৩ তলা টিনের মৃধা বাড়ি
মাঝেমাঝে অনেকেরই ইচ্ছে করে টিনের চালে টুপুরটুপুর বৃষ্টির শব্দ শুনে শুনে নদীর পাড়ের অপরুপ দৃশ্য দেখতে। অথবা ভাবুন পড়ন্ত বিকেলে চায়ের কাপ হাতে আপনি অসাধারণ গ্রাম্য পরিবেশে তৈরী একটি টিনের বাড়িতে বসে পদ্মার বুকে সূর্যাস্ত দেখছেন। এখন হয়তো ভাবছেন এই যান্ত্রিক সময়ে এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ কি আদৌও পাওয়া সম্ভব? আমি বলবো,হ্যাঁ সম্ভব । এর জন্য আপনাকে খুব বেশি দূরে যেতে হবেনা। ঢাকা শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার বেজগাঁ গ্রামে রয়েছে ঠিক এমনই পরিবেশে তৈরী টিন এবং কাঠের সংমিশ্রণে তৈরী একটি তিন তলা বাড়ি। যার নাম মৃধা বাড়ি( Mridha Bari )। বলা হয়ে থাকে টিন কাঠের তৈরী বাংলাদেশে এই একটিই তিন তলা বাড়ি রয়েছে। বাড়িটি তৈরী করেছেন ফারুক মৃধা নামের একজন ব্যাক্তি।
ফারুক মৃধা তাঁর জন্মস্থানেই তৈরী করেছে বাড়িটি বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী টিন কাঠের বাড়ির আদলে। বাড়িটির আশপাশের পরিবেশও যথেষ্ঠ মনোরম সবুজে ঘেরা । মৃধা বাড়ির পাশে বয়ে গেছে অপরূপা পদ্মা নদী। বাড়িটি এতই সুন্দর সেখানে প্রায় শ্যুটিং করা হয় বিভিন্ন নাটক,সিনেমা এবং টেলিভিশন কমার্শিয়ালের। তাছাড়া মৃধা বাড়ির কাছেই রয়েছে মাওয়া রিসোর্ট এবং বিখ্যাত পদ্মা সেতু । ফলে মৃধা বাড়ীর সাথে সাথে কিছুটা সময় মাওয়া রিসোর্টেও কাটাতে পারেন এবং ট্রলার ভাড়া করে দর্শন করতে পারেন সদ্য নির্মিত পদ্মা সেতু। সুতরাং মৃধা বাড়ি ঘুরতে গেলে পেতে পারেন একের ভেতর অনেক কিছু। ইচ্ছে করলেই পরিবার নিয়ে একদিনে ছোট একটি সময় কাটিয়ে আসতে পারেন মৃধা বাড়ির মনোরম পরিবেশে। চলুন তাহলে জানা যাক মৃধা বাড়ি সম্পর্কে বিস্তারিত।
মৃধা বাড়ির বিস্তারিত
টিন এবং কাঠের তৈরী বাড়িটিতে ঘরের ভেতর সিঁড়ি দেয়া অবস্থায় তিনটি তলা রয়েছে। প্রবেশ মুখে আছে সুদূর জাপান থেকে আনা ফুলের টব এবং সরু বারান্দাগুলো সাজানো হয়েছে ছোটো ছোটো ঝুলন্ত টব দিয়ে। তাছাড়া প্রবেশ পথে আরো রয়েছে চারটি হরিণের মাথা। সমস্ত বাড়িটিই ফিটফাটভাবে সাজানো। বাড়ির প্রথম এবং দ্বিতীয় তলা উন্মুক্ত রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তিন তলায় বাড়ির মালিক নিজে থাকেন। বাড়িটি ব্যক্তিমালিকানাধীন হলেও এটি ২৪ঘন্টা উন্মুক্ত টুরিস্টদের জন্য। বাড়ির আশপাশের পরিবেশও প্রচণ্ড সুন্দর ঠিক বাড়িটির মতোই। পাশেই বয়ে গেছে পদ্মা নদী। সেজন্য বাড়ির মালিক তৈরী করে দিয়েছেন পদ্মা নদী ঘেষে টিনের চালের তৈরী বসার জায়গা। বাড়ির আশপাশের অন্যান্য স্থানও নয়নাভিরাম ভাবে গাছগাছালি দিয়ে সাজানো। ৫একর জমির উপর তৈরী বাড়িটির দুই একর জায়গা গ্রাস করেছে পদ্মা। তাই দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি রক্ষায় নেয়া হয়েছে উদ্যেগ।
