পুঠিয়া রাজবাড়ী

Puthia Rajbari
শেয়ার করুন সবার সাথে

পুঠিয়া রাজবাড়ীর অবস্থান

রাজশাহী শহরের কাছেই অবস্থিত পুঠিয়া রাজবাড়ী।  শহর থেকে এর দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। তাই ১ ঘন্টারও কম সময়ে পৌঁছে যাওয়া যায় রাজবাড়ীতে। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়ক থেকে এ রাজবাড়ীর দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন হেমন্তকুমারী দেবী, ১৮৯৫ সালে।

পুঠিয়া রাজবাড়ীর ইতিহাস

পুঠিয়া রাজবংশ গোড়াপত্তন হয় ১৫৫৬-১৬০৫ সালে- মুঘল সম্রাট আকবর এর সময়। সে সময় এ অঞ্চলটি ছিলো ‘লস্করপুর’ পরগনার অধীনে। ১৫৭৬ সালে মানসিংহ (সম্রাট আকবরের সুবেদার) বাংলা দখল করার সময় লস্কর খানের (আফগান জায়গীরদার) সাথে যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে পুঠিয়া রাজবংশের বৎসাচার্য মানসিংহকে পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করায় লস্কর খান পরাজিত হন। এ জন্য বৎসাচার্যকে পুঠিয়া এলাকার জমিদারী দান করেন- মানসিংহ।

মৃত্যুর পূর্বে সকল সম্পত্তি স্ত্রী শরৎসুন্দরীর নামে দিয়ে যান- রাজা হরেন্দ্রনারায়নের পুত্র যোগেন্দ্রনারায়ণ।  কুমার যতীন্দ্রনারায়ণ ১৮৮০ সালে ঢাকা জেলার ভূবনমোহন রায়ের কন্যা হেমন্তকুমারী দেবীকে বিয়ে করেন। তিনি পুঠিয়ার বিরাট রাজপ্রাসাদটি নির্মাণকরে শাশুড়ী মহারানী শরৎসুন্দরী দেবীর শ্রদ্ধায় উৎসর্গ করেন।  হেমন্তকুমারী দেবী বহুসংখ্যক সৎকাজের জন্য লর্ড কার্জন কর্তৃক ১৯০১ সালে “রানী” এবং ১৯২০ সালে লর্ড আরউইনের আমলে “মহারানী” উপাধিতে ভূষিত হন। তার মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে সারাদেশে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গণজাগরণ ঘটলে ক্রমান্বয়ে পুঠিয়া রাজবংশেরও বিলোপ ঘটে।

পুঠিয়া রাজবাড়ির অবকাঠামো

নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে, রাজবাড়ীর চারপাশে পরিখা খনন করা হয়েছিলো সে সময়ে। পরিখাগুলোর নামও ছিলো ভিন্ন ভিন্ন। যেমন- শিব সরোবর বা শিবসাগর, মরাচৌকি, বেকিচৌকি, গোপালচৌকি ও গোবিন্দ সরোবর। পরিখা ছাড়াও রাজবাড়ীতে শ্যামসাগর নামে একটি বিশাল পুকুর রয়েছে।

রাজবাড়ীর প্রধান প্রবেশপথ সিংহ দরজার অবস্থান- রাজবাড়ীর উত্তরদিকে। চুন-সুড়কীর ও ছোট আকৃতির ইট দ্বারা নির্মিত এই রাজবাড়ীটি। নিবিড় পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়- রাজবাড়ীর ছাদ সমতল, ছাদে লোহার বীম, কাঠের বর্গা এবং টালি ব্যবহৃত হয়েছিলো।

