মধুমাস গ্রীষ্ম আসছে, আর গ্রীষ্মের ফলের মাঝে মনোমুগ্ধকর দিনাজপুর।হললিচু পছন্দ না এমন মানুষ কমই আছে, আর লিচুর কথা বলতেই যেই জেলার নাম আসে তা আর দিনাজপুরের মাঝে একটি চিত্র বিনোদন পার্ক স্বপ্নপুরী ভ্রমণ এর যাবতীয় তথ্য জানানোর চেষ্টা করব।
স্বপ্নপুরী পার্ক কোথায় অবস্থিত ?
১৫০ একর জমির উপর বিস্তৃত এই বিনোদন পার্কটি রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার দক্ষিণে নবাবগঞ্জ উপজেলার সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর দিকে ৯ নং কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদের অধীন খালিপপুর মৌজার মধ্যে অবস্থিত।
এটি কে নির্মাণ করেন, কি এর ইতিহাসে ?
সম্পূর্ণ ব্যাক্তি উদ্যোগে মো: দেলওয়ার হোসেন কুশদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার শ্রম ও অর্থের বিনিময়ে ১৯৮৯ সালে স্বপ্নপুরীর কাজ শুরু করেন। বর্তমানে দিনাজপুর-৬ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য
মো: শিবলি সাদিক এম. পি’র অধীনে এটি চালু আছে।
স্বপ্নপুরী তে দেখার মত কি কি আছে ?
স্বপ্নপুরী বিনোদন পার্কের প্রবেশ মুখেই দেখা যায় দুটি বিশাল সাদা পরীর ভাস্কর্য যা আমাদের রূপকথার গল্প গুলোর আলোকে তৈরী এবং স্বপ্নপুরী তে আসা অতিথিদের অর্ভথনা জানাতে দাঁড়িয়ে আছে। এর পর ঢোকার পথে দান পাশে রাস্তায় একটি অসাধারণ মনোরম মসজিদ, যা প্রতিটি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। আর সারি সারি দেবদারু গাছের সৌন্দর্য আর বিস্তৃত ঝিল আর ঝিলের তীরে নানা রকম ফুল স্থাপনাটিকে কে একটি মনোলোভ প্রকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যা নিসন্দেহে আমদের শহুরে একঘেয়েমি থেকে বিরাম দিবে।
আর তার সাথে পার্কের মাঝে শিশুদের মনোরঞ্জন এর জন্য রয়েছে নানাবিধ আয়োজন। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল ভুতের বাড়ি, একটি কৃত্তিম ভাস্কর্য এবং প্রযুক্তি এর সম্মনয়ে একটি ভৌক্তিক বিনোদন কেন্দ্র। এবং এরপর রয়েছে মৎস্য জগৎ, নানা রকম মাছের ভাস্কর্য, লেকের মাঝে দ্বীপের মত তৈরী করে। আমাদের রূপকথার জলপরীর ভাস্কর্য। এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল লেকে স্বচ্ছ পানিতে অনেক রকম রঙ বেরং এর জীবন্ত মাছ। সেই পথ দিয়ে হাটতে থাকলেই পরে কৃত্রিম পশু জগৎ, সেখানে নানা রকম পশু পাখির অবিকল ভাস্কর্য তৈরী করা হয়েছে।
আরো আছে নভোথিয়েটার যার মাঝে ভিডিও দেখানোর মাধ্যমে সৌরজগতের নানা বিষয়ে ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। আরো আছে রঙ ধনু গ্যালারি, বরফের জগৎ, আদি জাদুঘর। যা বিনোদন এর সাথে জ্ঞান অর্জন এর একটি অভিনব কেন্দ্র বলা যেতেই পারে,
এছাড়াও রয়েছে নানা রকম রাইড ফ্রিজবি, অক্টোপাস, ড্রাগন কোস্টার, বাম্পার কার, ও সুইমিং পুল যদি সেখানে কাপড় পরিবর্তন এর জন্য আলাদা জায়গা নেই, আশা করি খুব দ্রুত কতৃপক্ষ এর যথাযথ ব্যাবস্থা নিবে। যা শিশু এবং বড়ো সকলেই উপভোগ করতে পারবে।
এবং একটি ছোট চিড়িয়াখানা যেখানে নানা রকম জীবন্ত পশু পাখি রয়েছে।
পর্যটকদের বিনোদন এর জন্য আরো রয়েছে একটি পিকনিক স্পট, যা অগ্রিম বুকিং দিতে হয় যেখানে রান্না করার ব্যাবস্থা রয়েছে। অতিথিদের বিশ্রামের জন্য রয়েছে রেস্ট হাউজ এবং মনোমুগ্ধ করার জন্য রয়েছে স্বপ্নপুরীর বিশাল দিঘিতে ঘুরে বেরানোর স্পিডবোটও ময়ূরপঙ্খী নৌকা , জোড়া ঘোড়ার টমটম, অসংখ্য ফুলের বাগান ও আর পানিরা ফোয়ারা, যা এই পরিবেশে এক জীবন্ত সুগন্ধ ও সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়।
কেনাকাটা করার জন্য রয়েছে কয়েকটি দোকান যেগুলো তে নানা রকম স্থানীয় কুটি শিল্প এবং শিশুদের খেলনা জাতীয় পন্য সামগ্রী বিক্রি করে, যেখানে পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে দরদাম করে নিতে হবে।
কিভাবে যাবেন ?
ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার জন্য বাস এবং ট্রেন দুই ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থায় রয়েছে।
বাসের ক্ষেত্রে ঢাকার শ্যামলী থেকে দিনাজপুরের জন্য সকাল ৬:৩০ থেকে শুরু করে রাত ১:৩০ অব্দি নিয়মিত বাস চলাচল করে। নাবিল পরিবহন, হক এন্টারপ্রাইজ, এস আর এন্টারপ্রাইজ, হানিফ পরিবহন এবং রোজিনা পরিবহন এই ৫টি বাস ঢাকা দিনাজপুর রুটে চলাচল করে। যাদের ভাড়া নন এ/সি কোচের ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে শুরু করে ৯৫০ টাকা অব্দি এবং এসি কোচ ৮০০ থেকে শুরু হয়ে ১৪০০ টাকা অব্দি রয়েছে। তারপর দিনাজপুর ফুলবাড়ি বাস স্ট্যান্ডে নেমে জনপ্রিয় ২০-৩০ টাকা ভাড়ায় অটো সি এন জি রয়েছে সরাসরি স্বপ্নপুরী যাওয়ার জন্য। আর কেউ যদি চান প্রাইভেট গাড়ি ও ভাড়া করে যেতে পারবেন,সেই ব্যাবস্থা ও বাস স্ট্যান্ডে রয়েছে।
এছাড়া যদি ট্রেনে যেতে চান। ঢাকা থেকে দিনাজপুর যাওয়ার জন্য ৩ টি ট্রেন রয়েছে একতা এক্সপ্রেস, ঢাকা থেকে ছেড়ে সকাল ১০ টায় এবং পৌছায় সন্ধ্যা ৭ টায়। দ্রুতযান এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় রাত ৮ টায় এবং নামিয়ে দেয় ভোর ৪ টা বাজে এবং পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১০:৪৫ মিনিটে এবং পৌছায় সকাল সাড়ে ৬ টা নাগাদ। ট্রেনের ভাড়া আসন ভেদে ৩৯০ থেকে ১৩০০ অব্দি রয়েছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ি স্টেশন থেকে থেকে অটোরিকশা জনপ্রতি ৩০/৪০ টাকা করে নেয় স্বপ্নপুরীর গেটে নিয়ে যেতে।
এছাড়াও নিজেদের ব্যাক্তিগত পরিবহন, মোটর সাইকেল থেকে বাস নিয়ে ও আপনারা স্বপ্নপুরী যেতে পারবেন।
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট ভাড়া
স্বপ্নপুরীতে নীলপদ্ম নামে একটি পিকনিক স্পট রয়েছে, পিকনিক স্পট ভাড়া নেয়ার জন্য অগ্রীম বুকিং দিতে হবে, বুকিং এর জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে ২৫০০ টাকা হপ্তে শুরু করে ২৫,০০০ টাকা অব্দি যেখানে রান্নার ব্যাবস্থা রয়েছে এবং প্রতি চুলার ভাড়া ৩০০ টাকা। এবং ডেকরেশন করলে আলাদা খরচ দিতে হবে।
খোলা এবং সাপ্তাহিক বন্ধের দিন কবে কবে ?
স্বপ্নপুরী সপ্তাহে সাত দিন এবং ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে।
স্বপ্নপুরীতে প্রবেশ এবং টিকেট এর মূল্য ২০২৩ইং
স্বপ্নপুরীতে প্রবশের জন্য রয়েছে এন্টি ফ্রী জন প্রতি ১০০ টাকা করে। এবং বাই, গাড়ি, বাস পার্কিং করার জন্য রয়েছে নিজস্ব সুবিশাল নিরাপত্তা বিশিষ্ট পার্কিং যেখানে বাইক প্রতি ২০ টাকা, গাড়ি -মাইক্রো বাস ৫০ টাকা এবং বাসের জন্য ১০০ টাকা পার্কিং চার্জ।
এবং স্বপ্নপুরী তে অবস্থিত বিনোদন কেন্দ্র গুলো এবং রাইড গুলোর জন্য রয়েছে আলাদা এন্ট্রি ফি যা যথেষ্ট সন্তোষ জনক ৩০ টাকা শুরু করে ৫০ টাকা অব্দি।
থাকবেন কোথায় ?
১৫০ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত এই পার্কটি সম্পূর্ণ ঘুরতে বিশ্রাম নিয়ে অনেক সময়ের ব্যাপার। আর এই সময়ে বিশ্রাম এবং খাবার জন্য অনেক গুলো ক্যাফে এবং খাবার হোটেল রয়েছে, যেখানে দুপুর খাবার একজন মানুষের জন্য ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এর মধ্য হয়ে যায়।
এবং ভিতরে থাকার জন্য রয়েছে কয়েকটি অসাধারণ কটেজ নন এসি ১৫০০ টাকা এবং এসি ২৫০০ টাকা। চাইলে এক রুমে ৩/৪ জনও থাকতে পারবেন।
এছাড়াও দিনাজপুর শহরে রয়েছে পর্যটন মোটেল,এবং প্রাইভেট আবাসিক হোটেল যেগুলোর ভাড়া নন এসি ১০০০ থেকে শুর করে আনুমানিক ২৫০০ অব্দি এবং এসি ২৫০০ শুর হয়ে সেবার মান অনুসারে আছে।
পরিশেষে বলতে স্বপ্নপুরী হচ্ছে একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ বিনোদনকেন্দ্র। বিভিন্ন পশু পাখির অবিকল ভাষ্কর্য, কৃত্রিম পাহাড়, কৃত্রিম ঝর্ণা এবং মনোমুগ্ধকর সবুজ এর একটি অভয়ারণ্যে।
এবং তাদের পার্কটির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং অতিথি সেবার জন্য ভ্রমণের স্বার্থকতা পূর্ন হয়।