Lakeshore Resort Kaptai
একটি ঝুলন্তব্রিজ, তার দুই পাশে নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। পাহাড় ও কাপ্তাই লেক দিয়ে ঘেরা এই ঝুলন্ত ব্রিজ পার হওয়ার সময় আপনার মনে হতে পারে, পাহাড়—নীলজল আর আকাশের মিতালীর লেকশোর রিসোর্ট (Lakeshore Resort)নামক এই জায়গাটিতে এতদিন কেন আসেন নি। এই অবকাশ কেন্দ্রে আপনাকে স্বাগত জানাবে প্রকৃতি তার অপরূপ সব দৃশ্য নিয়ে। নানা রকমের প্রাণীজগত আর পাখপাখালি ঘেরা এই জীববৈচিত্র্য আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে। তাহলে আর দেরী কেন, এখনই ব্যাগ ব্যাগেজ রেডি করে বের হয়ে পড়ুন এই সবুজের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে। যে কোন জায়গায় ভ্রমণ করার আগে সেখানে কীভাবে যাবেন, কোথায় থাকবেনসহ আরো নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি জানা খুবই প্রয়োজন। তেমনই সব তথ্য জানতে পারবেন এই লেখায়, আরো জানতে পারবেন লেকশোর রিসোর্টে আসার আগে যে কাজটি আপনাকে অবশ্যই করতে হবে।
লেকশোর রিসোর্টের আকর্ষণসমূহ
বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন লেকশোর রিসোর্টের সুইমিং পুলের ছবি দেখেন, তখন অনেকই হয়ত প্রথম দেখায় মনে করতে পারেন এটা হয়ত ইন্দোনেশিয়ার কোন একটি রিসোর্টের সুইমিংপুল। নীল জলরাশি আর সামনে খোলা আকাশের নিচে কাপ্তাই লেক। দৃষ্টি প্রসারিত করলে দেখতে পাবেন দিগন্ত ঘেরা নানা পাহাড়ি সবুজের কলোরব। আর তাই এই ছবি দেখে যারা এখানে আসেন, তাদের মনে তো এই পুলে নামার একটা বাসনা থাকেই। তবে এই রিসোর্টে প্রবেশের রয়েছে বিশ টাকা মূল্যের টিকেট ব্যবস্থা।
এছাড়াও সুইমিং পুলে ঘন্টা খানেক সাতার কাটার জন্য আপনাকে আরো পঞ্চাশ টাকা গুনতে হতে পারে। সুইমিংপুল ছাড়াও এখানে একটি চমৎকার হেলিপেড রয়েছে যার চারপাশে ছাউনি দিয়ে ঘেরা বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এত উপর থেকে এক নজরে কাপ্তাইলেক, পাহাড় আর এই নদীর রূপে মুগ্ধ হয়ে রইবে আপনার ভ্রমণ পিয়াসুমন। হ্যালিপেডের এই জায়গাটি থেকে কাপ্তাই লেক একদমই অন্যরকম এক সৌন্দর্য নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। আরো রয়েছে দারুণ এক রোমাঞ্চকর কায়াকিং এর ব্যবস্থা। ঘণ্টায় দেড়শ টাকার মত খরচ করে এখানে মনে রাখার মত কিছু সময় কাটাতে পারবেন।
ঘুরাঘুরির মাঝে যদি আপনার মনে হয় কোথাও একটু বসে যদি আড্ডা দেওয়া যেত, সেই সাথে কিছু খাওয়া দাওয়া তাহলে কতই না ভালো হত। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই এখানে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান খাবারের হোটেল। মোটামুটি সব ধরনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। চমৎকার প্রকৃতির ভিড়ে আপনার মনে হয়ত ইতোমধ্যেই প্রশ্ন এসেছে যে, পরিবার পরিজন নিয়ে যাওয়ার জন্য এই জায়গাটি নিরাপদ তো? হ্যাঁ! এই সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় এই জায়গাটি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। আর তাই নিরাপত্তা নিয়ে আপনাকে বাড়তি কোন ঝক্কি পোহাতে হবে না একটুও।
থাকবেন কোথায়
লেকশোর রিসোর্টে রয়েছে চমৎকার বেশ কয়েকটি রুম। তবে এগুলোর ভাড়া আপনি খুব অল্পের মধ্যে পাবেন না। লেকের একদম পাশঘেঁষেই চারজন থাকার মত এসি রুম রয়েছে, এই রুমে রাত্রি যাপনের জন্য আপনাকে প্রায় সাত হাজার টাকার মত গুনতে হবে। এছাড়াও লেকশোর রিসোর্টের অন্যান্য বেশ কয়েকটি রুম রয়েছে যেগুলোর ভাড়া প্রায় তিনহাজার থেকে পাঁচহাজার টাকার মত। আর তাই আপনার যদি বাড়তি বাজেট থাকে তাহলে আপনি লেকশোর রিসোর্টে থাকার প্ল্যান করতে পারেন। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, আপনি যদি লেকশোর রিসোর্টে নাও থাকতে চান তাহলে কাপ্তাইয়ে বেশ কিছু ভালো হোটেল রয়েছে থাকার জন্য। যেগুলোতে থাকতে হলে আপনাকে অনেক বেশি ভাড়া গুনতেও হবে না। এই ধরনের বেশ কয়েকটি রিসোর্টের নাম এবং ফোন নাম্বার নিম্নে দেয়া হল। প্রয়োজনে আপনি ভ্রমণ করার আগে থেকেই এখানে কল করে রুম বুকিং করে যেতে পারেন। এতে বাড়তি কোন ধরণের ঝামেলা পোহাতে হবে না আপনাকে।
