রাঙ্গামাটির সকল দর্শনীয় স্থান
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান সমৃদ্ধ ও হ্রদ পাহাড়ের অপরুপ সৌন্দর্যে ঘেরা লাল মাটির দেশ এই রাঙ্গামাটি জেলা। নদ-নদী,ঝর্ণাধারা ও উঁচু-নিচু পাহাড়ের বুকে আঁকাবাঁকা পথ মিশ্রিত এ শহুর। এটি বাংলাদেশের বৃহৎ জেলা। এ জেলার উত্তরে ভারত ত্রিপুরা মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম, পশ্চিমে চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি এবং (দুইশত ছাপ্পান্ন) বর্গমাইল,আয়তনের দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদটি অবস্থিত এ জেলায়ই। অতীত কাল হতে এ জেলা প্রাকৃতিক নিয়মে সজ্জিত থাকায় ও দর্শনীয় স্থানের দিক দিয়ে জনপ্রিয় হওয়ায় বর্তমানেও দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের নানান শ্রেণীর লোকজনের সারাবছরই প্রচুর সমাগম ঘটে এ জেলায়। বৃষ্টিস্নাত ও কুয়াশাচ্ছন্ন ঋতুতে সবচেয়ে বেশি পর্যটকদের পদচারণ ঘটে এই রাঙ্গামাটিতে। এখানে ভ্রমণে এলে অবশ্যই আপনার হাতে ৩/৪ দিনের সময় নিয়ে আসা প্রয়োজন, নতুবা কিছু দর্শনীয় স্থানগুলো দেখার স্বাদ অপূর্ণতা থেকে যাবে। নিন্মোক্ত সকল দর্শনীয় স্থানগুলো সকল পর্যায়ের পর্যটকদের জনপ্রিয় তালিকার শীর্ষে রয়েছে।
১.শুভলং ঝর্ণা
রাঙ্গামাটি জেলার বরকল নামক উপজেলায় রয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য মিশ্রিত জলধারায় প্রবাহিত হওয়া এক বিষ্ময়কর ঝর্ণা যার নামই হলো শুভলং ঝর্ণা। ভারী বর্ষায় এর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ফলে সে সময়ই সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয় দর্শনাথীরা। বৃষ্টিস্নাত ঋতু বর্ষায় এই শুভলং ঝর্ণার জলধারা (প্রায়) তিনশত ফুট উঁচু থেকে নিচে উপচে পড়ে এবং চারিপাশের সেই শব্দের ধ্বনি মন কেড়ে নেয় সকল পর্যটকদের। রাঙ্গামাটি সদর থেকে এ ঝর্ণার ব্যবধান মাত্র ২৫ কিঃমি। সদর থেকে শুভলং ঝর্ণা পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘণ্টার মতো। শুভলং ঝর্ণার মূল গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই আপনাকে নৌ-পরিবহন মাধ্যমে যেতে হবে। রাঙ্গামাটি থেকে বিভিন্ন ট্রলার রিজার্ভ করে নেওয়ার সুবিধা রয়েছে, এগুলোর প্রত্যেকটির ভাড়া আকার- আকৃতি ভেদে ১২০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিস্তারিত
২.ঝুলন্ত ব্রীজ
কাপ্তাই লেকের ওপরে অবস্থিত এই জনপ্রিয় ব্রীজ । তিনশত পয়ত্রিশ ফুট লম্বা এই ব্রীজটি এবং ব্রীজটিতে দাড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন কাপ্তাই লেকের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও অথৈজল বলা যায় যার জন্য রয়েছে রাঙ্গামাটির একটি বিশেষ খ্যাতি। ব্রীজটিতে প্রবেশ করতে হলে ব্রীজটির কর্তৃপক্ষ- কে জনপ্রতি বিশ টাকা করে প্রদান করতে হয়।
