মহেরা জমিদার বাড়ি

Mohera Jomidar bari

মহেরা জমিদার বাড়ির ইতিহাস

এক অনন্য অহমিকার মত জ্বলতে থাকা প্রকৃতির রূপ অনাস্বাদ করতে হয় দুচোখ দিয়ে। আবার কালের গর্ভে মানুষের লেপটে দেয়া অনেক স্মৃতিও কিছুটা প্রকৃতির মত সৌন্দর্য ছড়ায়। ঠিক তেমনই এক নিদর্শন দেখতে হলে—দু চোখ দিয়ে স্পর্শ করতে হলে; আপনাকে যেতে হবে টাংগাইলে। বাংলাদেশের যে সৌন্দর্য পূর্ণ ঐতিহ্যগুলো মানুষের হাতে গড়া তার মধ্যে এই জমিদার বাড়িটি অন্যতম। হ্যাঁ! কথা বলছিলাম টাংগাইলে অবস্থিত মহেরা জমিদার বাড়ি (Mohera Jomidar Bari) নিয়ে। স্পেনের করোডোভা নগরীর সাদৃশ্যে প্রায় আট একর জায়গা জুড়ে যেন শিল্পীর তুলিতে এঁকে দেয়া এক অনন্য সৌন্দর্যমন্ডিত এই নিদর্শনটি তৈরি করা হয়েছিল ১৮৯০ দশকের পূর্বে।

মহেরা জমিদার বাড়ি কিভাবে যাবেন

এই অসাধারণ ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি আপনাকে স্বচক্ষে দেখতে হলে প্রথমেই যেতে হবে টাঙ্গাইল জেলার নটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে। ঢাকা থেকে এই জায়গাটির দূরত্ব মাত্র ৭০ কিলোমিটার, তাই বুঝতেই পারছেন আপনি যদি চান তাহলে একদিনের একটি ট্যুর প্ল্যান করে ফেলতে পারেন খুব সহজেই। তবে আপনার এলাকা থেকে যদি টাঙ্গাইল কাছে হয় তাহলে অবশ্যই টাঙ্গাইল নটিয়াপারা বাস স্ট্যান্ডে চলে যাবেন।
আপনি বাংলাদেশের যে কোন জায়গা থেকেই প্রথমেই ঢাকা মহাখালী বাস টার্মিনালে যেতে হবে এবং সেখান থেকে মাত্র ১২০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যেই বাসে করে নটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছাতে পারবেন। বাসে উঠার সময় সুপারভাইজারকে জানিয়ে দিবেন আপনার গন্তব্য স্থল।



আপনি যদি মাখালি থেকে নিরালা বাসে করে আসেন তাহলে নেমে যাবেন ডুবাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে। এখান থেকে মাত্র ১৫ টাকা সিএনজি ভাড়াতেই আপনি যেতে পারবেন জমিদার বাড়ি। এছাড়া যদি রিজার্ভ করতে চান সিএনজি তাহলে ভাড়া হবে ৭৫ টাকার মত।

কি কি দেখবেন

সি এনজি নিয়ে মিনিট বিশেক যাত্রা করার পরেই আপনার চোখে পড়বে “বিশাখা সাগর” নামক একটি বিশাল দীঘি। বুঝতে পারবেন চলে এসেছেন এই জমিদার বাড়ি প্রবেশের গেটে। সেখান থেকে আপনাকে টিকেট কাটতে হবে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে।
টিকেট কেটে আপনি একটু ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখতে পাবেন একে একে বেশ কয়েকটি ভবন। এইসব ভবনকে লজ নামে বলা হয় এখানে, অ্যাঁর তাই প্রথম দর্শনেই কালিচরন লজ আপনার ভালো লেগে যাবে। সৌম্য সাদা এবং চমৎকার সব কারুকার্য খচিত এই ভবনগুলো আপনার ভ্রমণ পিয়াসু চোখে ভালো লাগবে বলে কথা দিচ্ছি। একে একে চৌধুরী লজ, মেহমান খানা সহ সবগুলো ভবন আপনার ভালো লাগলেও এই ভ্রমণের মূল আকর্ষণ এখনো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।



