মহামায়া লেক

মহামায়া লেক
শেয়ার করুন সবার সাথে

পরিবার নিয়ে এই শীতে প্রাকৃতিক পরিবেশে কোথাও ঘুরতে যেতে চাচ্ছেন? কিন্তু সময়ের কথা ভাবলে আবার দুশ্চিন্তাও হচ্ছে,যে কম সময়ে ভালো কোনো প্রাকৃতিক  টুরিস্ট স্পট পাবেন কিনা যেখানে কাটানো যাবে আনন্দের একটি দিন। আমাদের  চারপাশেই অনেক মনোমুগদ্ধকর জায়গা আছে যার অনেকগুলোর নাম আমাদের অগোচরে রয়ে গেছে। এই লেখায় এমনই একটি জায়গার কথা বলবো যেখানে ইচ্ছে করলেই পরিবার নিয়ে একদিনের  দারুন একটি ট্যুর দেয়া যায়। জায়গাটির নাম হলো মহামায়া লেক (Mohamaya Lake)। কাপ্তাই হ্রদের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লেক বলা হয় মহামায়া লেককে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে পরিবেষ্ঠিত এই লেক চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৪৫কিলোমিটার দূরে মিরসরাই উপজেলার অবস্থিত। লেকটির আয়তন ১১ বর্গকিলোমিটার। মহামায়া লেকের চারপাশে রয়েছে ছোট ছোট অনেক পাহাড় এবং মহামায়া লেকের মাঝে রয়েছে প্রাকৃতিক ঝর্না। লেকে নৌকা ভ্রমনের সময় এই পাহাড়গুলো এবং ঝর্ণার দৃশ্য  ভ্রমণকে করে তোলে অসাধারণ। গোধুলী লগ্নে এই দৃশ্য হয় আরো মনোরম। আর রয়েছে কায়াকিং করার সুব্যাবস্থা। তবে চলুন জানা যাক কিভাবে প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দৰ্য্যে পৌঁছানো যাবে এবং মহামায়া লেকের ভ্রমণ পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরন ।

কিভাবে যাবেন মহামায়া লেকে 

মহামায়া লেক ঢাকা-চট্টগ্র্রাম মহাসড়কের কাছে হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থায় কোনো দুর্ভোগ পোহাতে হবেনা। কমলাপুর থেকে বিআরটিসির বাস ছাড়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে। তাছাড়া সায়দাবাদ থেকে  এস. আলম, সৌদিয়া, গ্রিন লাইন, সোহাগ, ইউনিক সহ বিভিন্ন বাস ছাড়ে যেগুলো এসি এবং নন এসি উভয়  আছে। ভাড়া নন এসি ৪২০-৪৮০ টাকা এবং এসি ৮০০-১০০০টাকা।



এই সকল বাস মিরসরাই হয়ে চট্টগ্রাম যায়।  তেমনই কোনো বাসে চড়ে নামতে হবে মিরসরাই দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার। সেখান থেকে সিএনজি বা হিউম্যান হলারে করে চলে যাবেন আপনার গন্তব্য স্থান মহামায়া লেকে। সিএনজি ভাড়া ১০০ টাকা এবং হিউম্যান হলারে জনপ্রতি ১০ টাকা করে ভাড়া।

আপনি চাইলে গুরুত্বপূর্ণ বাস সার্ভিস গুলোর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। বাস সার্ভিসের ফোন নম্বরগুলো হলো :-

  • এস. আলম-পূর্ব কমলাপুর- ০১৯১৭-৭২০৩৯৫
  • সৌদিয়া-সায়দাবাদ কাউন্টার- ০১৯১৯৬৫৪৮৫৭,
  • সোহাগ পরিবহন সায়দাবাদ শাখা-০১৯২৬৬৯৯৩৬৭,
  • ইউনিক সার্ভিস-সায়দাবাদ- ০১১৯০-৮০৬৪৪৭

চট্টগাম থেকে যেভাবে যাবেন

চট্টগ্র্রাম একে.খান মোড় এবং অলংকার থেকে ৪০-৬০ টাকা ভাড়ায় বিভিন্ন লোকাল বাস মিরসরাই যায়। এছাড়া কদমতলী এবং মাদারবাড়ি

থেকে কিছু বাস সরাসরি মিরসরাই যায়। সেক্ষেত্রে ভাড়া পরবে ৮০-১০০ টাকা। উক্ত সকল বাস ঠাকুরদিঘী বাজার পৌঁছে দিবে।

সিলেট থেকে যেভাবে যাবেন

উঠে পড়ুন চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে। মিরসরাই স্থানটি  ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে হওয়াতে চট্টগ্রামগামী বাস থেকে নেমে পড়ুন মিরসরাই ঠাকুরদিঘী বাজার। ইচ্ছে করলে  রেলপথেও  আসতে পারেন। এক্ষেত্রে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস,উদয়ন এক্সপ্রেস বা জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ফেনী নামুন । এরপর লোকাল পরিবহন করে ২০-২৫টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় ফেনী মহিপাল বাস  স্ট্যান্ড। সেখান থেকে ৪০-৫০টাকা  ভাড়ায় লোকাল বাসে ঠাকুরদিঘী বাজার। তারপর অটোরিকশা বা হিউম্যান হলারে মহামায়া লেক।