মূল শহর হতে মাত্র পাচ কিলো.মিটার দূরে এই ঝুলন্ত ব্রীজটির অবস্থান। মূল শহর থেকে বাস,প্রাইভেট কার, ব্যাটারীতে চলিত রিকশার মাধ্যমে আপনি সহজেই এখানে পৌঁছাতে পারবেন। রাঙ্গামাটির মূল শহর হতে ঝুলন্ত ব্রীজ পৌঁছাতে ১৫০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
৩.আরন্যক হলিডে কটেজ
যে কোনো সময় যে কোনো দিনে পরিবার নিয়ে ঘুড়ে আসার জন্য রিসোর্টটি এক কথায় অসাধারণ। রিসোর্ট-টির ভেতর এ ঢুকতে হলে তার বিনিময়ে আপনাকে মাএ পঞ্চাশ টাকা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশ আর্মির নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে থাকায় আপনাকে কখনোই নিরাপত্তার সমস্যা নিয়ে চিন্তায় পড়তে হবে না। অবিশ্বাস্য সুন্দর এই কাপ্তাই হ্রদে ঘেরা এই রিসোর্ট-টি দেখে আপনার চোখ শীতল হয়ে উঠবে, মুগ্ধ হবেন আপনি। রাঙ্গামাটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে সেনানিবাস এলাকায় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠেছে এই রিসোর্ট। বিশেষ করে পূর্নিমার রাত্রি বেলায় এ রিসোর্ট এ অবস্থান নিলে আপনার মনে তৈরি হবে এক অসাধারণ মনোমুগ্ধকর অনুভূতি। সেই সাথে উপভোগ করতে পারবেন চমৎকার বিশুদ্ধ জলের সুইমিংপুল, আকর্ষনীয় বোর্ট রাইড ও চারিপাশের দূর্দান্ত নির্মান শৈলী যা আপনার দৃষ্টি কেড়ে নিবে অনায়াসেই।
৪.চাকমা রাজবাড়ী
রাঙ্গামাটি জেলা শহরের রাজবন বিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের কোলে ছোট্ট একটি দ্বীপের বুকেই রয়েছে বিভিন্ন কাল-কালান্তর এর স্বাক্ষী স্বরুপ এই ঐতিহাসিক চাকমা রাজার বাড়ি। তবে বর্তমানে চাকমা চিফ রাজা, ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় ও তার সহ-ধর্মীনী য়্যান য়্যান এবং তাহার মা আরতি রায় এই বাড়িটিতে বসবাস করছেন। বাড়িটি সবদিক দিয়েই যথেষ্ট পুরোনো হলেও দেখতে কিন্তু বেশ দৃষ্টিনন্দন, যা দেখে সকলে আশ্চর্য হবে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রকম উপজাতিদের পোশাকও পাওয়া যায় এই বাড়িতেই। বাড়িটির খুব নিকটেই রয়েছে চাকমা সার্কেল এর প্রশাসনিক সদর দপ্তর, চাইলে আপনারা পায়ে হেঁটে হেঁটে সে জায়গাটিও পরিদর্শন করে আসতে পারেন। স্থানীয় নৌকা চালকদের সহায়তায় নৌ- পরিবহনে করে সহজেই পৌঁছানো যাবে এই রাজ বাড়ির নিকটে।
৫.হিল তাজ হোটেল এন্ড রিসোর্ট
রাঙ্গামাটির প্রাণকেন্দ্রে কাপ্তাই লেকের একটি দ্বীপের পাড়েই তৈরী করা হয় দৃষ্টিনন্দন এ হোটেল বা রিসোর্ট। প্রত্যেক ভ্রমণপীপাসু ব্যক্তির রাঙ্গামাটি ভ্রমন তালিকায় এই হিল তাজ রিসোর্টের নামটি থাকেই। রিসোর্টের পাশেই রয়েছে নিজস্ব মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া রেস্টুরেন্ট। যাতে রয়েছে সকল প্রকারের চাহিদা অনুযায়ী গুনগত মান সম্পন্ন খাবার। এছাড়াও এই রিসোর্টে প্রথমত অবস্থান নিয়েই কাছাকাছি থাকা কিছু দর্শনীয় স্থানে ইচ্ছেমত ঘুড়ে বেড়ানোর সুযোগটিও পেয়ে যাবেন।
