,শ্বেতরঙা সিঁড়ি,লেকের টলটলে পানিতে ওয়াটার বাস ও ওয়াটার ট্যাক্সি।এছাড়া আছে মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেন। সন্ধ্যার পরে রঙিন আলো ও সুরের সাথে সাথে যখন ফোয়ারাটি ছাড়া হয় তখন সত্যিই অসম্ভব সুন্দর লাগে।আর রাতে সেতু,সিঁড়িগুলো রঙিন আলোতে আলোকিত হওয়ায় দূর থেকেই চোখে পড়ে।হাতিরঝিলের এরকম দৃশ্য ঢাকাকে আরও আকর্ষণীয় করেছে।

হাতিরঝিল এলাকার চক্রাকার বাস সার্ভিসে, লেকের ওয়াটার বাস ও ট্যাক্সিতে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা ভাড়ায় ঘোরা যাবে।

লালবাগ কেল্লা

অসমাপ্ত এই মুঘল নিদর্শন লালবাগ কেল্লা পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকায় অবস্থিত। ১৬৭৮ সালে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র বাংলার সুবাদার আজম শাহের অসমাপ্ত নির্মাণ এই কেল্লা। এরপর সুবাদার শায়েস্তা খাঁ এই কেল্লাটি পুনর্নির্মাণ শুরু করলেও এটি সম্পুর্ণ করেন নি।১৮৪৪ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের সমাপ্তির পর কেল্লার এলাকাটির নাম ” আওরঙ্গবাদ” থেকে লালবাগ হয়।আর লালবাগ থেকে কেল্লাটিও লালবাগ এলাকা নামে পরিচিতি হয়।তবে এই কেল্লাটি বর্তমানে জাদুঘর ও ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

লালবাগ কেল্লায় দেখার আছে ফুলে ঘেরা বাগান,শায়েস্তা খানের কন্যা পরীবিবির ব্যয়বহুল সমাধি, আরও দুটি সমাধি,কয়েকটি ফোয়ারা, পাহাড়ি উচু টিলা, সুরঙ্গ পথ, দূর্গ প্রাচীরের পলকাটা তোপমঞ্চ, ঘাট বাঁধানো বর্গাকৃতি পুকুর, তিন গম্বুজ বিশিষ্ট লালবাগ কেল্লা মসজিদ। রয়েছে সেই সময়ে বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহৃত শায়েস্তা খানের বাসভবনের পাশে একটি কামান/তোপ ।

লালবাগ কেল্লায় প্রবেশ ফি সবার জন্য ১০ টাকা।শিশুদের প্রবেশ ফি নেই আর বিদেশিদের জন্য প্রবেশ ফি ১০০ টাকা।প্রবেশের সময়সূচী সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত।
তবে শুক্রবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। লালবাগ কেল্লা
বন্ধের দিন রবিবার ও সরকারি ছুটির দিন,সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ।

মিরপুর চিড়িয়াখানা

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত।মিরপুর ১ এর সনি সিনেমা হল গোল চত্ত্বর থেকে উত্তর দিকগামী রাস্তাটি সরাসরি চিড়িয়াখানার দিকে গিয়েছে। এখানে দেখা যাবে ১৩৮ প্রজাতির ২ হাজার ৬২২টি প্রাণী ও পাখি।দেশ বিদেশের নানারকম প্রাণী রয়েছে এখানে।
বিলুপ্ত প্রায় পশু পাখিরও দেখা মিলবে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার,সিংহ,জিরাফ, নীলগাই,গণ্ডার, উট,নেকড়ে,কুমির,অজগর, পাণ্ডা,ক্যাঙ্গারু,ময়ূর,কাকাতুয়া,বক,শকুন,চিল ,সারসসহ অসংখ্য পশু পাখি দেখা ও এদের নাম জানা যাবে এই চিড়িয়াখানায়। আছে বিশাল ২ টি লেক এবং স্টাফিং করা পশুপাখির জাদুঘর।

চিড়িয়াখানায় বড়দের প্রবেশ ফি ৫০ টাকা।২ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোনও ফি নেই।আর জু মিউজিয়ামে প্রবেশ ফি ১০ টাকা।প্রবেশের সময় সকাল ৯.০০ থেকে বিকেল ৬.০০ পর্যন্ত।