ঢাকা থেকে মাওয়া রুটেই আপনি মৃধা বাড়ি যেতে পারেন। মাওয়া থেকে অটো বা রিকশায় করে চলে যাবেন মালির অংক বাজার। সেখান থেকে আবার ২০-৩০ টাকা ভাড়ায় রিকশা নিয়ে মৃধা বাড়ি। কিন্তু গ্রামের রাস্তা চিকন হওয়ায় বড় বাস নিয়ে বাড়ির সামনে নামতে পারবেন না। বড় গাড়ি নিয়ে গেলে নামতে হবে মৃধা বাড়ি থেকে কিছুটা আগে। এছাড়া চাইলে মাওয়া ঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করেও মৃধা বাড়ি যেতে পারেন। ফলে পদ্মার বুকে ভ্রমণসহও দেখতে পারেন পদ্মা সেতু। ট্রলারে করে গেলে বাড়তি কিছু টাকা পকেট থেকে যেতে পারে।
খাবেন কোথায়
ভ্রমণের অন্যতম ভাবনার বিষয় হলো খাওয়া দাওয়া। ইচ্ছে করলে মৃধা বাড়িতেই আয়োজন করতে পারেন পিকনিকের। গ্রাম্য পরিবেশে এমন চড়ুইভাতির আয়োজন আপনার আনন্দকে আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিবে। তাছাড়া শিমুলিয়া ঘাটে গিয়ে নিতে পারেন তাজা ইলিশের স্বাদ। সেখানে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় পাবেন প্রতিটি ইলিশ। শিমুলিয়া ঘাটেই রয়েছে নিজের হাতে ইলিশ মাছ ভেজে খাওয়ার ব্যবস্থা। অর্থাৎ ঘাটে বসেই তৎক্ষণাৎ পদ্মার তাজা ইলিশে দুপুর কিংবা রাতের ভোজন।
শিমুলিয়া ঘাটে ইলিশ খাওয়ার আগে উপভোগ করতে পারেন সেখানকার বিখ্যাত রসগোল্লা। লোকনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের রসগোল্লা অত্র এলাকার সেরা। দোকানটি চন্দ্রের বাড়ি বাজারে। ইচ্ছে করলে ০১৭১২৮৩৭১৩৭ নম্বরে ফোন করে আগেই মিষ্টির অর্ডার দিয়ে পারেন লোকনাথ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে।
থাকবেন কোথায়
মৃধা বাড়ি যেহেতু ঢাকা শহরের খুব কাছেই সুতরাং সেখানে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। কিন্তু তবুও যদি আশেপাশে কোথাও দিনের বাকি সময় কাটাতে চান কিংবা বিশ্রাম নিয়ে ফ্রেশ হতে চান অথবা ঢাকার বাহির থেকে এসে এক রাত কাটাতে চান তবে মাওয়া রিসোর্ট সবচেয়ে ভালো হবে। সেক্ষত্রে শুধু দিনে বিশ্রাম নিতে চাইলে নন এসি ৩০০০ এবং এসি ৩৫০০ টাকা ভাড়া পরবে রুম প্রতি। আর রাতে থাকতে চাইলে নন এসি ৪০০০ এবং এসি ৪৫০০ টাকা করে। ইচ্ছে করলে ১০০ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করে দুপুরের খাবারও খেতে পারেন মাওয়া রিসোর্টে।
রুম বুকিংএর ব্যাপারে এবং মাওয়া রিসোর্টে যোগাযোগ করতে চাইলে ০১৭১১৫৭৪৭ নম্বরে যোগাযোগ ফোন করে নিতে পারেন।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
- পদ্মা সেতু
- মাওয়া রিসোর্ট
- ইদ্রাকপুর কেল্লা
- অতীশ দীপঙ্করের পণ্ডিত ভিটা
- বার আউলিয়ার মাজার
- হযরত বাবা আদম শহীদ (র.) এর মসজিদ
- রাজা বল্লাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘী।
- রাজা শ্রীনাথের বাড়ি
- সোনারং জোড়া মন্দির
- আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