ধরন্তি হাওর

ধরন্তি হাওর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ধরন্তি হাওর

আপনি যদি একজন হাওর বিলাসী হন, তাহলে ধরন্তি হাওর (Dhoronti Haor) হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণ গন্তব্য। লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই হাওরটি প্রতি বছর বর্ষা এলেই মেলে ধরে তার আপন সৌন্দর্য্য। তিতাস নদীর সাথে নিচু জায়গাগুলোতে বৃষ্টির পানি মিলিত হয়ে পরিনত হয় এক বিশাল হাওরে। আর তার বুক চিরে যদি চলে যায় একটি রাস্তা তাহলে তো কথা ই নেই।

মনে হবে যেন ইটনা-মিঠামইন-অস্টোগ্রাম সড়কের আদলেই তৈরি করা হয়েছে সড়কটি। হ্যাঁ, বলছিলাম ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধরন্তি  হাওরকে নিয়ে। জেলার মানুষজন এটিকে মিনি কক্সবাজার হিসেবেই চিনে। পড়ন্ত বিকেলে হাওরের মাঝে সূর্যাস্স্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখতে পাওয়ার কারনেই হয়ত এই নামটি তার যথার্থতা তুলে ধরতে পেরেছে।

ধরন্তি হাওরে আসার উপযুক্ত সময়

বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত হাওড়টি নানাভাবে এর প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা প্রদর্শন করে থাকে। গরমে হাওড়ের আশপাশে চাষের ধানগুলো সবুজের সমারহ দিয়ে সাজায় রাস্তার দুপাশ জুড়ে। আবার বর্ষায় দুই পাশের টই টম্বুর পানির বুক চিরে যেনো চলে যায় লম্বা সরাইল- নাসিরনগর সড়কটি।  শরৎে হাওড়ের পানির সাথে  উপরে মেঘের লুকোচুরি রঙ বদলানো বাংলার চিরচেনা গ্রামীণ রূপকে ফুটিয়ে তোলে। তবে যেহেতু হাওড় তাই বছরের আগষ্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের যে কোন সময় আসলে এর আসল সৌন্দর্য টা উপভোগ করা যাবে।

যাবেন কিভাবে

মতিঝিলের কমলাপুর রেলস্টেশন বাস স্ট্যান্ড এবং উত্তরার আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে সকাল ৭:৩০ থেকে রাত ৯:৩০ পর্যন্ত সারাদিনে ১৫ মিনিট পর পর ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বাসগুলো ছেড়ে যায়। তাছাড়া সায়েদাবাদ, শনির আখড়া থেকেও যেতে পারেন। এ সকল রুটে চলাচল করে এ রকম বাসগুলোর নাম হচ্ছে তিশা পরিবহণ, সোহাগ পরিবহন, কাজী পরিবহণ, লাবিবা পরিবহণ, বি.বাড়িয়া এক্সপ্রেস।

এছাড়া সিলেটগামী যে কোন লোকাল বাসে করে আসা যাবে। ঢাকা থেকে বিশ্বরোডে আসতে সময় লাগবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। বাসভাড়া জনপ্রতি ৩০০-৩৫০ টাকা করে পড়বে। ধরন্তি হাওরে যেতে হলে নামতে হবে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বিশ্বরোড নামক স্হানে। সেখান থেকে সিএনজি বা অটো রিজার্ভ করে যেতে হবে। ভাড়া পড়বে ২০০- ৩০০ টাকা। ধরন্তি হাওরে প্রকৃত দৃশ্য দেখতে হলে বিকাল ৪ টা থেকে ৫টা মধ্যে যেতে হবে। কুন্ডা নামক স্হানে এসে একটা ট্রলার ভাড়া করে ঘুরতে পারেন। ট্রলারের সাইজ অনুযায়ী ঘন্টা প্রতি ৪০০ – ৯০০ টাকায় ভাড়া করতে পারেন।

কেউ চাইলে ট্রেনে চড়েও ব্রাহ্মনবাড়িয়াতে আসতে পারেন।  ঢাকা থেকে মেইল ও আন্ত:নগর মিলে প্রায় দশটির বেশি ট্রেন প্রতিদিন ছেড়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে। শ্রেণিভেদে মেইল ও আন্ত:নগর ট্রেনে ঢাকা থেকে ভাড়া ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চালু রয়েছে। ফিরতে পথেও ট্রেনে আসতে পারেন ঢাকায়। বিকাল ৪ঃ৪২ মিনিট থেকে পেয়ে যাবেন ঢাকাগামী বিভিন্ন  আন্তঃনগর ট্রেনসহ লোকাল ট্রেন।