সাধারণত রবিবার বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায বন্ধ থাকে । তবে সেদিন সরকারি ছুটির দিন হলে খোলা থাকে।

বোটানিক্যাল গার্ডেন

ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় উদ্যান বা বোটানিক্যাল গার্ডেন অন্যতম প্রাকৃতিক উদ্যান।এটি মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই অবস্থিত।এখানে নানান প্রজাতির দেশি বিদেশি গাছপালার সমাহার রয়েছে। আছে ৮০০ জাতের ফুল,ফল,বনজ ও ঔষধি গাছ।দেখার আছে গোলাপ বাগান,পদ্ম পুকুর,বাঁশ বাগান,ক্যাকটাস হাউজ,পদ্ম নীড়,শাপলা পুকুর,ওয়াচ টাওয়ার, গ্রীন হাউজ,নার্সারি, আঁকাবাঁকা ছোট লেক ও এর উপর সুন্দর ব্রীজ।

বোটানিক্যাল গার্ডেনে বড়দের প্রবেশ ফি ২০ টাকা এবং ছোটদের প্রবেশ ফি ১০ টাকা।প্রবেশের সময় সকাল ৯.০০ থেকে বিকেল ৫.০০ পর্যন্ত।

সংসদ ভবন

ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সংসদ ভবন হলো অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন ।এটি রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত।

স্থপতি লুই আইকানের নকশায় করা সংসদ ভবনটির জ্যামিতিক নকশা বাহির থেকে সবার নজর কাড়ে।পাশে রয়েছে কৃত্রিম জলাশয় ও উন্মুক্ত মাঠ যা ভবন টিকে আরও আকর্ষণীয় করেছে।সংসদ ভবনের অভ্যন্তরের সৌন্দর্য সবার জন্য উন্মুক্ত না হওয়ায় সবাই দেখতে পাবে না।
সংসদ ভবনের বহিরাংশে যেতে প্রবেশ ফি নেই। তবে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যাবে।

চন্দ্রিমা উদ্যান

ঢাকার শেরেবাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানে দেখার মতো সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি।এই সমাধিটির দক্ষিণ পাশে আছে ক্রিসেন্ট লেক।লেকটির দক্ষিণ পাশে চমৎকার সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে দর্শনার্থীদের বসার জন্য।

লেকের উপর দিয়ে তৈরি হয়েছে ঝুলন্ত সেতু।সেতুর সাথে লাইট সংযুক্ত আছে যা রাতে জ্বলে। দুই পাশে আছে দুটি ফোয়ারা। সন্ধ্যার পরে সেতুর লাইটের আলোয় ফোয়ারাগুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।উদ্যানে আরও রয়েছে দেশ বিদেশি গাছের বাগান,মসজিদ, মেমোরিয়াল কমপ্লেক্স, পুকুর,খোলা চত্বর,শরীর চর্চা উদ্যান।

রমনা পার্ক

রাজধানী ঢাকার রমনা এলাকায় সুবিশাল মনোরম প্রাকৃতিক উদ্যান হলো রমনা পার্ক। শাহবাগের শিশুপার্ক থেকে রাস্তা অতিক্রম করে এগোলেই রমনা পার্ক।এখানে দেখার আছে এক নামে পরিচিত রমনা বটমূল যেখানে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় ।

পার্কে আছে নানা প্রজাতির ফুল,ফলের গাছ,ঔষধি বৃক্ষের সমাহার,পাশাপাশি আছে মনোরম লেক। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুন্দর লেক ও গাছপালাঘেরা উদ্যানে বিকেলের সময় কাটাতে যেতে পারেন রমনা পার্কে। এখানে প্রবেশের সময়সূচি ভোর ৪ টা থেকে রাত ১০ টা।

ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থানে যেতে হলে ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকেই যেতে পারেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কম খরচের পরিবহন হলো বাস।ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন বাসে করে এসব জায়গায় আসা যাবে। আর বাসে না চড়লে নিজস্ব পরিবহন,রিকশা,সিএনজি,উবার,মেট্রোরেল, বাইক ইত্যাদি যানবাহনে চড়েও যেতে পারেন।


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!