ভাসমান পেয়ারা বাজার

ভাসমান পেয়ারা বাজার
শেয়ার করুন সবার সাথে

বরিশালের ভাসমান পেয়ারা বাজার

ধান, নদী, খাল – এই তিনে বরিশাল। প্রবাদটি সত্যিই বেশ অর্থবহ। বরিশাল জুড়ে বিভিন্ন স্থানে দেখা মেলে দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত এবং বহমান বহু নদী ও খালের। তবে এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র বরিশালের কোন নদী বা খালকে ঘিরে সীমাবদ্ধ নয়। আজ আপনাদের জানাবো খালের উপর ভাসমান ভিন্নধর্মী এক বাজার সম্পর্কে। বরিশাল, ঝালকাঠি এবং পিরোজপুর জেলার সীমান্তবর্তী স্থানকে ঘিরে এই ভাসমান বাজারের অবস্থান। বাজারটি ভিমরুলি ভাসমান বাজার বা ভাসমান পেয়ারা বাজার হিসেবে পরিচিত। এটি দেশের সর্ববৃহৎ ভাসমান বাজার। দেশে উৎপাদিত পেয়ারার সিংহভাগ এই অঞ্চলেই উৎপন্ন হয়। বাজারটির নাম পেয়ারা বাজার হলেও এখানে কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য কিছু টাটকা ফলের দেখাও পাওয়া যায়। এসব ফল নৌকায় করে বহন এবং বিক্রয় করা হয়। সবুজে আচ্ছাদিত দুই পাড়, তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সরু খাল, খালের বুকে ভাসমান নৌকা এবং নৌকা ভর্তি পেয়ারার সৌন্দর্যমণ্ডিত দৃশ্য যে কারো মাঝে মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে দেয়। বিশেষত বর্ষাকালে স্থানটি অপরূপ সাঁজে সজ্জিত হয়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এখানের প্রাকৃতিক মাধুর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক ভিমরুলি ভাসমান বাজারে যাওয়ার উপায় এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা সম্পর্কে।

যাওয়ার উপযুক্ত সময় 

আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বাজার বেশি জমজমাট থাকে। তবে শুধু বাজার নয়, নৌকা বা ট্রলারে করে খালের বিভিন্ন স্থান ঘুরে পেয়ারা বাগান দেখার সুযোগও পেয়ে যাবেন এখানে।



জুলাই,  আগস্ট বা সেপ্টেম্বরের শুরুর দিক এখানে ঘুরতে আসার জন্য উপযুক্ত সময়।

যাবেন কীভাবে

নদীপথঃ

ঢাকা – হুলারহাট – ভান্ডারিয়া রুটের লঞ্চে ভ্রমণ ভাসমান পেয়ারা বাজারে যাওয়ার জন্য সুবিধাজনক। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঢাকা সদরঘাট থেকে হুলার হাটের উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছাড়ে। এই রুটে চলাচলকারী লঞ্চসমূহ হলো অগ্রদূতপ্লাস, রাজদূত-৭, মর্নিংসান-৯, পারাবত-৮, যুবরাজ-৭, ঈগল-৮, ফারহান-১০ইত্যাদি। এসব লঞ্চের ডেকভাড়া ৩০০টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১৩০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ২২০০টাকা। লঞ্চ থেকে ভোরে স্বরূপকাঠি ঘাটে নামতে হবে। সেখান থেকে ট্রলার ভাড়া করে ভিমরুলি বাজারে যেতে হবে। ট্রলারে যাওয়ার পথে আটঘর এবং কুরিয়ানাও ঘুরতে পারবেন। ট্রলার ভাড়া পড়বে ১৫০০টাকার কাছাকাছি।

সড়কপথঃ

ঢাকার গাবতলী এবং সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। ঈগল, সুরভী, সুগন্ধা, সাকুরা-সহ বেশ কিছু অপারেটরের বাস এই রুটে চলাচল করে। এসব বাসের ভাড়া ৫৫০টাকার মত। ঝালকাঠি থেকে বাইক এবং ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ভাসমান বাজারে যাওয়া সম্ভব। ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করতে আপনাকে যেতে হবে ঝালকাঠি লঞ্চঘাটে। পুরোদিনের জন্য মাঝারি আকারের এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করতে গুনতে হবে প্রায় ২০০০টাকা।

এছাড়া লঞ্চ কিংবা বাসে করে বরিশাল গিয়ে চৌরাস্তা থেকে বাসে উঠে স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট পর্যন্ত যেতে পারবেন। সেখান থেকে বাকিপথ ট্রলারে করে যেতে হবে। আপনি যদি সম্পূর্ণ রাস্তা সড়কপথেই যেতে চান তাহলে যাওয়ার আরেকটি উপায় হচ্ছে বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে বাসে উঠে কীর্তিপাশা মোড়ে নামা। সেখান থেকে অটোরিক্সায় করে ভিমরুলি যাওয়া সম্ভব।



খাবেন কোথায় 

পেয়ারা বাজারে গিয়ে পেয়ারা খাবেন এটা তো বেশ সুস্পষ্ট বিষয়। তবে শুধু পেয়ারা খেলেই তো আর চলবেনা। ভিমরুলি এবং কুড়িয়ানা বাজারে পেয়ে যাবেন বেশ কিছু মিষ্টির দোকান। সেখানের গরম মিষ্টি এবং সুস্বাদু সন্দেশ উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া দুপুরের খাবারও সেরে নিতে পারবেন এখানের স্থানীয় কিছু হোটেলে। এগুলোর মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা হোটেল বেশ জনপ্রিয়।

থাকবেন কোথায়

 ভিমরুলিতে আবাসিক তেমন কোনো হোটেল না থাকায় রাত্রিযাপনের জন্য ঝালকাঠি আসতে হবে আপনাকে। তবে ভালো মানের হোটেল চাইলে আপনাকে বরিশাল পর্যন্ত যেতে হবে। নিচে ঝালকাঠি এবং বরিশালের কিছু রেস্ট হাউজ এবং হোটেলের তথ্য দেওয়া হলো
ধানসিঁড়ি রেস্টহাউজ

ঠিকানাঃ কালীবাড়ীরোড,ঝালকাঠি

নম্বরঃ০৪৯৮-৬২২১২

হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল

ঠিকানাঃ সদররোড, বরিশাল

নম্বরঃ০১৭৯২১৫১১৯১

হোটেল এ্যাথেনা ইন্টারন্যাশনাল

ঠিকানাঃ কাটপট্টিরোড, বরিশাল

নম্বরঃ০১৭১২২৬১৬৩৩

হোটেল গ্রান্ডপার্ক

ঠিকানাঃ চাঁদমারি, বরিশাল

নম্বরঃ০৪৩১-৭১৫০৮

হোটেল সেডোনা

ঠিকানাঃ সদররোড, বরিশাল

নম্বরঃ০৪৩১-৭১৫০৮


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!