ডিজিটাল বাংলাদেশে একমাত্র আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর মিলিটারি মিউজিয়াম খ্যাত দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জাদুঘর হল বিজয় সরণী তে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর। অনলাইন টিকেট কাটা থেকে, কিভাবে যাবেন, কোথায় খাবেন,প্রদর্শনী প্রবশের সময় সূচি সহ বিস্তারিত সকল তথ্য পাবেন এই লেখায়।
কোথায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর?
দেশের রাজধানী ঢাকায় তেজগাঁও এর বিজয় সরণিতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু সামরিক যাদুঘর।
প্রায় ১০ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে এই নন্দিত নিদর্শন।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর কখন উদ্বোধন হয়?
১৯৮৭ সালে ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠা করা হয় সেনা জাদুঘর। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে রাজধানীর বিজয় সরনীতে স্থায়ীভাবে স্থানতর করা হয় এবং নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে জাদুঘরটি তাদের পরিচালনা কার্যক্রম চলমান রাখে। সময়ের সাথে জাদুঘরটিকে বিশ্বমানের একটি প্রদশনী কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষে ২০০৯ সালে উদ্দ্যোগ গ্রহন করা হয়, এবং ২০১০ সালে তৎকালীন সেনা প্রধানের নেতৃত্বে তিন বাহিনীর সম্বনয়ে কমিটি গঠন করা হয়।
২০১৬ সালে কমিটির সুপারিশে জাদুঘর আধুনিকরন এবং বঙ্গবন্ধু নামে নামকরণ করে ২৭৬ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করেন। এবং ৬ জানুয়ারি ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের উদ্ভোদন করেন।
মিলিটারি মিউজিয়ামে দেখার মত কি কি আছে ?
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর একটি বাংলাদেশের একমাত্র শিক্ষা ও বিনোদন কেন্দ্র যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি মাধ্যমে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গৌরব, সংগ্রাম ও সাফল্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে রয়েছে প্রত্যেক বাহিনীর আলাদা আলাদা গ্যালারি। এছাড়া রয়েছে এক্সিবিশন হল, সিনেপ্লেক্স, মুক্ত মঞ্চ, সেমিনার হল, এবং মাল্টিপারপাস হল।
প্রবশের পরই নিচ তলায় রয়েছে ১৯৫২ থেকে শুরু ১৯৭১ অব্দি বাংলার ইতিহাস এর চমৎকার টাইম লাইন । মুক্তি যুদ্ধে ব্যাবহৃত গাড়ি, অস্ত্র এরকম অসংখ্য আর্কাইভ এখানে প্রদর্শন করা হয়েছে, ৩ ডি মডেল দিয়ে তৈরী করা আছে পলাশীর যুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক পটভূমি, এমন কি সেই যুদ্ধে ব্যাবহৃত কামান ও সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে গ্যালারিতে। রয়েছে মুজিব কর্নার যেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনবিত্ত মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন করা হয়।
এরপর ২ তলায় রয়েছে সেনা বাহিনীর গ্যালারি। যেখানে উঠে প্রথমেই দেখা যাবে যুদ্ধেরত সৈন্যদের একটি পতিকৃতি। এরপর রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যাবহৃত প্রথম কামান। আমাদের মুক্তি যুদ্ধে ব্যাবহৃত 303 রাইফেল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম, মুক্তি যুদ্ধে ব্যাবহৃত সেনা বাহিনীর এম্বুলেন্স, এমন অসংখ্য প্রতিকৃতি সংগ্রহ করা আছে এখানে।
৩য় তলায় রয়েছে বিমান বাহিনী গ্যালারি, যেখানে রয়েছে বিভিন্ন যুদ্ধ বিমান এর প্রতিকৃতি এবং বিমান ইঞ্জিন, বিভিন্ন মিসাইল এবং বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান দেয়াল।
এবং ৪র্থ তলায় রয়েছে জাতিসংঘ শান্তি মিসন গ্যালারি। শান্তি মিসনে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর গৌরবজ্জল সাফল্য উপস্থাপন করা হয়েছে এখানে।
সবগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্যালারি হল আন্ডারগ্রাউন্ড বেসমেন্টের নৌবাহিনী গ্যালারি। নৌবাহিনী গ্যালারি হল এই জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গ্যালারি। ৩৬০ ডিগ্রি প্যানরমিক ভিউ, যুদ্ধ জাহাজের স্যামুলেশন ককপিট। সমুদ্র তলের বৈচিত্র জীবন ধারা, সাবমেরিন সহ আরও অনেক কিছু।
এছাড়াও ভিতরে রয়েছে আরো একটি জাদু ঘর তোষখানা জাদুঘর যেখানে প্রধানমন্ত্রো ও রাষ্ট্রপতি প্রাপ্ত বিভিন্ন এওয়ার্ড এবং পুরষ্কার সু সজ্জিত আছে।বাইরেও রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য, বিধ্বস্ত ট্যাংক আরো অনেক কিছু যা নিজ চোখে না দেখে উপলব্ধি করা যাবে না।
সামরিক জাদুঘরে টিকিট মূল্য কত?