আনন্দ লজ নামক এই ভবনটি আপনার প্রথম দর্শনেই ভালো লাগবে। আর সবচাইতে চমকপ্রদ বিষয় হল এই ভবনের পুরো দেয়ালগুলো জুড়ে প্রাচ্য এবং পশ্চিমের স্টাইলের হাজারো কারুকার্য। বর্তমানে এই ভবনটি পুলিশের প্রশাসনিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ওহ, আপনাদের তো বলাই হল না! মহেরা জমিদার বাড়িটির বেশ কিছু অংশ বর্তমানে পুলিশের ট্রেনিং স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর আনন্দ লজের ঠিক পাশেই আপনি একই রকম সুন্দর দর্শন আরেকটি ভবন পাবেন, যার নাম মহারাজা লজ।
বিভিন্ন কারুকার্য দিয়ে খচিত এই মহারাজা লজটি কোন অংশেই আনন্দ লজ থেকে পিছিয়ে নেই। আর আপনি চাইলে নিজেকে একজন জমিদার হিসেবে এক রাতের জন্য অনুভব করতে পারবেন। হ্যাঁ! থাকতে পারবেন এখানে এক রাত। মহারাজার নিজস্ব ভবনে থাকতে আপনার খরচ হবে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা।

কোথায় খাবেন ও থাকবেন ?

এই জমিদার বাড়ির মধ্যেই গেটের সাথে একটি ক্যান্টিন রয়েছে যেখানে আপনি খাওয়া দাওয়া করতে পারবেন। এছাড়া বেশ ভিতরে পুকুরের পাশে পিকনিক স্পটে রয়েছে ২টি ক্যান্টিনে আপনার জন্য হালকা নাস্তার ব্যবস্থা। খুব বেশি দাম নয় এখানকার খাবার, একদম হাতের নাগালের মধ্যেই খাওয়া দাওয়া সেরে নিতে পারবেন।
মাত্র ৮০ টাকার মধ্যেই এখানে ভাত ডাল এবং মুরগীর একটি প্যাকেজ পেয়ে যাবেন। আর মজার বিষয় হল এই প্যাকেজের সাথে ভাত আনলিমিটেড। অর্থাৎ আপনি যদি ভ্রমণ পিয়াসুর সাথে সাথে একটু ভোজন রসিকও হয়ে থাকেন, তাহলে আর কিছু না হোক অন্তত ইচ্ছেমত ভাত খেতে পারবেন।

একটু মজা করলাম, যেহেতু আমরা ভ্রমণ করতে বের হয়েছি, তাই অতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া না করাই উত্তম। অতিরিক্ত খাবার আপনাকে ক্লান্ত করে দিতে পারে, যার ফলে ভ্রমণের সম্পূর্ণ মজা শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আর থাকার ব্যবস্থার কথা তো আগেই বলেছি, আপনি চাইলে এখানকার ডাক বাংলোতেও থাকতে পারবেন পরিবার পরিজন সহ। প্রতি রাত থাকার জন্য এখানে বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ রয়েছে, খরচ হতে পারে তিন হাজার থেকে দশ হাজার টাকার মত।
টাঙ্গাইল সদরে অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে থাকার মত। আবার ধনবাড়ি কিংবা মধুপুরের বেশ কিছু হোটেল রয়েছে যেগুলোর ভাড়া ৪০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই।

টাঙ্গাইলে আর কি দেখার আছে ?

টাঙ্গাইল এমন একটি এলাকা যেখানে দর্শনীয় স্থান রয়েছে অনেকগুলো। বিশেষ করে প্রায় একশ বছর পুরানো পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি রয়েছে, যা নাগপুর উপজেলার পাকুটিয়া ইউনিয়নের অবস্থিত। মানিকগঞ্জ বলিয়াটি জমিদার বাড়ির বেশ কাছেই এই জমিদার বাড়িটির অবস্থান।

আবার টাঙ্গাইল জেলার নাগপুর উপজেলার অবস্থিত নাগপুর চৌধুরী জমিদার বাড়িও বেশ সুন্দর। আরো দেখতে পারেন মোকনা এবং করটিয়া জমিদার বাড়ি। এছাড়া মসজিদ ও মাজারের মধ্যে দেখার মত রয়েছে আতিয়া মসজিদ, ধনবাড়ি মসজিদ, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানি মাজার, শাহ আদম কাশ্মীরির মাজার। আর রিসোর্টের মধ্যে রয়েছে যমুনা রিসোর্ট ও বন্ধবন্ধু সেতু, এলেঙ্গা রিসোর্ট, মধুপুর জাতীয় উদ্যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!