মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝির কথা নিশ্চয় অনেকের মনে আছে। পদ্মা পাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের কথা । যেথায় যেতে হলে নৌপথই একমাত্র পথ। ২০২০ সালে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে ইতি ঘটলো সে সময়ের। এখন সড়ক পথেও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের যোগাযোগ ঘটবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পটির নাম হলো পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। এটি শুধু আমাদের দেশে নয় সমস্ত এশিয়া মহাদেশের মধ্যেই অন্যতম বড় সেতু। যার উপরের স্তরে তৈরী করা হয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচে এক লেনের রেলপথ। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যর মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে এই সেতুটিতে। ৩০ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সেতুটির আয়তন ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ। এই বিশাল সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। এর মাধ্যমে যুক্ত হচ্ছে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরিয়তপুর, মাদারীপুর জেলা ।
আগামী ২০২২ সালে যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হবে। তবে এর আগেই যেন তর সইছেনা স্বপ্নের সেতুটিকে একবার কাছ থেকে দেখার জন্য। প্রতিদিনই বাড়ছে দর্শনার্থীর ভীড়। তাই বিস্তারিত জানাবো আপনিও কিভাবে নিজ চোখে দেখতে পারবেন পদ্মা সেতুকে।
কিভাবে যাবেন
পদ্মা সেতুকে সামনাসামনি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে মাওয়া ফেরীঘাটে। এটি ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জে অবস্থিত। এরপর ট্রলার ভাড়া নিয়ে আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন পদ্মা সেতু।
ঢাকা থেকে কিভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে মাওয়া ঘাটে গিয়ে পদ্মাসেতু দেখে দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। যা ঢাকাবাসীর জন্য হতে পারে একদিনের আদর্শ ট্যুর। এক্ষেত্রে আপনি ৪টি রুটে মাওয়া যেতে পারেন।
রুট ১ নং গুলিস্তানের সুন্দরবন স্কয়ার থেকে মাওয়াগামী ইলিশ বাস ছাড়ে ৭০টাকা ভাড়ায়। এবং ফুলবাড়ীয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ১৩০ টাকা ভাড়ায় বিআরটিসি এসি বাসে করেও যেতে পারেন।
রুট ২ নং যাত্রাবাড়ী বাস স্ট্যান্ডে ইলিশ নন এসি ৭০ টাকা এবং এসি বাস পাবেন ১৩০টাকায়।
রুট ৩ নং যারা উত্তরা বা টঙ্গী থেকে মাওয়া যাবেন তারা প্রচেষ্টা পরিবহন দিয়ে যেতে পারেন ১০০ টাকা ভাড়ায়।
রুট ৪ নং গাবতলী বাস স্ট্যান্ড থেকে ১০০ টাকা ভাড়ায় বসুমতী বাস ছাড়ে। এছাড়া মিরপুর ১২ থেকে স্বাধীন এক্সপ্রেস পরিবহন দিয়ে মাওয়া যেতে পারেন। ভাড়া পরবে ১০০টাকা।
- আরও পড়ুন | ঢাকা থেকে বরিশাল বাস ভাড়া ও সময়সূচী
চট্টগ্রাম থেকে যেভাবে যাবেন
চট্টগ্রাম থেকে এস. আলম, সৌদিয়া, গ্রিন লাইন, সোহাগ, ইউনিক সহ বিভিন্ন বাস ছাড়ে ঢাকার উদ্যেশে। নন এসি ভাড়া ৪৮০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া শুরু ৮০০টাকা থেকে। এই ক্ষেত্রে কয়েকটি ঢাকাগামী বাসের সাথে যোগাযোগ করে রওনা দেয়ার জন্য ফোন নম্বর গুলো হলো, এস. আলম সার্ভিস 031-617372, সৌদিয়া 01919-654903, গ্রিন লাইন 01730-060085, ইউনিক 01963-622254 ।
এ সকল বাসে করে আপনাকে নামতে হবে যাত্রাবাড়ী কাউন্টারে সেখান থেকে ২০টাকা রিকশা ভাড়া করে যাত্রাবাড়ী মাওয়া বাস কাউন্টার গিয়ে ইলিশ বাস এসি বা নন এসি করে চলে যেতে পারবেন মাওয়াঘাট।
