ড্রিম হলিডে পার্ক

ড্রিম হলিডে পার্ক
শেয়ার করুন সবার সাথে

ড্রিম হলিডে পার্ক

শহুরে জীবনের নানা ব্যস্ততা আর ইট পাথরের দালান ভেদ করে যখন সবুজের চিহ্ন দেখতে সবকিছু থেকে ছুটি নিয়ে পরিবার নিয়ে আপনি হয়ত কোথাও থেকে ঘুরে আসতে চান, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে এক দিনের বেশি সময় বের করা মুশকিল! হ্যাঁ! ঠিক আপনাদের জন্যই নরসিংদী জেলায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে অবস্থিত ড্রিম হলিডে পার্কটি (Dream Holiday Park) নির্মিত হয়েছে।

প্রায় ষাট একর জায়গার উপর নির্মিত এই হলিডে থিম পার্কটিতে কি নেই—ওয়াটার বাম্পার কার, ট্রেন, সাইকেল, স্পিডবোট, জেড ফাইটার সহ আরো নানা আকর্ষণীয় বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। আর ঠিক একারণেই প্রতিনিয়ত এই থিম পার্কটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও ছুটির দিনগুলোতে নানা জায়গা থেকে আসা মানুষের সমারোহ ঘটে এই পার্কে।

এই পার্কে আপনি পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তার সাথে খুব চমৎকার কিছুটা সময় পার করতে পারবেন। নামটি ড্রিম হলিডে পার্ক, আর ঠিক তাই ত্রিশটির মত রাইডের সমারোহে এই পার্কটি যেন শহুরের জীবনে কিছুটার স্বপ্নের মতই। এই হলিডে পার্ক সম্পৃক্ত যাবতীয় তথ্যাবলি আপনি এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন। কীভাবে যাবেন, কি খাবেন—এমনকি রাত্রিযাপন করতে পারবেন কি না এখানে। এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ সব ধরণের তথ্য এখান থেকে পেয়ে যাবেন।

টিকেটের মূল্য ও ফ্যামিলি প্যাকেজ

এই ড্রিম হলিডে পার্কের পার্ক এবং সাফারি অংশে প্রবেশ করতে পারবেন জনপ্রতি ২২০ (৩ থেকে ৮ বছর বাচ্চাদের টিকেট মূল্য) এবং ৩২০ (বড়দের টিকেট মূল্য) টাকা।



তবে আপনি যদি এই থিম পার্কের ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করতে চান তাহলে আপনাকে গুনতে হবে ৩২০ টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন রাইডস এর টিকেট মূল্য ৬০ থেকে ১১০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

এখানকার ফ্যামিলি প্যাকেজের মাধ্যমেও আপনি একসাথে সবগুলো রাইড উপভোগ করতে পারবেন। এই প্যাকেজে আপনি ৪ জনের জন্য ৪৫০০ টাকার মধ্যেই সবগুলো রাইডে চড়ার সুবিধা পেয়ে যাবেন। এছাড়া কাপল প্যাকেজের মধ্যে আপনি দুই জনের জন্য ২৫০০ টাকার মধ্যে পাবেন সব ধরণের রাইডের সুযোগ সুবিধা।

জেনে রাখা ভালো যে এখানে মুক্তিযোদ্ধা, গোল্ডেন জিপিএ ৫ শিক্ষার্থী, এতিম এবং প্রতিবন্ধীদের প্রবেশ মূল্য নেই।

ড্রিম হলিডে পার্কের আকর্ষণ

এই চমৎকার পার্কের প্রধান আকর্ষণ হল এখানকার পরিবেশ। পার্কে প্রবেশ করলেই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এখানকার চমৎকার সব স্থাপত্য—ইমু পাখি, ক্যাসল ইত্যাদি চমৎকার দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবে। এছাড়া এখানকার রাইডগুলোতে চড়ার জন্যই মূলত আপনার এখানে আসা, আর আপনি যদি রোমাঞ্চ পছন্দ করেন তাহলে এখানকার এয়ার বাই সাইকেলে চড়তে পারেন।
দুজন বসে পার্কের উপর দিয়ে একটি লাইন রয়েছে, সেই লাইনে আপনি বাইসাইকেল সদৃশ একটি পা চালিত যান চালাতে পারবেন। এছাড়া এখানে আরো রয়েছে নাগেট ক্যাসেল, কাইট ফ্লাইং, সুইং চেয়ার, ৯ডি মুভি, ওয়াটার কার, মটর বাইক, স্পিড বোট, প্যাডেল কোস্টার, বুল রাইড, বুলেট ট্রেন, ঘোস্ট হাউজ, ক্যাবেল কার, বাম্পার কার ইত্যাদি চমৎকার সব চমৎকার রাইড রয়েছে এখানে।