রাজবাড়ীতে দেখার কি কি আছে 

পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশে পাশে ছড়িয়ে আছে- ৬ টি রাজদিঘী। প্রত্যেকটা দিঘীর আয়তন ছয় একর। পুঠিয়া রাজবাড়ীর আশেপাশেই রয়েছে বেশ অনেকগুলো পুরাকীর্তি ও ১৩টি মন্দির। পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ পাঁচআনি রাজবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী, চারআনি রাজবাড়ী। আর মন্দিরগুলোর মধ্যে- গোবিন্দ মন্দির, ছোট গোবিন্দ মন্দির, বড় আহ্নিক মন্দির, ছোট আহ্নিক মন্দির, বড় শিব মন্দির, ছোট শিব মন্দির, দোল মন্দির, জগন্নাথ/ রথ মন্দির ও গোপাল মন্দির বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের  সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে- এখানের ১৪ টি স্থাপনা।

বর্তমানে এটি লস্করপুর ডিগ্রী কলেজ (Loshkorpur Degree College) হিসেবে ব্যবহ্নত হচ্ছে।

পুঠিয়া রাজবাড়িতে যাওয়ার উপায়

রাজধানী ঢাকা শহর থেকে সড়ক, রেল এবং আকাশ পথে রাজশাহী যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

সড়ক পথে 

ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে সময় লাগবে ৬ ঘন্টা। বাস নামিয়ে দিবে রেলস্টেশনের মোড়ে। ওখান থেকেই, রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারেন হোটেলে। হোটেল থেকে ফ্রেস হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে যেতে পারেন- পুঠিয়া রাজবাড়ীতে। লোকাল বাসে উঠে নেমে যেতে হবে ‘পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড’ এ। সময় লাগবে ১ ঘন্টারও কম সময়। বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিট। হেঁটে কিংবা ভ্যানে করে চলে যেতে পারেন রাজবাড়ীতে।

নন-এসি বাসঃ

একতা, শ্যামলি, হানিফ, গ্রামীণ, ন্যাশনাল, চাঁপাই ট্রাভেলসসহ আরো বেশ কতগুলো বাস সার্ভিস রয়েছে ঢাকা থেকে রাজশাহী। ভাড়া পরবে ৬০০-৭২০ টাকা।

এসি বাসঃ

ঢাকার মহাকালী, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে গ্রীন লাইন, একতা এবং দেশ, গ্রামীণ ট্রাভেলসের এসি বাস রয়েছে। ইকোনমি ও বিজনেস ক্লাসের ভাড়া যথাক্রমে ৯৫০-১৪০০ টাকা।

রেলপথে 

ঢাকা থেকে রাজশাহী চলাচল করে ৪ টি ট্রেন। ট্রেনগুলো হলো-  ধুমকেতু (বৃহস্পতিবার বন্ধ), বনলতা (শুক্রবার বন্ধ) , সিল্ক সিটি (শনিবার বন্ধ), পদ্মা এক্সপ্রেস (মঙ্গল্বার বন্ধ)। ট্রেনগুলো ভোর ৬ টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রয়েছে। সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। নন-এসি ভাড়া পরবে প্রায় ৩৪০-৬৩০ টাকা। আর এসি ভাড়া পরবে ৬৮০-১০২০ টাকা।

আকাশ পথে

ঢাকা থেকে রাজশাহী বিমান চলাচল করে ৩ টি প্রতিষ্ঠানের। বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার ও ইউএস-বাংলা।

বিমান ভাড়া

বিমান বাংলাদেশঃ সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৫০০ টাকা, সর্বোচ্চ ভাড়া ৭৩০০ টাকা।
নভোএয়ারঃ সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৪৯৯ টাকা, সর্বোচ্চ ৭৯০০ টাকা।
ইউএস-বাংলাঃ সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৫০০ টাকা, সর্বোচ্চ ভাড়া ৮৪০০ টাকা।

রাজশাহী থেকে পুঠিয়া রাজবাড়ী

পুঠিয়া রাজাবাড়ীতে যেতে পারেন রাজশাহী থেকে কিংবা নাটোর থেকে। রাজশাহী থেকে দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। লোকাল বাসে উঠে নেমে যেতে হবে ‘পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড’ এ। বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিট। হেঁটে কিংবা ভ্যানে করে চলে যেতে পারেন রাজবাড়ীতে।