আবার ইচ্ছে করলে ট্রেনে করেও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে পারেন। তূর্ণা নিশিথা, মহানগর গোধূলী, মহানগর প্রভাতী, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মেইল ইত্যাদি ট্রেন চট্টগ্র্রাম থেকে ঢাকা আসে। ভাড়া ২৫০-১২০০ টাকার মধ্যে। সেক্ষেত্রে কমলাপুর রেলস্টেশন নেমে সিএনজি বা লোকাল পরিবহনে যাত্রাবাড়ী মাওয়া বাস কাউন্টার যাবেন এবং সেখান থেকে মাওয়াঘাটের বাস ধরবেন।
সিলেট থেকে যেভাবে যাবেন
সিলেট থেকে ঢাকার উদেশ্যে হানিফ, শ্যামলী, এনা, ইউনিক ইত্যাদি বাস ঢাকা আসে এক্ষেত্রে ভাড়া ৪৫০টাকা থেকে শুরু। এ সকল বাসের সাথে যোগাযোগ করার জন্য নম্বর-গুলো হলো, হানিফ 01730376343, শ্যামলী ০১৯০৮৮৯৯৫৭৯, এনা 01619-737656, ইউনিক 01963-622248 । এছাড়া লোকাল বাস মিতালী এবং বিসমিল্লাহ পরিবহন করে ২৫০ টাকা ভাড়ায় সিলেট থেকে ঢাকা আসতে পারেন। নামতে হবে যাত্রাবাড়ী বাস কাউন্টার। সেখান থেকে রিকশা করে যাত্রাবাড়ী মাওয়া বাস কাউন্টার থেকে বাস করে মাওয়া ঘাট।
রেলপথেও ইচ্ছে করলে সিলেট থেকে ঢাকা আসতে পারেন। পারাবত এক্সপ্রেস,জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস,কালনী এক্সপ্রেস ইত্যাদি ট্রেন সিলেট থেকে ঢাকা আসে। ভাড়া এসি এবং নন এসি ২৫০-১০০০ টাকা। এরপর কমলাপুর স্টেশন থেকে লোকাল পরিবহন করে যাত্রাবাড়ী মাওয়া বাস কাউন্টার। এরপর মাওয়া ঘাট।
মাওয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে পদ্মা সেতু দর্শন
পদ্মা সেতু মন মতো ঘুরে ঘুরে দেখতে হলে আপনাকে ঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করতে হবে। সেক্ষেত্রে মাঝারি ট্রলার গুলোর ভাড়া প্রতিঘন্টা ১০০০-১২০০ টাকা এবং বড় ট্রলার ভাড়া ১৫০০-১৮০০ টাকা।
কয়েকজন মিলে একসাথে একটি ট্রলার ভাড়া করলে খরচ কম হবে। এছাড়া পদ্মায় জেগে ওঠা কোনো চরে কিছু সময় কাটাতে চাইলে বা আপনি যদি পদ্মা সেতুর সাথে লৌহজংএর বেজগাঁওয়ের মৃধা বাড়ি দেখতে চান তাহলে ২-৩ ঘন্টার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে।
কোথায় এবং কি খাবেন
মাওয়া ঘাট অনেক আগে থেকেই বিখ্যাত ইলিশ মাছ ভাজা এবং পদ্মার পাড়ে বসেই পদ্মার তাজা মাছ খাওয়ার জন্য। ইলিশ মাছ খেতে হলে আপনাকে যেতে হবে শিমুলিয়া ঘাট বা মাওয়া মাছ বাজারের পেছনে। সেখানে ৮০০ থেকে বিভিন্ন দামে ইলিশ মাছ কিনে সেখানেই টুকরো করে ভেজে দেয়ার ব্যবস্থা আছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকম ভর্তা এবং সাথে বেগুনভাজা। খেয়ে দেখতে পারেন মাওয়ার ঐতিহ্যবাহী রসগোল্লাও।
থাকবেন কোথায়
এটি মূলত একদিনের ট্যুর। ঢাকাবাসীরা দিনে গিয়ে দিনে ঘুরে আসতে পারবে মাওয়া থেকে। কিন্তু যারা বাংলাদেশের অন্যন্য অঞ্চল থেকে মাওয়াতে পদ্মা সেতু দেখতে আসবেন এবং মাওয়া,পদ্মা সেতুর পাশাপাশি কাছের অন্য ট্যুরিস্ট স্পটগুলো দেখতে চান তারা ইচ্ছা করলে পদ্মা সেতুর পাশেই অবস্থিত মাওয়া রিসোর্ট থাকতে পারেন। মাওয়া রিসোর্টে শুধু একটি দিন অথবা সম্পূর্ণ একটি দিনের জন্য কটেজ ভাড়া করতে পারেন। শুধু দিনে থাকার ভাড়া নন এসি ৩০০০টাকা এবং এসি ৩৫০০ টাকা। আর রাতে থাকতে চাইলে নন এসি ৪০০০ টাকা এবং এসি ৪৫০০ টাকা। আপনি চাইলে শুধু ১০০ টাকা এন্ট্রি ফি দিয়ে ঢুকে ঘুরে দেখতে পারেন গ্রামীণ আবহে তৈরি রিসোর্টটি। সেই সাথে দুপুরের বুফে লাঞ্চ করতে পারেন ৬৫০ টাকায়।
অন্য আরো যেসব জায়গা থেকে পদ্মা সেতু দেখা যাবেঃ
মাওয়া ঘাট ছাড়াও শরীয়তপুর,মাদারীপুরবাসীরা জাজিরা এবং শিবচর ঘাট থেকে পদ্মা সেতু দেখতে পারবেন।
কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানঃ
- ৩ তলা টিনের মৃধা বাড়ি
- মাওয়া রিসোর্ট
- ইদ্রাকপুর কেল্লা
- পদ্মা রিসোর্ট
- অতীশ দীপঙ্করের পণ্ডিত ভিটা
- বারো আউলিয়ার মাজার
- হযরত বাবা আদম শহীদ (র.) এর মসজিদ
- রাজা বল্লাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘী।
ছবি তুলেছেনঃ Monzur Khan