রাঙ্গামাটি জেলার রিজার্ভ বাজারের পূর্বে রাঙ্গামাটি জেলার হতে ক্যান্টনমেন্ট সি. ও. অফিসের ঘাট পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার পর, হিল তাজ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের নৌকাযুগে লেক পারি দিয়েই পৌছে যেতে পারেন, আপনার সেই কাঙ্ক্ষিত হিল তাজ হোটেল এবং রিসোর্ট এ।
রুম ভাড়া সিঙ্গেল ২০০০- ৩০০০ টাকা (নন এসি)।
রুম ভাড়া কাপল ২৬০০- ৩৫০০ টাকা ( নন এসি)
রুম ভাড়া ভিআইপি ৮০০০ টাকা।
সময়-
চেক ইনঃ দুপুর ১২:০০ টা
চেক আউটঃ সকাল ১০:০০ টা
৬.রাজবন বিহার
রাঙামাটি জেলার মূল শহরের ভেতরেই অবস্থিত এই নজরকাঁড়া রাজবন বিহার। এই বিহারটি শুধুমাত্র বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের জন্যই নির্দিষ্ট কোনো একক স্থান নয়, সকল ধর্ম বর্নের জাতি গোষ্ঠী এই বিহারে প্রবেশের অধিকার রাখে। বিহারটিতে রয়েছে একটি স্বর্গীয় সিঁড়ি, রাজবন বিহারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অর্থাৎ অনুমতি ও আলোচনার সাপেক্ষে তাতেও উঠা যাবে। এর ভেতর রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের তৈরী করা বিভিন্ন ধরনের মূর্তি। অনেকেই এখানে যাওয়ার পূর্বেই খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় মশগুল থাকেন, কিন্তু রাজবন বিহারটি মূল প্রাণকেন্দ্রেই অবস্থিত থাকায় খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোনো রকমের চিন্তায় পড়তে হবে না। রাঙ্গামাটি জিমনেসিয়ামের ঠিক পার্শ্ববর্তী সড়ক দিয়ে রিক্সাসহ যেকোনো পরিবহনে করে নিকটস্থ রাজবন বিহারে পৌছানো সহজেই সম্ভব।
৭.রাইখ্যং লেক
রাইখ্যং লেক, রাঙ্গামাটি জেলার শেষপ্রান্তে অবস্থিত একটি লেক। যা বাংলাদেশর সর্ববৃহৎ প্রাকৃতিক বিষ্ময়কর একটি লেক, ধারণা করা হয় যার উচ্চতা (প্রায়) এক হাজার ফিটের চেয়েও বেশি। তবে গুগল অনুসারে এই লেকের উচ্চতা পরিমাপ (প্রায়) এক হাজার একশত ফিটের মতো। লেকটির দু প্রান্তে পাহাড় বিস্তৃত দুটি গ্রাম রয়েছে। সেখানকার স্থানীয়দের অনেকেই লেকটিকে তাদের নিজস্ব নামকরণ অনুসারে রাইচং বলে চিহ্নিত করে থাকে। বৃষ্টিস্নাত ঋতু বর্ষায় লেকে প্রচুর জল থাকায় সে সময়টিতে সেখানে বেড়াতে গেলে দেখা মিলবে সেখানকার স্থানীয় কিছু জেলেদের সাথে। কিছুটা দূরবর্তী স্থান হতে এই লেক এ দৃষ্টি দিলে মনে হবে যেনো এ এক রুচিশীল সৃষ্টিকর্তার অপরুপ সেই রং- তুলিতে অঙ্কন করা এক অবিশ্বাস্য নিরুপম দৃশ্য। বিশেষ লেকটি রাঙ্গামাটি জেলার শেষপ্রান্তেই অবস্থিত হওয়ায়, এই লেকে রাঙ্গামাটি সড়ক অনুসরণ করে পৌছাতে হলে আপনাকে অবশ্যই নৌ-পথ দিয়ে যাতায়াত করতে হবে। তবে বিকল্প সড়ক বা পথ হিসেবে বান্দরবান দিয়ে যাতায়াত করা সবচেয়ে সহজতর হবে ।
৮.রাজস্থলী ঝুলন্ত ব্রীজ
পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম তৈরী হওয়া ঝুলন্ত সেতু/ব্রীজ এই রাজস্থলী ঝুলন্ত ব্রীজ। চারিদিকের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের সমন্বয়ে তৈরী হওয়া এই ব্রীজটি সত্যিই অসাধারণ একটি আবিষ্কার।