ড্রিম হলিডে পার্কে যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে বাসে 

আপনি যদি ঢাকা থেকে বাসে করে ড্রিম হলিডে পার্কে যেতে চান তাহলে নরসিংদীগামী বাসে চড়তে হবে। ঢাকার বিভিন্ন স্থান যেমন মহাখালী, সায়দাবাদ, কমলাপুর, গুলিস্তান থেকে আপনি বাস পেয়ে যাবেন। বনানী থেকে যদি যেতে চান তাহলে পিপিএল সুপার বাস এবং গুলিস্তান থেকে মেঘালয় বাস আপনাকে সরাসরি ড্রিম হলিডে পার্কের গেট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারবে।



এর জন্য আপনার খরচ হবে জনপ্রতি ৯০ থেকে ১০০ টাকার মত। মহাখালী থেকে আসলে নরসিংদীর পাঁচদোনা মোরে নামতে হবে। সেখান অটোতে করে থেকে জনপ্রতি ১০-১৫ টাকায় চলে যেতে পার্কের গেটের কাছে। কেউ চাইলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে নরসিংদীগামী এসি বিআরটিসি বাসে করে সরাসরি আসতে পারেন এই পার্কে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে 

আর আপনি যদি ট্রেনে করে যেতে যান তাহলে কমলাপুর এবং বিমান বন্দর ষ্টেশন থেকে নরসিংদীর ট্রেনে উঠতে পারেন। আন্তঃনগর এগারসিন্দুর অথবা মহানগর ট্রেনে করে যেতে পারবেন, এছাড়া ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী যে কোন একটি লোকাল ট্রেনে করে আপনি চলে আসতে পারেন নরসিংদী।

নরসিংদী ষ্টেশন থেকে লোকাল বাস অথবা সিএনজি পেয়ে যাবেন ড্রিম হলিডে পার্কে যাওয়ার জন্য। তবে দিনে গিয়ে দিনে আসার ক্ষেত্রে ট্রেনে যাওয়ার চেয়ে বাসে যাওয়ায় উত্তম। কারন, সকালে লোকাল ট্রেন ধরে আসলে সময় লাগবে অনেক।

ভিডিও দেখুনঃ

খাবেন কোথায়

আপনি যদি পরিবার নিয়ে ড্রিম হলিডে পার্কে যান, তাহলে খাবার নিয়ে আপনি চিন্তিত হতে হবে না। কেননা দূর দূরান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের কথা বিবেচনা করেই এখানে রয়েছে ড্রিম হলিডে পার্কের নিজস্ব রেস্তোরাঁ। নাগালের মধ্যে থাকা দামেই আপনি এখানে পেয়ে যাবেন চাইনিজ, ইন্ডিয়ান ও নানা ধরনের বাংলা খাবার। এছাড়াও বৈকালীন নাস্তার জন্য পাবেন চটপটি, ফুচকা সহ আরো বেশ কিছু মুখরোচক খাবার। আরো পাবেন চা-কফির সুব্যবস্থা। তাছাড়া পার্কের বাহিরে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান আছে, সেখান থেকেও দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।

থাকবেন কোথায়

আপনি চাইলে এখানে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এখানে রয়েছে থাকার জন্য সুব্যবস্থা। এখানে আপনি সম্পূর্ণ কটেজ ভাড়া নিয়ে থাকতে চাইলে খরচ হবে প্রতিদিন ১০,০০০ টাকা। আর এই কটেজের একটি ইউনিট নিয়ে পরিবার সহ থাকতে চাইলে আপনার খরচ হবে ৫০০০ টাকা। তবে আপনার কাছে যদি এই মূল্য অনেক বেশি মনে হয় তাহলে আপনার চিন্তিত হতে হবে না, কেননা নরসিংদীতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছে নানা রকম থাকার ব্যবস্থা।

