মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি তারিখে। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রাম তার জন্ম হয়। এখানেই তার শৈশবের স্মৃতি সংবলিত বাড়ি মধু পল্লীর অবস্থান। দ্বিতল এই বাড়িটির কক্ষ সংখ্যা ৬। বর্তমানে ভবনটির স্বত্বাধিকার বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের নিকটে। ১৯৬৮ এবং ১৯৯৬ সালে বাড়িটির সংস্কারকাজ করা হয়। এই বাড়ির প্রবেশপথে মাইকেল মধুসূদন দত্তের একটি ভাস্কর্য রয়েছে। কবির বিভিন্ন নিদর্শন এবং তার বাড়িতে ব্যবহৃত তৈজসপত্রের সমন্বয়ে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি জাদুঘর। এছাড়াও অসাধারণ নির্মাণশৈলীর কক্ষ, মন্দির এবং পাঠাগার রয়েছে এই বাড়িটিতে।
মধুসূদন দত্তের বাড়ির ইতিহাস
৭ বছর বয়স পর্যন্ত মাইকেল মধুসূদন দত্ত মধু পল্লীতে বসবাস করেছেন। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার খিদিরপুরে গমন করেন। এরপর ১৮৬২ সালে তিনি বাড়িতে ফিরতে চাইলেও ধর্মান্তর করার কারণে তাকে তার পরিবার গ্রহণ করেনি। এরপর তিনি কপোতাক্ষ নদের তীরে তাঁবুতে ১৪ দিন অবস্থানের পর পুনরায় কলকাতা গমন করেন। তার কবিতায় উল্লেখিত এই কপোতাক্ষ নদের নিকটেই এই বাড়িটির অবস্থান।
প্রবেশের সময়সূচী
প্রতি সপ্তাহের রবিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে মধু পল্লী বন্ধ থাকে। পাশাপাশি শুক্রবার ১২ঃ৩০ থেকে ২ঃ৩০ পর্যন্ত বাড়িটি বন্ধ রাখা হয়। এপ্রিল হতে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং অক্টোবর হতে মার্চ মাস পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা অবধি দর্শনার্থীদের জন্য বাড়িটি উন্মুক্ত থাকে।
প্রবেশ টিকেট মূল্য
দেশি পর্যটকদের জন্য প্রবেশমূল্য ১০ টাকা এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা। গাড়ি কিংবা মাইক্রোবাসের পার্কিং ফি ৫০ টাকা এবং বাইকের ১০ টাকা।
যাওয়ার উপায়
মধু পল্লী যাওয়ার জন্য প্রথমেই দেশের যেকোন স্থান থেকে চলে আসতে হবে যশোরে। রাজধানী ঢাকা হতে রেলপথ এবং সড়কপথের পাশাপাশি আকাশপথেও যশোর যাওয়া সম্ভব।
রেলপথে
ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস এবং বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো যশোরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ভাড়া শ্রেণিভেদে ৩৮০ থেকে ১,৩৬৫ টাকা।
সড়কপথে
ঢাকার আব্দুল্লাহপুর, আরামবাগ, কল্যাণপুর এবং গাবতলী হতে সোহাগ পরিবহন, রয়েল কোচ, হানিফ পরিবহন সহ বেশ কিছু অপারেটরের বাস যশোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া নন এসি ৬৫০ টাকা এবং এসি ৮০০ থেকে ১,৬০০ টাকা।
আকাশপথে
বিমান বাংলাদেশ, নভোএয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স এর প্লেন প্রতিদিন ঢাকা থেকে যশোরের পথে যাত্রা করে। ভাড়া পড়বে ২,২০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা।
যশোর শহর থেকে মধু পল্লীর দূরত্ব ৪৬ কিলোমিটারের কাছাকাছি। মধু পল্লী যেতে হলে যশোর বাসস্ট্যান্ড থেকে কেশবপুরগামী বাসে উঠতে হবে। কেশবপুর যেতে ভাড়া গুণতে হবে ৪০ টাকার কাছাকাছি। সেখান থেকে রিকশায় করে চলে যেতে পারবেন সাগরদাঁড়ি গ্রামে অবস্থিত মধু পল্লীতে।
থাকবেন কোথায়
ভালো মানের আবাসিক হোটেল পেতে আপনাকে চলে আসতে হবে যশোর শহরে। নিম্নে যশোরের সার্কিট হাউজ এবং কয়েকটি আবাসিক হোটেল তথ্য প্রদান করা হলো –
যশোর সার্কিট হাউজ
ঠিকানাঃ মুজিব সড়ক, যশোর
যোগাযোগঃ ০১৭৩৩-৯০৯২২২
হোটেল আর এস ইন্টারন্যাশনাল
ঠিকানাঃ এম কে রোড, আর এস টাওয়ার, যশোর
যোগাযোগঃ ০১৭১১-২৩৮৫৫৬
হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল
ঠিকানাঃ ১৫ নং কেশবলাল সড়ক, যশোর
যোগাযোগঃ 67474
হোটেল মনিহার
ঠিকানাঃ পুরাতন কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, যশোর
যোগাযোগঃ 64180
হোটেল মিডওয়ে
ঠিকানাঃ পুরাতন বাস টার্মিনাল, খুলনা রোড, যশোর
এছাড়া সাগরদাঁড়ি গ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের পরিচালনাধীন মোটেলেও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
খাবেন কোথায়
যশোরের বিখ্যাত খাবারের মধ্যে চুক নগরের চুই ঝাল দেওয়া মাংস, ধর্মতলার মালাই চা, জামতলার মিষ্টি এবং জনি কাবাব দোকানের কাবাব অন্যতম।