হাওরে দেখার কি কি আছে

ধরন্তি মূলত দুইটা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। পূর্বে আছে তিতাস নদী আর পশ্চিমে সুদীর্ঘ মেঘনা নদী। আশপাশে আছে আরো বেশ কিছু খাল-বিল। হাওড়ের মাঝের যে বিশাল সড়কটি নাসিরনগর ও সরাইল কে যুক্ত করেছে সেই সড়কে দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় মোটরসাইকেল আরোহী দর্শনার্থীদের আনাগোনা।

ছবি তোলা, প্রকৃতি উপভোগ করা, হাল্কা পাতলা চা স্ন্যাক্সের সাথে আড্ডা লেগেই থাকে যেনো সন্ধ্যের আগ পর্যন্ত এই সড়কে একটানা।  সন্ধ্যায় সড়কের দুই পাশে সারি সারি সাজানো সৌরবিদ্যুৎচালিত বাতিগুলো জ্বলে উঠে। নগরবাতির এই আলোকসজ্জায় নতুন করে আবারও জমে ওঠে ছবি তোলার হাট।

বর্ষায় যখন পানি বেশি থাকে দেখা মেলে নৌকা বা স্পিডবোটে পুরো হাওড়ের টই টম্বুর জলরাশি। শীতে হাওড়ের পানি শুকিয়ে ছোট ছোট চর জেগে ওঠে। বেশ কিছু অতিথি পাখির আনাগোনা শুরু হয়। হাওরের মাঝে মহীশবান নামক একটা ছোট বসতবাড়ি ভিটা আছে। চাইলে সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন।

হাতে সময় থাকলে হরিপুর জমিদার বাড়িটিও দেখে আসতে পারেন। তিতাস নদীর অথৈ জলের পাশেই ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়িটিকে দেখলেই অন্য রকম একটি অনুভূতি কাজ করবে আপনার মনে। জমিদার বাড়ির ছাদে দাড়িয়ে দেখতে পাবেন তিতাস নদীর ওপর দিয়ে ছুটে চলছে নানা রকমের নৌকা, ট্রলার। তবে নদী পথে এই বাড়িটি দেখতে চাইলে হাতে ৪-৫ ঘন্টা সময় নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে দুপুর ১২ টা থেকেই যাত্রা করতে হবে কুন্ডা থেকে।

জমিদার বাড়িতে ঘুরাঘুরি শেষে ফেরার পথেই পড়বে ধরন্তি হাওর। ধরন্তি হাওরে দেখার মতোন আরও রয়েছে হাওর বিলাস রিসোর্ট। খাবারের পাশাপাশি বসার ব্যাবস্থা। প্রায় প্রতিদিন ই ব্রাহ্মনবাড়িয়া, সরাইল, নাসিরনগর, ভৈরব, মাধবপুর থেকে নিয়মিত দর্শনার্থীর আনাগোনায় ব্যাস্ত থাকে এই রিসোর্ট টি। 

খাবেন কোথায়

দুবছর আগ থেকে এই হাওড়ের আশপাশ জুড়ে অনেকগুলো ছোট ছোট খাবারের দোকান চালু হয়েছে। যেখানে ফুচকা,আইস্ক্রীম জাতীয় হালকা পাতলা নাস্তার ব্যাবস্থা রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তবে ভালো মানের খাবারের কোন হোটেল নেই।  তাই এই পর্যটন স্পটটিতে ঘুরতে আসার আগে অবশ্যই হালকা খাবার সাথে করে নিয়ে আসবেন। কারন, এখানে আপনি চাইলে মনমত খাবার পাবেন না। 

থাকবেন কোথায়

ঢাকা থেকে বা পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এলে দিনে এসে দিনেই ঘুরাঘুরি করা যায়,থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে। দূরবর্তী এলাকার দর্শনার্থীর বা কারোর থাকার প্রয়োজন হলে দেখেশুনে ভালো কোন হোটেলে উঠতে হবে।  সেরকম কিছু আবাসন –

১)জেলা পরিষদ ডাকবাংলো

   (উপজেলা পরিষদ চত্বর,সরাইল)

    যোগাযোগ- ০১৭৮১৭৮৩৯২৪

২)নিউ গুলশান হোটেল

   (বিশ্বরোড মোড়,সরাইল)

   যোগাযোগ- ০১৭১২৯৭৬০৮৭

৩)মনোয়ারা হোটেল

  (উচলিয়াপাড়া, সরাইল)

আরো দেখতে পারেনঃ

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান  হলোঃ

  • হরিপুর জমিদার বাড়ি
  • আড়িফাইল মসজিদ
  • আবি রিভার পার্ক
  • মেদিনী হাওড় অঞ্চল
  • কেল্লা শাহ মাজার
  • জয়কুমার জমিদার বাড়ি
  • শ্রীঘর মঠ
  • বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের কবর
  • তিতাস নদীর ব্রীজ
  • বর্ডার হাট

ছবি ও লেখকঃ Monzur Khan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!