কয়েকটি সরকারি গেস্ট হাউজঃ

সার্কিট হাউজ, নরসিংদী ০২৯৪৬২০৮৩
জেলা পরিষদ পোস্টাল বাংলো ০২৯৪৬৭৬৫
সড়ক বিভাগের ডাক বাংলো ০২৯৪৬৩১৮১
রেস্ট হাউজ, সিভিল সার্জন কার্যালয় ০২৯৪৬২২৬০

বেসরকারি কয়েকটি হোটেল

নিরালা হোটেল ০২৯৪৬৩৩৯৩
হোটেল আল আরাফাত ০১৭১২১৩০১৩৯
হোটেল মমতাজ ০১৭১১৯৫২১২০
হোটেল আজিজ ০১৭১২০৭০২৩১

ড্রিম হলিডে পার্কের পিকনিক স্পটের ভাড়া

এই থিম পার্কে মধুরিমা এবং মায়াবী নামক দুটো পিকনিক স্পট রয়েছে। মায়াবী পিকনিক স্পটে যে কোন ছুটির দিনে ৩০০ জনের জন্য আপনার খরচ হবে মোট এক লক্ষ টাকা। তবে ছুটির দিন ব্যতীত অন্য যে কোন দিনে আপনার খরচ হবে ৩০০ জনের জন্য নব্বই হাজার টাকার মত।

এছাড়া মধুরিমা স্পটে ছুটির দিনে ৫০০ জনের জন্য খরচ হবে দেড় লক্ষ টাকা আর অন্য যে কোন দিনে খরচ হবে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। তবে এর সাথে আপনার ১৫% ভ্যাট সংযুক্ত হবে।

সতর্কতা

আপনি যদি এই পিকনিক স্পট ভাড়া নিতে চান তাহলে অবশ্যই নুন্যতম দুই সপ্তাহ আগে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবেন। এতে করে পিকনিক স্পট ভাড়া নিতে সুবিধা হবে। বিস্তারিত জানতে ড্রিম হলিডে পার্ক কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ করুনঃ

০১৭১১৪৫৩৪২৯, ০১৭৬২৬৯৬৩০২ এবং ০১৭৬২৬৯৬৩০৩
ইমেইল – dreamholidayltd@gmail.com
ওয়েবসাইট- www.dreamholidayparkbd.com
ফেসবুক পেজ: www.facebook.com/dreamholidaypark

হেড অফিস

সিটি ভবন, (৭ম ফ্লোর) ২০-২১, বি,
ব- এভিনিউ, ঢাকা। +৮৮ ০২৯৫৭০১৪০৪১ অথবা ৯৫৫৮৫৫২

নারায়ণগঞ্জ অফিস

৫৬, মালিহা রোড, প্রাইম ব্যাংক ভবন
গ্রাউন্ড ফ্লোর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা
মোবাইলঃ +৮৮ ০২৭৬৩০২২৫ অথবা ০১৭১১৪৫৩৪২৯

ভ্রমণ টিপস

  • ঢাকার যানজটের কথা বিবেচনায় রেখে বাসা থেকে সঠিক সময়ে বের হবেন।
  • সাথে পানি এবং চিপস জাতীয় হালকা খাবার নিয়ে নিতে পারেন।
  • ড্রিম হলিডে পার্ক আজকে খোলা আছে কি না যাত্রা করার আগেই তাদের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিন।
  • বেশ কয়েকজন একসাথে গেলে যে কোন জায়গায় খরচ কম হয়, তাই গ্রুপ করে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • যাত্রা করার সময় প্রয়োজনীয় কাগজ এবং টাকা সাথে আছে কি না চেক করে নিন।
  • সবসময় সাথে নিজের আইডি কার্ড অথবা ফটোকপি রাখবেন।

আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

আরও পড়ুনঃ 

ছবিঃ অরুপ দত্ত


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!