দেবতাখুম

দেবতাখুম
শেয়ার করুন সবার সাথে

দেবতাখুম  ভ্রমণ

পাহাড় ভালোবাসেন না ঝর্ণার শীতল ধারা পছন্দ করেন না এমন মানুষ হাতে গোনা। আপনি সেই হাতে গোনা দুর্লভ মানুষদের মত না হলে পাহাড় আপনাকে টানবেই। এমনই এক জায়গা বান্দরবানের রোয়াংছড়ির দেবতাখুম ( Debotakhum ) এলাকাটি। বিশাল পাহাড়ের মাঝখানে বয়ে চলা সংকীর্ণ পথের সুগভীর এই খুমের দৈর্ঘ্য প্রায় ছয়শত ফুট। এখানে খুমের মানে হচ্ছে ঝর্ণা বা স্রোতধারা।

দেবতাখুমে কি কি দেখতে পাবেন?

কোলাহলহীন নৈশব্দের এই পাহাড়তলীতে আপনি খুঁজে পাবেন অন্যরকম শান্তি। বড় বড় পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে স্রোতধারা যেটা ভেলা করে পার হতে হয়। বরফশীতল পানির এই বন্য এলাকা শীত এবং বর্ষায় দুই রূপে দেখতে পাওয়া যায়। এডভেঞ্চারপ্রিয় মানুষদের জন্য বর্ষাকালে ভেলায় কায়াকিং অথবা শীতে ট্র্যাকিং করতে আদর্শ স্থান এই খুম। আঁকাবাঁকা সরু গুহাপথে ঠিক মত সূর্যের আলো পরে না বলে আরো আদিভৌতিক লাগে ভেতরের হিমশীতল পরিবেশ।
এখানে আশে পাশে ছোট বড় পাঁচ থেকে ছয়টি ঝর্ণা দেখতে পাবেন। ঝর্ণার পাশেই বয়ে চলা ঝিরি ও পাইন্দু খাল। দেবতাখুমের দুই দিকে প্রায় ১০০ মিটার খাড়া সিপ্পি পাহাড়। পাহাড়ের খাঁজে জুমঘর কখনো ছোটখাটো পাথর দেখা যাবে। দেবতাখুম দূর্গম হলেও বেশ রহস্যময় আবেশ এনে দেয় পর্যটকদের।

যাবেন কিভাবে 

ঢাকা থেকে প্রথমে যেতে হবে বান্দরবান। এসি বা ননএসি দুই ধরণের বাস সার্ভিস চালু আছে। খরচ ৬০০ থেকে ৯৫০ টাকার ভেতরে। সেখান থেকে বাস, সিএনজি অথবা চাঁদের গাড়িতে করে রোয়াংছড়িতে যেতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা। রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী, যেখানে সিএনজিতে খরচ পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সেখান থেকে শীলবান্দা পাড়ায় যেয়ে আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে ভেলায় ভেসে যেতে পারেন এই মনোরম খুমে।

ভ্রমণ টিপস

যেহেতু অনেক দুর্গম এলাকা তাই ট্র্যাকিং করতে গেলে অথবা ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কিছু জিনিস সাথে রাখা প্রয়োজনীয়।

  • সাধারণ জুতায় ট্র্যাকিং করা অস্বস্তিকর এমনকি বিপদজনকও বটে। তাই, একজোড়া ট্র্যাকিং-সু নিবেন।
  • যাত্রাপথের জন্য হালকা খাবার-দাবার সঙ্গে রাখবেন, কারণ ঘুরে আসতে ৩/৪ ঘন্টা লাগতে পারে।
  • সুপেয় পানি নিতে ভুল করবেন না।
  • ফোন অপারেটরদের তেমন কোন নেটওয়ার্ক পাবেন না তাই সেই ধরনের মানসিক প্রস্তুতি রাখবেন।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে যাবেন, কারণ আর্মি ক্যাম্পে অনুমতি নিতে হবে।
  • রাতে থাকার প্ল্যান করে থাকলে সাথে তাবু নিয়ে যাওয়া যেতে পারে

সতর্কতা

  • দেবতাখুমের রাস্তা বেশ বিপদজনক। বর্ষাকালে প্রচন্ড পিচ্ছিল হয়ে যায় এখানকার পাহাড়ি এলাকা। সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা থাকা জরুরী। অনেক মশা থাকায় সাথে অডোমস ক্রিম নিয়ে যেতে পারেন।
  • পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় একজন গাইড সাথে রাখা জরুরী, এজন্য ৪০০-৫০০ টাকা খরচ হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে রেহাই পেতে পারেন। গাইড হিসেবে রুন্ময় লালের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন ০১৮৫৭২৭২০৯৫ এই নাম্বারে।

পরিশেষে

চমৎকার এসব অঞ্চল আমাদের দেশের গর্ব। ভ্রমণপ্রেমী মানুষদের জন্য স্বর্গ। আমাদের উচিত ভ্রমণের সময় আশেপাশের পরিবেশের সৌন্দর্য্য বজায় রাখা। স্থানীয়দের সাথে সুন্দর ব্যবহার করা এবং সর্বোপরি দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শোভা চোখ ভরে অনুভব করা।

ছবিঃ জয়দীপ চৌধুরী আকাশ


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!