জাফলং
জাফলং(Jaflong), প্রকৃতি যেখানে তার অপার সৌন্দর্যের পসরা নিয়ে পর্যটকদের মনে দোলা দেয়। উঁচু উঁচু পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে বয়ে চলা কোন নদীতে নৌকায় চড়ে যদি কিছু সময় আনমনা হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে আসতে হবে জাফলং এ। সিলেট জেলার গোয়াইঘাট উপজেলার সীমান্তঘেষা বাংলাদেশের একটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে জাফলং সুপরিচিত লাভ করেছে বহু আগে থেকেই। আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আসবেন জাফলং এ, পাশাপাশি আরও কি কি স্পট ঘুরে বেড়াতে পারবেন এক দিনের ট্যুরেই।
জাফলং যাওয়ার উপযুক্ত সময়
বর্ষার শুরুতে বা শেষে গেলে জাফলং এর প্রকৃত সৌন্দর্য্যের দেখা পাবেন। তবে, কেউ চাইলে বছরের অন্যান্য সময়ও ঘুরে আসতে পারেন। কারন, একেক ঋৃতুতে একেক রূপে সাজে সজ্জিত হয় এই জাফলং।
জাফলং এ যাবেন কিভাবে
জাফলং যেহেতু সিলেটে অবস্হিত, তাই দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেটে আসতে হবে। বাস, ট্রেন অথবা আকাশ পথ – এই ৩টি যোগাযোগের সবগুলোরই ব্যবস্হা আছে সিলেটে আসার জন্য।
ঢাকা থেকে সিলেট
বাসে করে ঢাকা থেকে সিলেট আসতে চাইলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে মহাখালি / সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে। এছাড়া ফকিরাপুল, গাবতলী থেকেও সিলেটগামী বাস পেয়ে যাবেন। হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক, গ্রীন লাইন, লন্ডন এক্সপ্রেস ইত্যাদি ছাড়াও কিছু লোকাল বাস যেমন মিতালী, বিসমিল্লাহ পরিবহন চলাচল করে এই রোডে। নন এসির ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৪৭০ টাকা। এসি বাসের ভাড়া ৮০০ থেকে ১২০০
টাকা। রাস্তায় কোন জ্যাম না থাকলে ৫-৬ ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন সিলেটে। সাধারনত রাত্র ১২টার বাসে ওঠলে সকাল ৬ টার মধ্যে যেতে পারবেন সিলেটে। এক্ষেত্রে আপনি সারাদিনে ৪-৫ টা স্পটে ঘুরে আবার রাতের বাসেই চলে আসতে পারবেন ঢাকাতে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে সকাল সকাল সিলেটে আসতে হলে আপনাকে ধরতে হবে উপবন এক্সপ্রেস (৭৩৯) ট্রেনটি। ঢাকা থেকে ৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে এই একটিতেই পাচ্ছেন রাতে রওনা দিয়ে সকালে সিলেটে আসার সুযোগ। ট্রেনটি বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রত্যেকদিনেই চলাচল করে এই রুটে। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রাত্র ৮ঃ৩০ মিনিটে ছাড়ে এটি। পোঁছায় ভোর ৫ টায়।
এছাড়া বিমানে করেও আপনি সিলেট পৌঁছাতে পারেন। বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। আসন ভেদে ভাড়া সাধারনত ৩০০০-১২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
চট্রগ্রাম থেকে সিলেট
চট্রগ্রাম থেকে ঢাকাগামী যে কোন বাসে করে প্রথমে আসতে হবে কাচঁপুর অথবা চিটাগাং বাস কাউন্টারের সামনে। সেখান থেকে এনা, শ্যামলী, হানিফ, গ্রীন লাইনের বাস পেয়ে যাবেন। নন এসি বাসগুলোর ভাড়া সাধারনত ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসি বাসের ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা। এছাড়া আপনি চাইলে ট্রেনেও আসতে পারেন। উদয়ন এক্সপ্রেস (৭২৩) ট্রেনটি চট্রগ্রাম থেকে রাত ৯ঃ৪৫ মিনিটে সিলেটে উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সিলেট এসে পৌঁছায় সকাল ৬ টায়। এটির সাপ্তাহিক বন্ধ শনিবার।
সিলেট থেকে জাফলং
