শ্রীমঙ্গল

একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ
শেয়ার করুন সবার সাথে

একদিনে শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ পরিকল্পনা

দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি দূরীকরণ কিংবা নিছক আনন্দলাভ, কারণ যেটিই হোক না কেন একজন ভ্রমণপিয়াসুর কাছে তা অর্জনের সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম হলো ঘুরে বেড়ানো। তবে চাইলেই কিন্তু নানা ব্যস্ততার মাঝে লম্বা সময় হাতে নিয়ে কোনো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়া সম্ভব হয় না। তাই বলে কি আর ভ্রমণের আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখা যায়? একদমই না। এমন বেশ কিছু স্থান রয়েছে যেখান থেকে মাত্র ১ দিনের মধ্যে ঘুরে আসতে পারেন। তেমনই একটি স্থান হলো সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত শ্রীমঙ্গল ( Sreemangal ) উপজেলা। চায়ের রাজধানী খ্যাত এই স্থানটির প্রায় ৪৩% অঞ্চল জড়েুই চা বাগান। এখানে উৎপাদিত চা উন্নত মানের কারণে বেশ সমাদৃত। চা ছাড়াও এখানে পান, আনারস, লেবু এবং রাবারের চাষ হয়ে থাকে। পাহাড়ি চা বাগানের পাশাপাশি হাওর, ঝর্ণা, বিল এবং বনাঞ্চলের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বহু মানষু এখানে ছুটে আসেন। আজকের এই আর্টিকেলে আপনাদের জন্য থাকছে শ্রীমঙ্গলে একদিনের ভ্রমণে যাবার পরিকল্পনা, যাওয়ার উপায়, খাবার স্থান, দর্শনীয় স্থানসমহূ ঘুরে দেখার নির্দেশিকা এবং ফেরার উপায় সংক্রান্ত তথ্যাদি।

ভ্রমণ পরিকল্পনা 

১ দিনের মাঝে শ্রীমঙ্গল ঘুরে আসার জন্য ঢাকা থেকে রাতে রওয়ানা দেওয়া সুবিধাজনক। সেক্ষেত্রে ভোরের মধ্যেই শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। এরপর সারাদিন পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রা করতে হবে।

যাবেন কীভাবে

ঢাকা থেকে সড়ক এবং রেলপথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া সম্ভব। উভয় পথেই সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। এ রুটে হানিফ পরিবহন, এনা পরিবহন, শ্যামলী পরিবহনসহ বেশ কিছু অপারেটরের বাস চলাচল করে। বাসগুলো সায়েদাবাদ এবং ফকিরাপুর থেকে ছেড়ে যায়। নন এসি এবং এসি বাসের বর্তমান ভাড়া যথাক্রমে ৪৭০ এবং ৬০০ টাকা।



অন্যদিকে পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস এবং উপবন এক্সপ্রেস নামক ট্রেনগুলো সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে নামতে হবে। শ্রেনী ভেদে ভাড়া ২৬৫ টাকা থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। বুধবার ব্যতীত সপ্তাহের ৬ দিন রাত ৮টা ৩০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকা থেকে রাতের বেলা উপবন এক্সপ্রেস কিংবা বাসে করে রওয়ানা দেওয়াই অধিক উপযুক্ত। তবে রাত ৮টা ৩০ মিনিটের ট্রেনে যাত্রা করলে আপনাকে গভীর রাতে শ্রীমঙ্গল নামতে হবে। তাই সম্ভব হলে রাত ১১টার বাসে ভ্রমণ করার পরামর্শ রইলো। শ্রীমঙ্গলে পৌঁছানোর পর সিএনজি, জিপ কিংবা বাসে করে কাঙ্ক্ষিত স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারবেন। ৪ জনের জন্য সিএনজি রিজার্ভ করতে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা এবং ১০ জনের জন্য জিপ রিজার্ভ করতে ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা গুনতে হবে।

খাবেন কোথায়  

শ্রীমঙ্গলের রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে পানসী রেস্টুরেন্ট এবং পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট বেশ জনপ্রিয়। হরেক রকম ভর্তা, সবজি, মাছ এবং মাংস পেয়ে যাবেন এসব রেস্তোরাঁয়। সকালের নাস্তা এবং দুপুরের খাবার সেখান থেকে সেরে নিতে পারবেন। বিভিন্ন প্রকার চায়ের পাশাপাশি সিলেটের বিখ্যাত ৭ রঙের চা পান করতে চাইলে চলে যেতে পারেন আদি নীলকন্ঠ টি কেবিনে। দর্শনীয় স্থানসমহূ শ্রীমঙ্গলের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে নুরজাহান টি গার্ডেন, মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাইক্কা বিল, লাল পাহাড়, হামহাম ঝর্ণা, সীতেশ বাবরু চিড়িয়াখানা, লাসুবন গিরিখাদ, চা জাদঘর , বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট অন্যতম। হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকলে সবগুলো স্থানই ঘুরে দেখতে পারেন। তবে আজকের ব্লগটি যেহেতু ডে ট্রিপ নিয়ে তাই এক দিনের মাঝে যেসব স্থান ঘুরে দেখা সম্ভব তা নিয়েই আমরা আলোচনা করবো। নিচে পর্যায়ক্রমে স্থানগুলোর পরিচয় এবং ভ্রমণের সম্পূর্ণ দিক-নির্দেশনা তুলে ধরা হলো –