খাবেন কোথায়

পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে খেয়ে নিতে পারেন সকাল, দুপুর কিংবা বিকেলের নাস্তা।  তবে রাজশাহী যাচ্ছেন- আঞ্চলিক কিছু খাবার তো চেখে দেখা উচিত। তাই না? রাজশাহীর খাবারের তালিকায় প্রথমে বলা যেতে পারে কালাইয়ের রুটির কথা, বেগুনা ভর্তা ও মরিচের চাটনি দিয়ে খাওয়া এই রুটি রাজশাহীবাসির কাছে বেশ পরিচিত একটি খাবার। নগরীর উপশহর, আলুপট্রি, সাহেববাজারসহ অনেক জায়গাতেই এই রুটির সন্ধান মিলবে।

এছাড়াও জিরোপয়েন্টে এর মরিচ চা, হনুমানজি মন্দির সংলগ্ন ভাজাপোড়া, তালাইমারড়ির বট পরোটা, নিউমার্কেট এলাকায় নূরের হালিম, বেলদার পাড়ার ফুচকা ও শিক বার্গারও বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও খেতে পারেন-

  • জোড়াকালি মন্দির এর লুচি তরকারি
  • বিরেন রেস্তোরা’র কলিজা সিঙ্গাড়া, খাসির মাংসের চপ
  • কাটাখালির বিফ কালাভুনা
  • খান তেহেরী ঘর এর কাচ্চি বিরিয়ানি
  • রহমানিয়া হোটেল এর মোগলাই পরোটা সাথে শিক কাবাব
  • নিউ মার্কেট এর পুরি বার্গার আর ভাংচুর
  • রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ সিরাজী ভবনের সামনে শিক বার্গার

থাকবেন কোথায়

সত্যি কথা বলতে পুঠিয়ায় থাকার মতন ভালো মানের কোন হোটেল নেই। তবে জেলা পরিষদের অনুমতি নিতে পারলে থাকতে পারবেন- ডাকবাংলোতে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ফোন নাম্বার: 0721-776348।

সব থেকে ভালো হবে, রাজশাহী শহরে ফিরে আসলে। সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট। সেক্ষেত্রে থাকতে পারেনঃ
বাংলাদেশ পর্যটন মোটেল, রাজশাহী (০৭২১-৭৭৫২৩৭), হোটেল সুকন্যা ইন্টারন্যাশনাল (সমবায় সুপার মার্কেট। ০৭২১৭৭১৭১৮), ইসলামী আবাসিক হোটেল (লক্ষীপুর, রাজপাড়া। ০৭২১৮১১৩৭০), হোটেল প্রবাসী, (সাহেব বাজার, বোয়ালিয়া। ০৭২১৭৭২৭৭০), হোটেল মুন (বোয়ালিয়া। ০৭২১৭২২৬৬)

ভ্রমণ টিপস

  • সোজা রাজবাড়ীতে না যাওয়া ভালো। কারণ ঢাকার বাসগুলো রাজশাহী পৌছুতে ভোর হবে। তাই হোটেলে যেয়ে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করে রাজবাড়ীতে যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত হবে।
  • গ্রীষ্মকালে গরম এবং শীতে বেশ ঠান্ডা পরে রাজশাহীতে। তাই পোষাকের বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।ক্যাপ/হ্যাট, ছোট্ট ছাতা প্রয়োজন অনুযায়ী সঙ্গে নিন। রুমাল, ওয়েট টিস্যু খুবই কাজে লাগে, তাই সঙ্গে রাখুন।
  • হালকা শুঁকনো খাবার ও পানি রাখা অত্যন্ত জরুরি।
  • প্লাস্টিক বর্জ্য অবশ্যই সাথে করে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন।

ছবিঃ রিয়াজ রহমান


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!