৫ জনের একটি গ্রুপ হলে সিলেটের যে কোন জায়গা থেকে একটি সিএনজি রিজার্ভ করে জাফলং যেতে পারবেন। সিএনজি ভাড়া ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কয়টা স্হান ঘুরে দেখাবে সেটা সিএনজি ড্রাইভারের সাথে আগেই আলাপ করে নিবেন। সাধারনত জাফলং, তামাবিল বর্ডার, খাসিয়া পল্লী, শাপলা বিল, লালা খাল এই কয়েকটা স্হান থাকে তাদের ট্যুর প্যাকেজে। তবে, শীতকালে শাপলা বিলে পানি থাকে না, তাই না যাওয়াটাই ভালো। তাছাড়া গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১২ জন হলে কদমতলী বাস স্ট্যান্ড বা সিলেট রেল স্টেশন থেকে একটা লেগুনা রিজার্ভ করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২২০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
এছাড়া কেউ যদি বাসে যেতে চান, সেক্ষেত্রে কদমতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে চড়ে জাফলং যেতে পারবেন। তবে, এইক্ষেত্রে সময়টা একটু বেশী লাগবে। ভাড়া পড়বে ৭০-৮০ টাকা। বাসে ভ্রমণের সবচেয়ে বড় একটা অসুবিধা হল, পছন্দমত কোন একটা জায়গায় নেমে ঘুরে দেখতে না পারা। এক্ষেত্রে সিএনজি, লেগুনা এবং নিজস্ব প্রাইভেট কার থাকলে চলতিপথে নেমে ইচ্ছেমত যে কোন জায়গায় ঘুরে দেখা যায়।
খাবেন কোথায়
জাফলং পর্যটন স্পটের সাথে রয়েছে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। সম্ভব হলে এই সমস্ত রেস্টুরেন্ট এড়িয়ে চলবেন। কারন, পর্যটন স্পটগুলোতে খাবারের দাম তুলনামুলকভাবে বেশিই হয়। তাছাড়া খাবারের মান নিয়েও থাকে কিছু সংশয়। সবচেয়ে ভালো হবে যদি কিছু হালকা খাবার সাথে করে নিয়ে যায়। তাছাড়া স্পটগুলোতে ঘুরাঘুরি শেষে সিলেট শহরে এসে পানসি অথবা পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে পারবেন। এইক্ষেত্রে খাবারের মান যেমন ভালো হবে, তেমনি দামও থাকবে সাধ্যের মধ্যে। হরেক রকমের ভর্তা, বিভিন্ন মাছ আর মাংসের আইটেম থাকে দুপুর আর রাতের খাবারের তালিকায়। যে যার ইচ্ছেমত আইটেম অর্ডার করে মনমত খাবার খেতে পারবেন অনায়াসেই। এখানে সাধারনত সকালের নাস্তা ৫০-৭০ টাকা এবং দুপুর অথবা রাতের খাবার ২০০-৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে যায়।
থাকবেন কোথায়
জাফলং এ থাকার জন্য কিছু সবচেয়ে বেস্ট রিসোর্ট হচ্ছে জৈন্তিয়া হিল রিসোর্ট। বর্ষার মৌসুমে গেলে এখান থেকে মেঘালয় পাহাড়ের ঝর্ণা দেখতে পারবেন। এছাড়া সিলেট শহরে এসে থাকতে পারেন।
শহরের দরগা গেইট, আম্বারখানা, তালতলা, কদমতলীতে বিভিন্ন মানের অনেক হোটেল মোটেল গড়ে ওঠেছে।
বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অল্প খরচের মধ্যে থাকতে চাইলে তালতলার হোটেলগুলোতে ওঠতে পারেন। এখানে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে রুম পেয়ে যাবেন। এই রেটের হোটেলগুলো যেমনঃ হোটেল ইস্ট এন্ড, হোটেল গুলশান, হোটেল বিলাশ ইত্যাদি ছাড়া আরও হোটেল পাবেন। তবে, এই হোটেলে ওঠার আগে একটু যাচাই বাছাই করে নিবেন।
পরিবার পরিজন নিয়ে একটি ভালো মানের হোটেলে থাকতে হলে জিন্দাবাজারের দিকে খুঁজতে হবে। কারন, এখানে আপনি চাইলে হোটেলে থাকার পাশাপাশি অর্থ সাশ্রয় করতে পানসি অথবা পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। এখানে হোটেল গ্র্যান্ড ভিউ নামে একটি হোটেল আছে যেখানে সিঙ্গেল রুম ২০০০ টাকা এবং ডাবল বেড এসি রুম ৩০০০ টাকা থেকে শুরু। এটি পশ্চিম জিন্দাবাজারের বারুদখানা রোডে অবস্হিত। এছাড়াও আরও কিছু হোটেল পাবেন।
আশেপাশের আরও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
- খাসিয়া পল্লী
- তামাবিল বর্ডার
- শাপলা বিল
- লালা খাল
ছবি ও লেখকঃ Monzur Khan