মহামায়া লেকে প্রবেশ

লেকে প্রবেশ করতে ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কাটতে হবে।

কায়াকিং এবং মনোমুগ্ধকর নৌভ্রমণ

মহামায়া লেকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে নৌকা ভ্রমণ। যা না করলে সমস্ত ভ্রমণটায় অপূর্ণ থেকে যাবে। তাই মহামায়া লেকে আছে ইঞ্জিনচালিত বোটের ব্যাবস্থা। মাঝারি বোটে ৮-১০জন বসতে পারে এবং বড় বোটগুলোতে ১৫-২০জন।  দরদাম করে মাঝারি বোট ভাড়া ৮০০-১০০০টাকা এবং বড় বোট ভাড়া ১২০০-১৫০০টাকা করে প্রতি ঘন্টা।



ইচ্ছে করলে কায়াকিং করে হয়ে যেতে পারেন মহামায়ার মাঝি। সেক্ষেত্রে রয়েছে লাইফ জ্যাকেটের ব্যাবস্থা। ফলে থাকবেনা ডুবে যাওয়ার ভয়। কায়াকিং ঘন্টা প্রতি ৩০০টাকা।  ছাত্রদের জন্য ২০০টাকা।  কিন্তু অবশ্যই ছাত্র পরিচয় পত্র দেখাতে হবে।

কায়াকিং করার জন্য সকাল ৯ থেকে বিকেল ৫.৩০ টা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

খাবেন কোথায়

মহামায়া লেকের আশপাশের অবস্থা অত্যন্ত অপরুপ। ইচ্ছে করলে সেখানেই আয়জন করতে পারেন পিকনিকের । সবাই মিলে রান্না করে খাওয়ার জন্য এটি হতে পারে দারুন জায়গা। লেকের আশেপাশে তেমন কোনো ভালো খাবার হোটেল নেই। ঠাকুর বাজারে কিছু ছোটোখাটো ভাতের রেস্তোরা আছে সেখানেই খাওয়ার কাজটা সারতে পারেন। নাহলে আপনাকে ভালো রেস্তোরার সন্ধানে চলে যেতে হবে চট্টগ্রাম বা সিতাকুন্ড।

থাকবেন কোথায় 

নিজ শহর  থেকে বাহিরে  কোথাও ঘুরতে  গেলে সর্বপ্রথম মাথায়  আসে রাত্রিযাপন কোথায় করবো। মহামায়া এমন একটি জায়গা যেখানে ঘোরাফেরা করতে ৪/৫  ঘন্টার  বেশি সময় লাগবেনা। তাই সহজেই একদিনের মধ্যে ঘুরে নিজ স্থানে ফিরে আসা সম্ভব। যদি আপনি আরেকটু সময় নিয়ে মহামায়ার কাছাকাছি টুরিস্ট স্পট গুলো ঘুরতে চান তাহলে রাত কাটানোর কথা ভাবতে পারেন।



মন চাইলে মহামায়ার পাশে  তাবু খাটিয়ে  ক্যাম্প করে  রাতের মহামায়ার সৌন্দয উপভোগ করার ব্যবস্থা করতে পারেন। এছাড়া যদি আবাসিক হোটেলে রাত কাটাতে চান তবে মিরসরাইয়ে তেমন কোনো ভালো হোটেল নেই। যে কয়েকটি হোটেল আছে এগুলোর নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে দিচ্ছি।

  • মুরাদ বোডিং-শান্তির হাট রোড়, বারইয়ার হাট পৌরসভা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম। ফোন-০১৮১৩ ২১২৭৫৩,
  • সাগরিকা বোডিং-শান্তির হাট রোড়, বারইয়ার হাট পৌরসভা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম। ফোন-০১৮১৫ ৬০৯১০৩,
  • জাবেদ বোডিং-বিশ্বরোড (পূর্ব) বারইয়ারহাট পৌরসভা, মীরসরাই। ফোন-০১৮১৯৩৬৯৫৬।

এসব হোটেলে ৭০০-১০০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। কিন্তু উঠার আগে অবশ্যই দরদাম করে নিবেন।

তাছাড়া ইচ্ছে করলে ১-২ঘন্টার সড়ক পথে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসতে পারেন। চট্টগ্রাম শহরের স্টেশন  রোডে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল আছে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • ভ্রমণে অতিরিক্ত কাপড় নিবেননা।
  • পর্যাপ্ত পরিমান পানি সাথে নিন।
  • অবশ্যই মোবাইল ফোনের চার্জার নিবেন। সাথে একটি পাওয়ার ব্যাংক রাখার চেষ্টা করবেন।
  • প্রয়োজনীয় ঔষধ সাথে নিবেন।

সতর্কতা

  • লাইফ জ্যাকেট ছাড়া কায়াকিং করবেননা।
  • ময়লা বা প্লাস্টিক ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেননা।

মহামায়ার কাছে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান

  • খৈয়াছড়া ঝর্ণা
  • নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
  • চন্দ্রনাথ পাহাড়
  • কমলদহ ঝর্না
  • সীতাকুন্ড ইকোপার্ক
  • ঝরঝরি ঝর্ণা

শেয়ার করুন সবার সাথে
error: Content is protected !!