নুরজাহান টি গার্ডেন

শ্রীমঙ্গলে সকালের নাস্তা শেষে প্রথমেই চলে যেতে পারেন নুরজাহান টি গার্ডেনে। নাম দিয়েই বঝুতে পারছেন পুরো স্থানটি জড়েু যেদিকেই তাকাবেন চা বাগান আপনার দৃষ্টিগোচর হবে। টিলার বুকে চা বাগান দেখতে অনেকটা সবজু গালিচার মত। ক্ষুদ্রাকৃতি এই পাহাড়গুলোর মাথায় তাকালে দেখতে পাবেন ভোরের সূর্য চারিদিকে তার কিরণ ছড়াচ্ছে। শীতকালে চা পাতার ওপর শিশির বিন্দু অন্য রকম এক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে।

মাধবপুর লেক

শ্রীমঙ্গলে এসে মাধবপুর লেক ঘুরে দেখেন নি এমন মানষু খুজেঁ পাওয়া দষ্কুর। নুরজাহান  টি গার্ডেন ঘোরা শেষে চলে আসতে পারেন মাধবপুর লেকে। লেকটির চারিদিক পাহাড়ে ঘেরা। লেকটির দিকে তাকালে প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে এতে ফুটে থাকা শাপলা ফুলের দিকে। লেকের স্বচ্ছ পানিতে অনেক সময় নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে। চাইলে আশেপাশের পাহাড়গুলোতেও উঠতে পারেন, সেখানেও দেখা পেয়ে যাবেন চা বাগানের। পাহাড়ের ওপর থেকে দৃশ্যমান চারিদিকের সৌন্দর্য সত্যিই দষ্টিৃ নন্দন।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান

মাধবপুর লেকের মতই দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় একটি স্থান হলো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। মলতূ এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এখানে ঢুকতে হলে প্রাপ্ত বয়স্কদের জনপ্রতি ৫০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিংবা ছাত্র-ছাত্রীদের জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে টিকেট ক্রয় করতে হবে। এই বনে নানা প্রজাতির গাছপালা এবং জীবজন্তুর দেখা মেলে। এখানে সবজু গাছের সারির মাঝ দিয়ে চলে গিয়েছে একটি রেললাইন।



চাইলে রেললাইনটির পাশ ঘেষেঁ কিছুটা সময় হাটতে পারেন, ভিন্ন রকম একটি অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। এখানে আসলে আরও দেখা পাবেন ঐতিহ্যবাহী খাসিয়াপুঞ্জির। তবে করোনার কারণে সেখানে প্রবেশাধিকার সীমিত। চাইলে এখানে আপনারা অভিজ্ঞ গাইডকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেকিং করতে পারবেন। ট্রেকিং এর জন্য আধ ঘন্টা, ১ ঘণ্টা এবং ৩ ঘন্টার পথ রয়েছে। তবে ডে ট্রিপের ক্ষেত্রে ৩ ঘন্টার ট্রেকিং এ না যাওয়াই ভালো। এখান থেকে আপনি দুপুরের খাবার গ্রহণের জন্য ফিরে যেতে পারেন শ্রীমঙ্গল শহরে।

লাল পাহাড়/বাইক্কা বিল

দুপুরের খাবার শেষে আপনি লাল পাহাড় কিংবা বাইক্কা বিলের মধ্যে যে কোনো একটি ঘুরে আসতে পারেন। আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার্থে নিচে উভয় স্থানের বর্ণনা তুলে ধরা হলো –

লাল পাহাড়ঃ

লাল পাহাড় সমতল থেকে প্রায় ২০০ ফুট উঁচু। পাহাড়টির মাটি লালচে বর্ণের হওয়ায় এটির নাম লাল পাহাড়। পাহাড়ের চূড়ায় দটিু মন্দির রয়েছে। পাহাড়ের ওপর থেকে চারপাশের সুন্দর একটি দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। পাহাড় আপনার পছন্দের হলে ঘুরে আসতে পারেন লাল পাহাড় থেকে।

বাইক্কা বিলঃ

আপনার ভ্রমণের সময়টা যদি শীতকাল হয়ে থাকে এবং আপনি যদি পাখিপ্রেমী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিন্তে বেছেঁ নিতে পারেন বাইক্কা বিল কে। দেশি-বিদেশি বহু জাতের পাখির দেখা মেলে এই বিলে। পড়ন্ত বিকেলে পাখির ঝাঁকের উড়ে বেড়াবার দৃশ্য খুবই মনোমগ্ধুকর। এছাড়া অনেক সময় পদ্ম ফুলেরও দেখা মেলে এই বিলে। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার।

বিকেল কাটিয়ে আপনাকে ফিরে আসতে হবে শ্রীমঙ্গল শহরে। শহরে ফিরে মণিপুরী শাল কিংবা শাড়ি কিনতে চলে যেতে পারেন রামনগর মণিপুরী পাড়ায়। এছাড়া চাইলে স্টেশন রোড থেকে চা পাতাও কিনে নিতে পারেন। তবে আপনি চাইলে নিজের মত করেও ভ্রমণটি সাজিয়ে নিতে পারেন। যেমন পশুপাখির প্রতি আপনার ভালোলাগা থাকলে উপরের কোনো একটি স্পটের পরিবর্তে সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাটি ঘুরে দেখতে পারেন। আবার ইতিহাসের প্রতি আপনার আকর্ষণ থাকলে চা জাদঘুরে একটু ঢু মেরে আসতে পারেন। ফিরবেন কীভাবে সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে এবার ঢাকা ফেরার পালা। সন্ধ্যার বাস কিংবা ট্রেনে করে আপনাকে ফিরতে হবে। তাহলে রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন। ট্রেনে ফিরতে হলে আপনাকে সন্ধ্যা ৬টার পারাবত এক্সপ্রেসে করে ফিরতে হবে। ট্রেনটি মঙ্গলবার ব্যতীত সপ্তাহের ৬ দিন চলাচল করে থাকে।


শেয়ার করুন সবার সাথে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!