হোটেল গোল্ডেন হিল (Golden hill) 01820-304714
হোটেল গ্রিন ক্যাসেল (Green Castle) 61200
হোটেল লেক ভিউ (Lake View) 62063
হোটেল সুফিয়া (Hotel Sufiya) 62145
খাবেন কোথায়
লেকশোর রিসোর্টে খাবার নিয়ে আপনাকে তেমন একটা চিন্তা করতে হবে না। নানা ধরণের সামুদ্রিক খাবারের পাশাপাশি বাঙ্গালিয়ানার ছোঁয়াও পাবেন এখানকার খাবারের মধ্যে ভাত, ভর্তা, মাছ, ডালের পাশাপাশি সকাল বিকালের নাস্তার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। তবে এখানকার খাবারের দামগুলো তুলনামূলকভাবে বাইরে থেকে একটু বেশিই বটে। তাই যারা সাধারণত বাজেট ট্যুর করার প্ল্যান করে বাসা থেকে বের হন,তারা আশেপাশে আরো বেশ কিছু চমৎকার হোটেল রয়েছে সেগুলোতে একশ থেকে দুইশ টাকার মধ্যেই দুপুরের খাবার সেরে নিতে পারবেন। উল্যেখযোগ্য,দুইটি খাবারের জায়গা হল জুমরেস্তোরাঁ এবং প্যারাডাইস ক্যাফে। পর্যটকদের মধ্যে এই দুইটি খাবার জায়গা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইদানীং। আর তাই আপনি ওরসনা বিলাশ করতে পারেন এখান থেকে।
যাবেন কীভাবে
লেকশোর রিসোর্টে যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই কাপ্তাই যেতে হবে। আর আপনি যদি চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাইয়ে যেতে চান তাহলে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কিছুক্ষণ পরপরই কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে চড়ে বসতে পারেন।এখান থেকে একশ টাকার মধ্যেই আপনি কাপ্তাই চলে যেতে পারেন। কাপ্তাই নতুন বাজার বাস স্টপে আপনাকে নামিয়ে দেয়া হবে। সেখান থেকে স্থানীয় সিএনজি এর মাধ্যমে আপনি সরাসরি লেকশোর রিসোর্টে চলে যেতে পারবেন।নতুন বাজার থেকে সিএনজিতে কাপ্তাই লেকশোর রিসোর্টে যেতে হলে আপনাকে গুনতে হবে ১২০ টাকার মত।
আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে চাইলে বাসে করে সরাসরি কাপ্তাই চলে যেতে পারেন।কাপ্তাই যাওয়ার জন্য বেশ কিছু বাসের লিস্ট এবং তাদের ফোন নাম্বার পেতে হলে আপনি আমাদের “কাপ্তাই ভ্রমণ” আর্টিকেলটি পড়ে দেখতে পারেন।
সিলেট থেকে কাপ্তাই যেতে হলে আপনাকে প্রথমে চট্টগ্রাম আসতে হবে। ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে এনা ট্রান্সপোর্ট,সৌদিবাসসহ আরো বেশ কিছু বাস পেয়ে যাবেন।এসি বাসে করে যেতে হলে আপনাকে ভাড়া পোহাতে হবে প্রায় ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মত।
বিবেচনায় রাখার মত কয়েকটি ভ্রমণ টিপস
- ভ্রমণ আমরা আনন্দের জন্য করে থাকি,আর তাই যেখানেই যাই না কেন,সেখানে যাওয়ার বিস্তারিত জেনে নেয়াটাই ভালো।
- পরিবার পরিজন নিয়ে কোথাও ভ্রমণ করার আগে সেই স্থানের নিরাপত্তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
- প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের একটি লিস্ট আগে থেকেই তৈরি করে রাখুন
- বাসা থেকে বের হওয়ার সময় লিস্টের সবকিছু আছে কি না চেক করে নিন।
সতর্কতা
লেকশোর রিসোর্টে আসার আগে আপনি অবশ্যই এখানে যোগাযোগ করে আসবেন। যেহেতু সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত এলাকা তাই ভ্রমণের আগে তাদের সাথে যোগাযোগ করে নিন। এছাড়া আপনি যদি এখানে রাত্রিযাপন করতে চান তাহলে অবশ্যই আগে থেকেই রুম বুকিং দিয়ে আসুন।
Lakeshore Resort, Kaptai
Contact Number: 01859-778065
আশেপাশে দেখার মত জায়গা
- যেহেতু কাপ্তাই চলে এসেছেন তাই এখান থেকে অদূরে রাঙামাটি ঝুলন্ত ব্রিজ অবশ্যই দেখে আসবেন। এখানে বর্ষাকালে পানির লেভেল অনেক উপরে থাকে বিধায় শীতকাল এই ঝুলন্ত ব্রিজ দেখার উপযুক্ত জায়গা।
- রাঙামাটিতে শুভলং ঝর্না আপনার চিত্ত বিনদিত করতে পারবে অবশ্যই।
- এছাড়া কাপ্তাইবাঁধ, কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র, নেভী ক্যাম্প পিকনিক স্পট, জুম রেস্তোরা পিকনিক স্পট, চিৎ মরম বৌদ্ধমন্দির ইত্যাদি জায়গা থেকে অবশ্যই ঘুরে আসবেন।
- শেখ রাসেল ইকো পার্কে আপনি ক্যাবল কারে চলে বেশ চমৎকারএ কটু সময় অতিবাহিত করতে পারবেন।
ছবিঃ Rayhan Abedin