জাতীয় জাদুঘর কোথায় অবস্থিত?
ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত ‘জাতীয় জাদুঘর’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রমনা পার্ক ও চারুকলা ইন্সটিটিউটের পাশেই এর অবস্থান।
এটি কে নির্মান করেন, স্থপতির নাম কি?
বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরের নকশাকার প্রখ্যাত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন।
জাদুঘরের অতীত ইতিহাস
‘বাংলায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন’- এই মর্মে প্রথম রিপোর্ট করে ‘দ্য ঢাকা নিউজ’ নামের একটি পত্রিকা। ক্যালেন্ডারে দিনটি ছিলো ১লা নভেম্বর, ১৮৫৬ সাল।
বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপুরণ হিসেবে ব্রিটিশ সরকার প্রতিষ্ঠা করে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর। শুরুতে এর নাম ছিলো- ঢাকা জাদুঘর।
১৯১৩ সালের ২০ মার্চে ২ হাজার রুপি তহবিল নিয়ে যাত্রা শুরু করে ঢাকা জাদুঘর। তখন বাংলার গভর্নর ছিলেন কারমাইকেল। তিনি সচিবালয়ের একটি কক্ষে জাদুঘরটির উদ্বোধন করেন ৭ আগস্ট, ১৯১৩ সালে। জাদুঘরটির প্রথম কিউরেটর ছিলেন নলিনীকান্ত ভট্টশালী।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, ‘জাতীয় যাদুঘর’ এর মর্যাদায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় ১৭ নভেম্বর, ১৯৮৩ সালে।
জাতীয় জাদুঘরে দেখার কি কি আছে?
প্রায় ৮৩ হাজারের বেশি নিদর্শন জাতীয় যাদুঘরের গ্যালারিগুলোতে প্রদর্শিত রয়েছে। যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়- বাংলাদেশের নৃতত্ত্ব, চারুকলা, ইতিহাস, প্রকৃতি, আধুনিক ও প্রাচীন বিশ্ব-সভ্যতা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
জাদুঘর প্রাঙ্গনে ঢুকতেই চোখে পড়বে নানা রঙের ফুলের সুন্দর বাগান, দৃষ্টিনন্দন নভেরা ভাস্কর্য। তবে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো- ভবনের প্রবেশদ্বারের দু’ পাশে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা অনেকগুলো ঐতিহাসিক কামান।
৪ তলা বিশিষ্ট দালানটিতে ৪৪ টি গ্যালারি রয়েছে- জাতীয় জাদুঘরে। ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন।
১ম তলায় সাজানো ‘বাংলাদেশ’ বিষয়ক সবকিছু দিয়ে। দেশের মানচিত্র, গাছপালা, প্রাণী, সুন্দরবন, উপজাতীদের জীবনধারা, খনিজ শিলা, ভাস্কর্য, মুদ্রা এবং প্রাচীন যুগের নানাবিধ ভাস্কর্যের এক অনন্য মিলনমেলা যেন নিচের তলাতেই।
২য় তলায় ঢুকতেই চোখে পরবে বাংলাদেশের একটি সুন্দর মানচিত্র। দেখবেন- দেশের গাছপালা, জীবজন্তু, উপজাতি জনজীবন, শিলা, খনিজ, সুন্দরবন ও অতীত সময়ের বিভিন্ন মুদ্রা ও স্থাপত্য শৈলি। দেশ নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাবেন এই তলাতেই।
৩য় তলায় আপনার জন্যে অপেক্ষা করবে নানা শিল্পকর্ম। আছে- বিভিন্ন আমলের অস্ত্রশস্ত্র, আঞ্চলিক পুতুল ও বাদ্যযন্ত্র, বস্ত্র ও পোশাক-পরিচ্ছদ, যত্নে আঁকা নকশী কাঁথা, পান্ডুলিপি ও আবহমান বাংলাদেশ।
৪র্থ তলায় (একদম উপরের তলায়) প্রদর্শিত হয় বৈশ্বিক মনীষীদের প্রতিকৃতি, বিশ্ব শিল্পকলা ও বিশ্ব সভ্যতা।
প্রায় ৯৪ হাজার সংগৃহীত নিদর্শনে সাজানো- জাতীয় জাদুঘরের প্রতিটি কোণা। প্রতিটি প্রদর্শনীর নিচে দেয়া আছে- নিদর্শনের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয়। সাথে কম্পিউটার-ডেটাবেইজ ও তৈরি করা হয়েছে। ৭৫০০ নিদর্শনের বর্ণনামুখর ক্যাটালগ ও প্রকাশ করেছে জাতীয় জাদুঘর।
জাদুঘরের বিশেষ কয়েকটি কক্ষে রয়েছে-
৩৭ নম্বর প্রদর্শন কক্ষে দেখতে পাবেন- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রদর্শনী প্রকোষ্ঠ।
৩৫ নম্বর গ্যালারিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চিত্রশালা।
২৬ নম্বর কক্ষটি দেখতে পাবেন- সাহিত্য গ্যালারী।
জাতীয় জাদুঘর খোলার সময়সূচী ২০২৩
শুক্রবার- বিকাল ৩.০০ টা থেকে রাত ৭ঃ০০ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
শনিবার – বুধবারঃ সকাল ১০ঃ৩০ থেকে বিকেল ৪ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে।
বি.দ্র.