এই ঝুলন্ত সেতুটির প্রধান আকর্ষনই হলো এটির মধ্যে উঠার পরপরই আরোহন করলেই ঝুলন খাওয়াটা খুবই নিখুঁতভাবে বোঝা যায়,যা আপনার মনকে করে প্রফুল্ল। রাজস্থলী ঝুলন্ত সেতুটি রাঙ্গামাটি পর্যটন সেতু ও নিকটস্থ বান্দরবান এর মেঘলা সেতুর সাথে অতুলনীয় । তাছাড়াও নদী থেকেও এই ব্রীজ এর উচ্চতা অনেক গুন বেশি,যা পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল প্রকারের সেতুর চেয়ে পরিমাপের দিক দিয়ে বড়সড়। তাইতো রাঙ্গামাটির সকল ভ্রমণপীপাসুগন তাদের ভ্রমণ তালিকায় এই দর্শনীয় স্থানটির নাম বিশেষভাবে লিপিবদ্ধ করে রাখেন। বাস স্টেশন এ নেমে যাওয়ার পর সেখানে সারিবদ্ধ-ভাবে থাকা যে কোনো পরিবহন যুগে যেতে পারবেন এই কাঙ্ক্ষিত ব্রীজটির নিকটে।
৯.চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার জনপ্রিয় সব দর্শনীয় স্থানের মধ্যে একটি হচ্ছে এই চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার তিন নাম্বার চিৎমরম ইউপির কর্ণফুলী নদীর তীরে এই ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারটি অবস্থিত। যেটি বিভিন্ন কালের সাক্ষী। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলাতে যতগুলো বৌদ্ধ বিহার রয়েছে তাদের মধ্যে এই বৌদ্ধ বিহারটি অন্যতম। এই বিহারটি শত বছরের পুরনো একটি বিহার বলে বিবেচিত হয়েছে। চন্দ্র চৌধুরী ১৯০৫ সালে প্রথম এই বিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৭ সালে একজন বর্মী সিটিজেন তার নিজ অর্থ ব্যয় করে কাঠসহ বিভিন্ন নির্মানাধী সরঞ্জাম এনে বৌদ্ধবিহারটির শৈল্পিক মনন এর কাজ পরিপূর্ণ ভাবে সম্পাদন করেন । এছাড়াও এই বিহারটিতে পচিশ টি বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে যাহা শ্বেত পাথর দ্বারা তৈরী। পূর্ণিমা, বাংলা বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠান এবং নতুন বছরের আগমন উৎসবকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব পালিত হয়। কাপ্তাই চিৎমরম কিয়াং ঘাটে নেমে নৌপরিবহন- যুগে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে ১৫ কি.মি. এগুলেই পৌছে যাবেন এই আকর্ষনীয় বিহারটিতে।
১০.পলওয়েল ন্যাচার পার্ক
পলওয়েল পার্ক এন্ড কটেজটি রাঙ্গামাটি ডিসি বাংলো রোডের পাশে কাপ্তাই লেকের ঠিক পাড় ছুঁয়ে তৈরি করা হযেছে যা সৃজনশীলতার হস্তক্ষেপে বর্তমানে হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটির অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র। আশ্চর্যজনক নির্মাণশৈলী ও নান্দ্যনিক বসার স্থান পলওয়েল পার্কটিকে দিয়েছে জনপ্রিয়তার ভিন্ন এক মাত্রা। মুখোশ আকৃতি অনুসরণ করে তৈরী করা হয়েছে পার্কটিতে ঢুকার মূল ফটক এবং ফটকের পাশেই আরেকটি মুখোশ আকৃতির টিকেট সংগ্রহের কাউন্টার। এখনে টিকেট এর মূল্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য তা প্রযোজ্য নয় । তবে ভেতরে শিশুদের জন্য রয়েছে চমৎকার কিডস জোন। আনন্দ মাতাতে রয়েছে বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা। এখানে টিকেটের মূল্য রাইড ভেদে ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা হতে পারে। তাই প্রতিনিয়ত অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখর হয়ে থাকে এই পলওয়েল পার্কটি। পার্কটি রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
