এবারের ঈদুল ফিতরের আগে মোটরসাইকেল চলাচলের ঘোষণা দেওয়ায় ব্যাপক খুশি হন বাইকাররা। ঈদের আগে গত বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) ভোর ছয়টার দিকে খুলে দেওয়া হয় পদ্মা সেতু মোটরসাইকেল চালকদের জন্য এর আগে বুধববার রাত থেকে হাজারো মোটরসাইকেল চালক অপেক্ষা করতে থাকেন পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। তারপর মোটর সাইকেল চালকরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে পার হন স্বপ্নের পদ্মাসেতু জানা গেছে, পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদের ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থল ঢাকায় ফিরছেন মানুষজন। এবারও বাইকাররা নিয়ম মেনে ঢাকা ফিরছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে ঈদের আগে প্রথম দিন পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলেছে ১২ হাজার। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পরদিন শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মোট ১২ হাজার ৪২ টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে। মাত্র একশ’ টাকা টোল দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পারি দিয়ে ঈদে বাড়িতে যেতে পারায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন মোটরসাইকেল চালকরা।
প্রথম দিন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া টোল প্লাজা দিয়ে ৮ হাজার ৮৭৩টি মোটরসাইকেল দক্ষিণ জনপদের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। আর শরীয়তপুরের জাজিরা টোল প্লাজা দিয়ে ৩ হাজার ১৬৯টি মোটরসাইকেল ঢাকার দিকে আসে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের ক্ষেত্রে সরকার কিছু বিধিনিষেধ জারি করে। এবার মোটরসাইকেল চালকরা সেই বিধিনিষেধগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে মেনে বাড়ি গিয়েছেন।
বিধিনিষেধগুলো হলোÑ পদ্মা সেতুর উপরে মোটরসাইকেলের গতিসীমা ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত লেনে চলাচল করতে হবে। কোনভাবেই সেই লেইন অতিক্রম করা যাবে না, অতিক্রম করলে গুনতে হবে জরিমানা। সেতুতে বাইক থামানো কিংবা ছবি তোলাও নিষেধ করে দেয় সরকার।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শৃঙ্খলায় ও দায়িত্বশীল থাকলে পদ্মাসেতুতে মোটরসাইকেল চালানোর যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন তা অব্যাহত থাকব। তিনি বলেন, কেউ যদি তার ব্যতয় ঘটায়, তাহলে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কথায় একটি ব্যাপার নিশ্চিত, মোটর সাইকেল চালকরা যদি পদ্মাসেতু দিয়ে নিয়ম মেনে চলাচল করেন, তাহলে এই সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল অব্যাহত রাখা হবে।
গত বছরের ২৫শে জুন উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেদিন সেতুর উপর দিয়ে অন্যান্য যানবাহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। সে রাতে সেতুতে মোটর সাইকেলে চড়ে মোবাইলে ভিডিও করার সময় ও মাত্রাতিরিক্ত গতিতে মোটর সাইকেল চালানোর ফলে ঘটে কয়েকটি মারাত্মক দুর্ঘটনা। কয়েকজন যুবকের মৃত্যুর ঘটনার রেশে পরদিনই সেতুতে মোটরসাইকেল ওঠা নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় সেতু বিভাগ। এরপর থেকে আর মোটর সাইকেল চলাচল করেনি সেতু দিয়ে। তবে দক্ষিণাঞ্চলের বাইকাররা বাড়ি যাওয়ার জন্য নিজের মোটর সাইকেলগুলো সেতু পার করত মিনি ভ্যানে করে। অর্থাৎ কয়েকটি মোটর সাইকেল একটি মিনিভ্যানে তুলে দিয়ে তারপর সেই ভ্যান সেতু পার করে দিত। এছাড়া বাইকাররা তাদের বাইকগুলো ফেরিতে করে পারাপার করত।
এ অবস্থায় পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন চালকরা, ঈদের আগ দিয়ে বৃহস্পতিবার নয় মাসেরও বেশি সময়ের সেই অপেক্ষার অবসান হলো। ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, সেতুর ওপর লেন ক্রস করায় ৯ মোটরসাইকেল চালককে ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের পুলিশ সুপার রহমান আল-মামুন বলেন, ‘আমরা দৃশ্যমান গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সাইনবোর্ড দিয়ে, বিলবোর্ড দিয়ে, বিভিন্ন ইনডিকেটর দিয়ে, স্টিকার লাগিয়ে নানাভাবে চেষ্টা করেছি যাতে চালকরা তাদের রুট চিনতে পারেন, যাতে মূল হাইওয়েতে না ওঠেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবসময় চাই, ঈদে ঘরমুখো মানুষ নিরাপদে বাড়ি যাক। কিন্তু কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করেন তখনই কিন্তু সমস্যা হয়। কেউ নিয়ম ভাঙলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না।’