স্বর্ণমন্দির
বান্দরবান শহরের অদূরে ৯ কিলোমিটার যাত্রার পর পেয়ে যাবে বান্দরবানের বহুল আলোচিত পর্যটন স্থান “স্বর্ণমন্দির ( Sorno Mondir )“। নাম শুনে অনেকে মনে করেন হয়তো স্বর্ণ দিয়ে তৈরী কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আছে। তবে বাস্তবিকভাবে স্বর্ণমন্দির নামকরণ করা হয়েছে এর সোনালী রং আধিক্য থাকার জন্য। এই মন্দিরটি তৈরী হয়েছে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের পবিত্র স্থান প্যাগোডাকে কেন্দ্র করে। তবে, এর আভিজাত্য ও সৌন্দর্য্য সকলের দৃষ্টি নন্দিত করতে সক্ষম। দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে আভিজাতপূর্ণ প্যাগোডা হিসাবে পরিচিত বান্দরবানে নির্মিত এই স্বর্ণমন্দির। শুধু তাই নয়,স্বর্ণমন্দিরের বৌদ্ধ মূর্তিও একটি আভিজাতের প্রতীক। শুধু তাই নয়, পাহাড়ের উপর অবস্থিত আছে দেবতা আকর্ষণের অন্য দিক “দেবতা পুকুর”। বান্দরবানের “স্বর্ণমন্দির” নামে খ্যাত এই অপার সৌন্দর্য্য তৈরী করতে তৎকালীন সময়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। প্যাগোডাটি শুধু আভিজাত্য নয় বাংলাদেশের সম্প্রতি বহনেও স্বর্ণমন্দির একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র।
যাবেন কীভাবে ?
“স্বর্ণমন্দির” বান্দরবানের কাছাকাছি হওয়ায় আপনাকে দেশের যে কোনো স্থান থেকে আসতেই নিতে হবে বান্দরবানের টিকিট।
ঢাকা থেকে বান্দরবান আসতে সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর, মহাখালী সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনি পেয়ে যাবেন এসি/ নন এসি নানা ধরণের বাস। ইউনিক, সৌদিয়া, সেইন্ট মারটিন পরিবুহন, হানিফ সহ বিভিন্ন বাসের ধরণ অনুযায়ী খরচ পরবে ৬০০-১২০০ টাকা। রাত ৯ঃ৩০ অথবা ১১ টার বাসে চড়লে সকাল ৬/৭ টার মাঝে আপনি পৌছে যাবেন বান্দারবান শহরে।
ট্রেনে আসতে চাইলে চট্টগ্রামের টিকিট করে নিবেন ২৫০-৭০০ টাকার মধ্যে। সোনার বাংলা, মহানগর, প্রভাতী, গোধূলী সহ বিভিন্ন চট্টগ্রামগামী ট্রেন পেয়ে যাবেন কমলাপুর স্টেশন থেকে। চট্টগ্রাম স্টেশনে নেমে আপনাকে বান্দরবান পৌছাতে আপনাকে যেতে হবে বদ্দারহাট অথবা পূর্বানী বাস স্টেশনে। বাসের টিকিট পেয়ে যাবেন ২০০- ৩০০ টাকার মধ্যে।
বান্দরবান থেকে স্বর্ণমন্দির আসতে সি এন জি, মাহেন্দ্র, চান্দের গাড়ি সহ বিভিন্ন ধরনের বাহন পেয়ে যাবেন। রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে আসলে একসাথে ঘুরে দেখতে পারবেন বান্দরবানের আশেপাশে স্বর্ণমন্দিরসহ অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র। শুধু স্বর্ণমন্দির ঘুরে আসতে আপনাকে গুনতে হতে পারে গাড়ির ধরন অনুযায়ী ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা৷
থাকবেন কোথায় ?
স্বর্ণমন্দির ঘুরে আসতে একদিনেই একসাথে আপনি দেখতে পারবেন আশেপাশের দর্শনীয় স্থান। সেক্ষেত্রে থাকার জন্য, বান্দরবানের আশেপাশেই আপনি পেয়ে যাবেন পর্যাপ্ত সুবিধাসহ হোটেল, মোটেল ও কটেজ। রুমের ধরন অনুযায়ী ভাড়া হবে ৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা। বান্দরবান শহরে পর্যাপ্ত সুবিধসহ সব ধরনের থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন।
খাবেন কোথায় ?
খাওয়া দাওয়ার জন্য বান্দরবান শহরেই আপনি পেয়ে যাবেন ছোট বড় রেস্তোরা ও হোটেল।
বান্দরবান শহরের জনপ্রিয় রেস্তোরা গুলোর মধ্যে তাজিং ডং, মেঘদূত, রূপসী বাংলায় পেয়ে যেতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী খাবার। পাশাপাশি, কিছু শুকনো খাবার ও পানি সাথে বান্দরবানের আশেপাশের স্থান দর্শনের ক্ষেত্রে।
টিপস
- স্বর্ণমন্দির ঘুরে আসতে চাইলে বান্দরবান শহর থেকে শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানি নিয়ে নিতে ভুলবেন না।
- প্লাস্টিক, আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে স্বর্ণমন্দিরের সৌন্দর্য্যে আঘাত ফেলবেন না।
- আদিবাসীদের হাতের তৈরী তৈজসপত্র কিনতে চাইলে পেয়ে যাবেন মন্দিরের আশেপাশে।
- আদিবাসীদের অসম্মান করা হয়, এমন কোনো আচরণ করবেন না।
- বান্দরবান পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় বৃষ্টির সময় পিচ্ছিল হয়ে যায়। তাই শীতের সময় স্বর্ণমন্দির ভ্রমনের জন্য উপযুক্ত। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী হতে পারে উপযুক্ত সময়।
সতর্কতা
- বান্দরবান শহর থেকে সি এন জি, মাহেন্দ্র অথবা যেকোনো ধরনের গাড়ি ভাড়া করার সময়, স্টেশন থেকে ভাড়া করবেন ও সঠিক দরদাম করে নিবেন।
- প্রাইভেট কার নিয়ে আসলে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে অথবা গাইড ভাড়া করে পথ নিশ্চিত হয়ে নিবেন। পথ হারিয়ে ফেললে পাহাড়ি রাস্তায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।
- পাহাড়ি এলাকা ও শহরের বাহিরে হওয়ায় নেটওয়ার্ক পাওয়া কষ্টসাধ্য। রবি ও টেলিটিক সিম সাথে নিতে পারেন ইমারজেন্সি কন্টাক্ট এর জন্য
- পাহাড়ি রাস্তা হওয়ায় ড্রাইভিং এর সময় অতিরিক্ত সাবধানতা প্রয়োজন। বৃষ্টির সময় আঁকাবাঁকা রাস্তা পরিহার করা শ্রেয়।
- পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় সব জায়গায় খাবার ও পানির সুব্যবস্থা নাও থাকতে পারে। তাই সাথে শুকনো খাবার ও পানি রাখা প্রয়োজন।