১১.হ্যাপি আইল্যান্ড
বর্তমান সকল পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন এই দৃষ্টিনন্দন হ্যাপি আইল্যান্ড। এটি বিশাল কাপ্তাই লেকের মধ্যস্থলে অবস্থিত। উদ্ভোধন হওয়ার পর পরই প্রতিদিনিই প্রতি মৌসুমেই বিভিন্ন পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত হয়ে থাকে এটি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই হ্যাপি আইল্যান্ড। চারিদিকে লেকের নীল রং এর স্বচ্ছ জল ও তারই মধ্যবর্তী স্থানে দ্বীপ জুড়ে পয়তাল্লিশ শতক জায়গায় তৈরী করা হয়েছে এটিকে। জানা গেছে, এটি নির্মানে অর্থ ব্যয় করা হয়েছে (প্রায়) এক কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা।
এর মধ্যে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে খরচ করতে হবে জনপ্রতি পঞ্চাশ টাকা( মাএ)। অতঃপর এতে ঢুকার পর পরই প্রথমেই আপনার দৃষ্টি কাড়বে সেনাবাহিনী করিডোরের মধ্যে সবুজ ঘাস ও লতা পাতা দিয়ে মোড়ানো এলাকাটি। তবে এটি তৈরি হয়েছে একটি বড় মাছের আকৃতিতে। এর ঠিক পাশেই রয়েছে কফিশপ, বাগান, ভাস্কর্য, রিসোর্ট, স্পিড বোর্ট, প্যাডেল বোর্ট ও ফ্যামিলি বোর্ট।
১২.বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ সমাধিস্থল
রাঙ্গামাটি জেলার মূল সদর থেকে নৌ- পথে মাএ দেড় ঘন্টা সময়ের দূরত্বে বুড়িঘাটে অবস্থিত এই বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থল। যিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাত জন বীরশ্রেষ্ঠের একজন। চারিদিকে যেমন কাপ্তাই লেকের ঢেউ এ দোলানো নীল জলরাশি, আর ঠিক তারই মধ্যস্থলে চির-নিদ্রায় শায়িত রয়েছেন এই শ্রদ্ধেয় অসামান্য বীরশ্রেষ্ঠ। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্বা, দেশপ্রেমিক ও অতীতের মুক্তির ইতিহাস ও তার প্রেক্ষাপট নিয়ে যারা সচেতন নাগরিক তাদের কাছে এ স্থানটি হলো চেতনা ও অনুপ্রেরণার একটি অংশ বিশেষ। রাঙ্গামাটির মূল শহরে অবস্থান নিয়েও পর্যটকগন খুব অল্প সময়েই এই সমাধি স্থলে যাতে পারবেন,তবে খাবার সাথে নিয়ে নিলে সবচেয়ে ভালো হবে। নৌ-পথে লঞ্চে করে নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র দেড় ঘন্টা।
১৩.ধুপপানি ঝর্ণা