‘শনিবার থেকে বুধবার’ টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়- বিকাল ০৪.০০ টায়
‘শুক্রবার’ টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়- বিকাল ০৬.৩০ টায়
জাতীয় জাদুঘরের সাপ্তাহিক বন্ধ
সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে জাতীয় জাদুঘর। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার।
জাতীয় জাদুঘরের টিকিট মূল্য
বাংলাদেশী নাগরিক: ৪০ টাকা
শিশু (০৩ – ১২ বছর) : ২০ টাকা
সার্কভুক্ত দেশের নাগরিক : ৩০০ টাকা
অন্যান্য দেশের নাগরিক: ৫০০ টাকা
অনলাইনে জাদুঘরের টিকেট কাটবেন কিভাবে?
ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনেই সংগ্রহ করতে পারবেন, জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশ করার অনলাইন-টিকেট।
এজন্যে আপনাকে অনুসরণ করতে হবে বেশ কয়েকটি ধাপ।
১ম ধাপ
https://nationalmuseumticket.gov.bd/ লিংকে প্রবেশ করতে হবে।
২য় ধাপ
লগ-ইন পেইজ আসবে। (নতুন) রেজিস্টার করতে ‘নাম’ ও ‘ফোন নম্বর/মেইল’ দিতে হবে।
৩য় ধাপ
ফোনে/ মেইলে একটি PIN CODE যাবে। কোডটি সাবমিট করুন।
৪র্থ ধাপ
Purchase Ticket বক্সে আপনি চলে আসবেন।
এবার Visit Date এ যেদিন ঘুরতে যেতে চাচ্ছেন- সেই তারিখটি দিন।
৫ম ধাপ
Ticket Category তে সিলেক্ট করুন-
Bangladeshi Adult (১২ বছরের উপরের বয়সী)
Bangladeshi Child (০৩ – ১২ বছর)
Foreign (সার্ক ব্যতীত বিদেশী নাগরিক)
SAARC (সার্কভুক্ত দেশসমূহের নাগরিক)
বিদেশী হলে পাসপোর্ট নম্বর দিতে হবে।
৬ষ্ঠ ধাপ
Quantity তে কয়জন দর্শনার্থী, সে সংখ্যাটি বসাবেন।
৭ম ধাপ
এর মাধ্যমেই অটোমেটিক সার্ভিস চার্জ-সহ মোট কত টাকা Pay করতে হবে- তা দেখাবে। Submit করুন।
সাবমিট করার সাথে সাথে বিস্তারিত সকল তথ্য দেখাবে ড্যাশবোর্ডে। এবার আপনাকে টাকা PAY করতে হবে। যেকোন ভুল হলে- Cancel ও করে দিতে পারবেন।
৮ম ধাপ
সবঠিক থাকলে Make Payment এ ক্লিক করুন।
এবার PAYMENT করার পালা।
৩টি উপায়ে আপনি টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।
১। VISA/Mastercard কার্ডের মাধ্যমে।
২। মোবাইল ব্যাংকিং (নগদ,বিকাশ,রকেট, উপায়, TAP, M ক্যাশ, MY ক্যাশ ) এর মাধ্যমে।
৩। ব্যাংকের একাউন্ট থেকে Net Banking এর মাধ্যমে।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর হেল্পলাইন নাম্বার
Email: dgmuseum@yahoo.com
Web: www.bangladeshmuseum.gov.bd
Phone: +88-02-8619396-9, +88-02-8619400