শুভলং ঝর্ণা

শুভলং-ঝর্না

রাঙামাটির শুভলং ঝর্ণা

বাংলাদেশের উঁচু পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোর মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার প্রাচীনতম উপজেলা বরকলে অবস্থিত শুভলং ঝর্ণা অন্যতম। কর্ণফুলী নদীর অববাহিকায় ঝর্ণাটির অবস্থান। ভরা বর্ষায় প্রায় ১৪০ ফুট উচ্চতা থেকে এই ঝর্ণার পানি প্রবল বেগে নেমে এসে মিশে যায় কাপ্তাই হ্রদের বুকে। চারিদিকের পর্বতমালা এবং স্নিগ্ধ প্রকৃতি বিমোহিত  করে তোলে এখানে আসা পর্যটকদের। ঝর্ণার জলরাশির বিরতিহীন ছন্দময় শব্দ মনের মাঝে বয়ে আনে শান্তির পরশ। ঝর্ণাটির স্বচ্ছ জলধারা দেখে তা স্পর্শ করার লোভ সামলানো কঠিন। তাই অনেকেই গা ভিজিয়ে নেন ঝর্ণার পানিতে।

শুকনো মৌসুম অর্থাৎ শীতকালে ঝর্ণায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় অধিকাংশ পর্যটক বর্ষাকালেই এখানে এসে থাকেন। এ সময় ঝর্ণার পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকার বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি মুগ্ধতা ছড়ায় সবার মাঝে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটকদের জন্য স্থানটিতে কিছু স্থাপনা গড়ে তুলেছে। শুভলং ঝর্ণার নিকটবর্তী টিএন্ডটি পাহাড় এবং শুভলং পাহাড় স্থানটির আকর্ষণ পর্যটকদের নিকট আরও বৃদ্ধি করেছে। এসব পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে চারিদিকের মনোমুগ্ধকর এক দৃশ্য চোখে পড়ে।

শুভলং ঝর্ণা পর্যন্ত যাওয়ার পথটিও বেশ সুন্দর। উঁচু পর্বতমালার মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া কাপ্তাই হ্রদের জলপথ ধরে গন্তব্যের দিকে এগিয়ে চলে ট্রলার। তা থেকে দৃষ্টিগোচর হয় সুবিস্তীর্ণ আকাশে ভেসে বেড়ানো মেঘমালা। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম হ্রদের বুকে এই যাত্রা স্মৃতির পাতায় রয়ে যায় বহুকাল।

আজকের এই আর্টিকেলে থাকছে শুভলং ঝর্ণা ভ্রমণের আদ্যোপান্ত।

শুভলং ঝর্ণায় যাওয়ার উপায় 

ঢাকা থেকে রাঙামাটি

রাজধানী ঢাকার সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর এবং ফকিরাপুল থেকে প্রতিদিন গ্রীনলাইন, হানিফ, শ্যামলীসহ বিভিন্ন অপারেটরের বাস রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসি বাসের ভাড়া ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা এবং নন এসি বাসের ভাড়া ৯০০ টাকা। সকাল এবং রাতে সাধারণত বাসগুলো ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করে। রাত ১১টার বাসে রওয়ানা দিলে ভোরের মধ্যে রাঙ্গামাটি পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।

চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি

চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় হতে রাঙ্গামাটি রুটের বাস চলাচল করে। ডিরেক্ট সার্ভিসের ভাড়া ২০০ টাকার কাছাকাছি।

রাঙ্গামাটি শহর থেকে শুভলং ঝর্ণা

রাঙ্গামাটি থেকে শুভলং ঝর্ণা যাওয়ার পথ পাড়ি দিতে হবে ট্রলারে। রাঙ্গামাটি সদরের রিজার্ভবাজার সংলগ্ন ঘাট হতে ইঞ্জিনচালিত এসব ট্রলার সারা দিনের জন্য রিজার্ভ করা যায়। ট্রলারের আকারের উপর ভিত্তি করে ভাড়া নির্ধারিত হয়ে থাকে। মাঝারি আকারের একটি ট্রলার রিজার্ভ করতে গুণতে হবে প্রায় ২০০০ টাকা। রিজার্ভ করার সময় অবশ্যই দামাদামি করে নিতে হবে। তবে সদস্য সংখ্যা সীমিত হলে জনপ্রতি প্যাকেজে ঘুরে আসা সম্ভব। রাঙ্গামাটি থেকে শুভলং ঝর্ণা যেতে সময় লাগে ২ ঘণ্টারকাছাকাছি। যাওয়ার পথে রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্পট। এসব স্থান ঘুরে দেখলে আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবন সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। হাতে সময় থাকলে ট্রলারচালকের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে স্পটগুলো ঘুরে দেখার পরামর্শ থাকলো।

প্রবেশ ফি

শুভলং ঝর্ণা দেখতে প্রবেশের সময় ২০ টাকা ফি দিয়ে টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।

খাবেন কোথায়

সকালের নাস্তা রাঙ্গামাটি শহর থেকেই সেরে নিতে হবে। দুপুরের খাবার গ্রহণের জন্য কাপ্তাই লেকের পাড়ে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট রয়েছে। তবে এসব রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য আগে থেকেই অর্ডার দিয়ে রাখতে হবে। ব্যাম্বোচিকেন,  কলা পাতায় মোড়ানো ভাপে রান্না করা মাছসহ পাহাড়ি মুখরোচক বিভিন্ন খাবার পাওয়া যায় রেস্টুরেন্টগুলোতে। এছাড়া শহর থেকে সাথে কিছু শুকনো খাবার এবং পানি নিয়ে যাওয়া ভালো।

থাকবেন কোথায়

শুভলং ঝর্ণার আশেপাশে থাকার জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। দিনের মধ্যেই ঘুরে দেখা সম্ভব হওয়ায় থাকার প্রয়োজনও পড়ে না। আবাসিক হোটেল পেতে চাইলে ফিরে আসতে হবে রাঙ্গামাটি শহরে। হোটেলের পাশাপাশি থাকার জন্য এখানে কিছু গেষ্টহাউজ এবং কমখরচের বোডিং রয়েছে। বুকিং এর সুবিধার্থে নিম্নে কয়েকটি আবাসিক হোটেলের তথ্য প্রদান করা হলো –

হোটেল সুফিয়া

অবস্থানঃ ফিসারীঘাট, কাঁঠালতলী

ভাড়াঃ ৭০০-১৩০০ টাকা

ফোনঃ ০১৫৫৩-৪০৯১৪৯

হোটেল গ্রীন ক্যাসেল

অবস্থানঃ রিজার্ভবাজার

ভাড়াঃ ১০০০-২০০০ টাকা

ফোনঃ ০১৮১৫-৪৫৯১৪৬

পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্স

অবস্থানঃ ঝুলন্তব্রিজ রোড

ভাড়াঃ ১০০০-১৮০০ টাকা

ফোনঃ ০৩৫১-৬৩১২৬

আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

ছবি তুলেছেনঃ রাহুল 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!