বাংলার ঐতিহাসিক জেলা রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার ,ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি এলাকায় অবস্থিত এই ধূপপানি ঝর্ণা । ধুপ অর্থ সাদা আর ঝর্ণা হওয়ায়, তাই এর সাথে পানি যুক্ত করে একে সাদা পানির ঝর্ণাও বলা হয়। স্থানীয় এলাকাবাসী ও স্থানীয় প্রতিনিধিগন একে দূপপানি ঝর্ণা নামেও ডেকে থাকে।২০০০ সালের দিকে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গভীর জঙ্গলে ঠিক এই দুপপানি ঝর্ণার নিচেই ধ্যান শুরু করেন, অতঃপর স্থানীয় লোকজনর ভেতর জানাজানি হওয়ায় এই ধ্যানমগ্ম বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে দিনের নির্দিষ্ট কোনো সময়ে সেবাদান করতে গেলেই পরবর্তীতে এই ঝরনাটি সকলের নিকট পরিচিতি লাভ করে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী সপ্তাহের ছয় দিন ধ্যানে মগ্ন থাকতেন আর শুধুমাএ রবিবারেই খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নেমে আসতেন, এছাড়া বাকি দিনগুলোতে তিনি কখনোও মানুষের ভীড় পছন্দ করতেন না। তাই সেদিকে সম্মান রেখেই , শুধুমাএ রবিবারেই ঝর্ণাটির নিকট পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় এবং অতিরিক্ত শব্দ না করার শর্ত জুড়ে দেয়া হয় । সমতল ভূমি হতে এই ঝর্ণার উচ্চতা (প্রায়)একশত পঞ্চাশ মিটার। প্রায় ২ কিলো.মিটার দূর থেকে শোনা যায় ঝর্ণাটির শব্দ।
১৪.টুকটুক ইকো ভিলেজ
কাপ্তাই লেকের অথৈ জল এর ঠিক মাঝেই উচু পাহাড়ের চূড়ায় গড়ে তোলা হয়েছে এই জনপ্রিয় টুকটুক ইকো ভিলেজ। (প্রায়) পঞ্চাশ একর পাহাড়ি জমির উপর নির্মানাধীন আকর্ষনীয় দৃষ্টিনন্দন ও সৃজনশীলতার আদলে তৈরী হয়েছে এই ইকো ভিলেজ টি। ইকো ভিলেজ টিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা, পেতে পারেন আপনার চাহিদা মতো নিরাপত্তার চাদরে আবৃত বিভিন্ন ধরনের ব্যালকনি যুক্ত কাঠের কটেজ। কেউ যদি কটেজগুলোতে রাতে অবস্থান নেয়, তাহলে জানালার ফাঁকে দেখা মিলবে পূর্ণিমার চাঁদের খেলা ও কানে ভেসে আসা ঝিঁঝি পোকার শব্দ। অন্যদিকে ফ্যামিলি, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু -বান্ধবদের নিয়ে কথোপকথন বা খোশগল্প করার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট স্থানে পনেরোটি গোলঘর। এছাড়াও শিশুদের জন্য রয়েছে মাঠ ও কাঠের ব্রীজ এবং কাঠ ও বাঁশ জাতীয় দ্রব্যের সমন্বয়ে তৈরী নিজস্ব রেস্তোরাঁ যেখানে রয়েছে দেশীয় ও পাহাড়ি আদিবাসী নৃ-গোষ্ঠীর জনপ্রিয় সব মজাদার খাদ্য, যা আপনার জিবে এনে দিবে নতুন স্বাদ, এনে দিবে নতুন এক তৃপ্তি। যারা সারাদিন এর নিয়তে নৌ-যান যুগে যাত্রার পরিকল্পনা করে থাকেন তারা দুপুরের আহার এখানেই করে নেয়। রাঙ্গামাটি শহুর এর রিজার্ভ বাজার, শহীদ মিনার এলাকা থেকে এ স্থান পর্যন্ত জনপ্রতি ২০-৩০ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে।
১৫.রাইন্যা টু-গুল ইকো পার্ক