সর্বসাধারনের কথা মাথায় রেখে জাদুঘরে প্রবেশ মুল্য সাধ্যর মধ্যে রাখা হয়েছে ,
বাংলাদেশি সকল নাগরিকদের জন্য টিকেট মূল্য ১০০ টাকা
সার্কভুক্ত দেশ গুলোর দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য ৩০০ টাকা এবং বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটের মূল্য ৫০০ টাকা।
কিভাবে অনলাইনের মধ্যমে সামরিক জাদুঘরের টিকেট ক্রয় করতে হবে?
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে প্রবশের জন্য কোন অন স্পট টিকেট কাটার ব্যাবস্থা নেই। প্রবশের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে টিকেট ক্রয় করতে হবে।
টিকেট ক্রয় করার জন্য প্রথমে https://bangabandhumilitarymuseum.com/buy-ticket এই সাইটে গিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে, সাইটে আপনার মোবাইল নাম্বার এর মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে এবং আপনার নাম, এন আই ডি নাম্বার(বাধ্যতামূলক নয়) ছবি (বাধ্যতামূলক নয়) ও পাসওয়ার্ড প্রদান করে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে। এর পর টিকেট ক্রয় করার ফর্ম আসবে। যেখানে ৩ দিন অব্দি অগ্রীম টিকেট ক্রয় করা যায়, টিকেট ফর্মে কবে যাবেন সেই তারিখ কোন শিফটে যাবেন, এবং কয়জন এবং কোন দেশের এই সকল তথ্য প্রদান করতে হবে। এবং পেমেন্ট এর জন্য বিকাশ, রকেট, নগদ,অথবা ভিসা কার্ড এর মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে হবে,পেমেন্ট সম্পন্ন হলে আপনার প্রোফাইলে গিয়ে টিকেট ডাউনলোড করতে পারবেন।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর খোলার সময়সূচী
দুইটি শিফটে জাদুঘর প্রদর্শন কার্যক্রম চলমান থাকে সকালে এবং বিকেলে।
সকাল বেলার শিফট শুরু হয় সকাল ১০ টায় এবং শেষ দুপুর ১টায়।
বিকেল শিফট শুরু হয় দুপুর ২ টা এবং শেষ সন্ধ্যা ৬ টায় ( শুক্রবার ব্যাতিত )
রমজানের সময় এর সময়সূচী বদলে যায়। সকাল শিফটে সময় আগের মতই থাকে সকাল ১০ টা হতে ১ টা অব্দি, এবং বিকেল শিফট শুরু হয় দুপুর ২ টায় এবং শেষ হয় বিকেল ৪ টায়।
বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর কবে কবে বন্ধ থাকে?
সামরিক জাদুঘরের সাপ্তাহিক ছুটি বুধবার। এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে।
এবং রমজান মাসের ক্ষেত্রে শুক্রবার ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন জাদুঘর বন্ধ থাকে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার প্রানকেন্দ্র ফার্মগেট খুবই লোকালয়পূর্ন একটি এলাকা তাই ঢাকার যে কোন প্রান্ত থেকে এখানে আসার জন্য, বাস, সি এন,জি, গাড়ি অহরহ পাওয়া যায়। এছাড়াও নিজেদের গাড়ি কিংবা বাইক নিয়ে ও এখানে আসতে পারেন, তাদের নিজস্ব সুবিশাল পার্কিং ব্যাবস্থা রয়েছে।
গাবতলী /সাভার, থেকে ৮ নাম্বার, নিউ ভিস্ন রয়েছে যা ফার্মগেট হয়ে যাত্রাবাড়ী যায়। এই বাসে কিংবা মিরপুরের কিছু বাস রয়েছে যার মাধ্যমে ফার্মেগেট / খামার বাড়ি নেমে এরপর ৩-৫ মিনিট হেটে জাদুঘরে পৌছে যাবেন।
উত্তরা/এয়ারপোর্ট থেকে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভাল রুট হল মেট্রোরেল চড়ে আগারগাঁও নামবেন,এরপর আগারগাঁও থেকে রিক্সা কিংবা সি এন জি যোগে সরাসরি জাদুঘর আসতে পারবেন। এছাড়া বিকাশ এবং আরো কিছু বাস রয়েছে। আর যদি এয়ারপোর্ট হতে মহাখালি নামেন ফার্মগেট এর অনেক বাস পাবেন।
গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী অসংখ্য বাস রয়েছে যার মাধ্যমে খুব সহজেই যেতে পারবেন।
কোথায় খাবেন?
সামরিক জাদুঘর এর নিচতলায় রয়েছে একটি সুসজ্জিত রেস্টুরেন্ট যেখানে খাওয়া দাওয়া করার ভাল ব্যাবস্থা রয়েছে। এছাড়া বাইরে ও ফার্মগেট বিজয় সরনীতে অসংখ্য রেস্টুরেন্টে রয়েছে খাওয়া দাওয়ার জন্য।
আর সামরিক জাদুঘর এর থেকে কিছু দূরে রয়েছে নভথিয়েটার আগারগাঁও এ রয়েছে বিমান বাহিনী জাদুঘর, চন্দ্রিমা উদ্যান ।