একদিকে সামাজিক ব্যবসা আর অন্যদিকে পর্যটকদের বিনোদনের কথা মাথায় রেখেই নিজেদের ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত এবং নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি বাণিজ্যিক উদ্যোগ। এর ভেতর বাগান সহ প্রতিটি ভিলাই পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন ও হাই কমোড যুক্ত এটাচড্ বাথরুম। তাই এদিক দিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে সার্বক্ষণিক জোরদার নিরাপত্তা ও বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে দেশীয় ও নানান প্রকারের আদিবাসী খাবারের সু-ব্যবস্থা, আরো রয়েছে স্টুডেন্ট, কাপল,সিঙ্গেলসহ সকল পর্যটকদের জন্য নানা সুযোগ -সুবিধা। টু-গুল ইকো পার্কটি কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও কাপ্তাই ন্যাশনাল পার্কের পাশেই নিরিবিলি এলাকায় অবস্থিত হওয়ায়, যে কোন সময়, যেকোন পরিবহনে করে পৌঁছাতে পরবেন এই পার্কটিতে।
১৬.বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্স
পাহাড় ও নদীর সমন্বয়ে অবস্থিত এই অসম্ভব সুন্দর পিকনিক স্পট এবং হানিমুন কটেজ, যাতে প্রকাশ পেয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া। কাছ থেকে মনে হবে এ যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। পুরো কমপ্লেক্স জুড়েই রয়েছে সার্বক্ষনিক কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং নিজস্ব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইড তাই পরিবার ও আত্মীয় -স্বজন নিয়ে এখানে অবস্থান নিতে পারবেন নিশ্চিন্তে। রয়েছে এসি যুক্ত রাত্রিযাপনের রুম ও রয়েছে আহারের সু-ব্যবস্থা। এছাড়া রয়েছে নৌকা ভ্রমণ, ক্যাম্প ফায়ার ও পাহাড়ে বিচরণের ব্যবস্থাও। সকল পরিবহন যুগে আসা সম্ভব এই পর্যটন কমপ্লেক্সে। রাঙ্গামাটি সদর হতে কাপ্তাই পৌঁছাতে সময় নেয় মাত্র দেড় থেকে দুই ঘন্টা, আর কাপ্তাই যাওয়ার পথ অনুসরণ করেই পূর্বেই বড়ইছড়ি পাড় হয়ে ওয়াগ্গাছড়া বনশ্রী পর্যটন কমপ্লেক্সে নেমে যেতে হবে।
১৭.হাজাছড়া ঝর্ণা
রাঙ্গামাটির জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বাঘাইহাট ইউনিয়ন এ অবস্থিত এই হাজাছড়া ঝর্ণা। শহুরতলীর মূল রাস্তা ধরে ২৫-৩০ মিনিটের কাঁদা মাটি মিশ্রিত আঁকাবাঁকা সড়ক পথে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাবেন এই নৈসর্গিক ঝর্ণার খুবই নিকটে। অবশেষে আপনার দৃষ্টিই বলে দেবে এ যেনো সত্যিই অসাধারণ সৃষ্টি। চারপাশের অপরুপ সৌন্দর্য দেখে স্তব্ধ হবেন আপনি । ঝর্নার পাশে থাকা স্থানীয় পাহাড়িদের দেয়া নাম হলো “চিত জুরানি থাংঝাং ঝর্ণা” জানে গেছে যার অর্থ হলো “মন প্রশান্তি ঝর্ণা”। এটি শুকনাছড়া ঝর্ণা অথবা ১০ নং ঝর্ণা নামেও পরিচিত। হাজাছড়া নামক জায়গা থেকে এটির উৎপত্তি হওয়ায় বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ একে হাজাছড়া নামেই ডেকে থাকে। ঝর্নাটিতে বর্ষার মৌসুমে জলপ্রপাত বাড়ে এবং শীতের মৌসুমে জল প্রবাহ কমে। যাই হোক অতঃপর এই ঝর্ণার হিম শীতল জল পর্যটকদের সকল ক্লান্তি ও হতাশা ছাপ মুছে দিয়ে আকৃষ্ট করে তোলে আর ঠিক তখন যেন মনে হয়ে হবে পাহাড় এর মন ভেঙে যাওয়ার পর, কান্নাগুলো নেমে আসছে ঝর্ণায়।
ছবিঃ শরিফ স্বপন